EWS controversy suvendu mamata modi

ব্যুরো নিউজ ১১ জুলাই ২০২৫ : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল সাধারণ শ্রেণির (EWS – Economically Weaker Section) জন্য ১০% সংরক্ষণের ব্যবস্থা পার্লামেন্টে অনুমোদন করে দেশবাসীর কাছে পেশ করেন। এই নীতিটি তফসিলি জাতি/উপজাতি (SC/ST) সংরক্ষণের মতো (যা বাবা সাহেব আম্বেদকরের অবদান), অথবা মণ্ডল কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (OBC) সংরক্ষণের মতো (যা বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং এবং লালকৃষ্ণ আডবাণীর অবদান) একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সাধারণ শ্রেণিভুক্ত যারা সাধারণত সংরক্ষণ থেকে বঞ্চিত, তাদের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, দুর্নীতি এবং প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়ার প্রভাব কমাতে শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতেই প্রধানমন্ত্রী মোদির EWS নীতি প্রণীত হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গে EWS কার্যকর না হওয়া এবং বিরোধীদের অভিযোগ

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় সর্বসম্মতিক্রমে EWS সংরক্ষণ নীতি অনুমোদিত হলেও, তা কার্যকর হয়নি। বিরোধী দলনেতার সরাসরি অভিযোগ, “পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় EWS প্রস্তাব পাস হলেও, পশ্চিমবঙ্গে কার্যকর হয়নি, এমনিতেও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের দ্বারা নিয়োগ বন্ধ।” এই অভিযোগ রাজ্যের অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল সাধারণ শ্রেণির মানুষদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

Voter List : সুপ্রিম কোর্টে নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা সংশোধন এখন বিচারাধীন , তবে স্থগিতাদেশ হীন ।

OBC তালিকা বাতিল ও EWS-এ মুসলিমদের অন্তর্ভুক্তির প্রচেষ্টা

সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক বেআইনিভাবে জনগণনা ছাড়াই মুসলিমদের OBC তালিকায় অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি খারিজ করে দিয়েছে। এই রায়ের পর পশ্চিমবঙ্গ সরকার EWS-এর সাধারণ শ্রেণিকে বঞ্চিত করার প্রয়াসে – বেলদা মুসলিম, খোট্টা মুসলিম এবং মুসলিম সর্দারদের এই EWS ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্তির চেষ্টা করেছে । বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, “প্রথমে উনি (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) SC/ST-দের বঞ্চিত করলেন, পরে OBC-দের বঞ্চিত করলেন এখন EWS-এ যে হিন্দু উচ্চবর্ণ কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বলদের সংরক্ষণ আছে তাদেরকেও বঞ্চিত করলেন!”

সরকারি ওয়েবসাইটে নির্দেশিকা এবং অগ্রাধিকার হারানোর আশঙ্কা

বিভিন্ন সরকারি চাকরির আবেদন ওয়েবসাইট এবং আবেদনপত্রগুলিতে স্পষ্টভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে বেলদা মুসলিম, খোট্টা মুসলিম এবং মুসলিম সর্দারদের EWS শ্রেণিতে আবেদন করার জন্য। বিরোধীদের দাবি, এর ফলে SC/ST, OBC এবং সাধারণ শ্রেণির পিছিয়ে পড়া হিন্দুদের অগ্রাধিকার নষ্ট হবে।

‘তোষণের রাজনীতি’ এবং মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন

বিরোধী দলনেতার বক্তব্য অনুযায়ী, “এটা অত্যাধিক তোষণের রাজনীতি। পিছিয়ে পড়া মুসলিমদের জন্য ইতিমধ্যেই OBC-এর যে জাতীয় তালিকা, তাতে ২৭টি মুসলিম গোষ্ঠী আছে, তবে মুখ্যমন্ত্রী ১০০ শতাংশ মুসলিম সমাজকে সংরক্ষণ দিতে চায়, কারণ ওনার (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের) এই সংখ্যালঘু সমাজের ৩০-৩২% ভোট খুব দরকার, তাই অবৈধভাবে এটা করেছেন।” তিনি আরও বলেন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সম্পূর্ণ মুসলিম সমাজ দ্বারা সমর্থিত।

Suvendu vs Mamata : পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকা সংশোধনের দাবিতে রাজনৈতিক বিতর্ক !

রাজ্যপালের হস্তক্ষেপের আবেদন এবং জনস্বার্থ মামলার আহ্বান

বিরোধী দলনেতা ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালকে এই বিষয়ে চিঠি লিখে জানিয়েছেন। তিনি সাধারণ শ্রেণি এবং সংবেদনশীল আইনজীবী মহলকেও এই ব্যাপারে উচ্চ আদালতে জনস্বার্থ মামলার জন্য আহ্বান করেছেন।

EWS সংরক্ষণের বিস্তারিত মানদণ্ড

EWS ক্যাটাগরিতে সঠিকভাবে সংরক্ষণ পাওয়ার জন্য, আবেদনকারীকে সাধারণ শ্রেণির হতে হবে, বার্ষিক ৮ লক্ষ টাকা বা তার কম উপার্জন হতে হবে এবং আড়াই কাঠা জমির বা তার কমের মালিকানা থাকতে হবে। গোষ্ঠীগতভাবে একটি সম্প্রদায়ের অংশবিশেষকে EWS-এর তালিকাভুক্ত করা যায় না। এটি অবৈধ।

এই সমস্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে এবং রাজ্য সরকার দ্বারা হিন্দু জনগোষ্ঠীর বঞ্চনা ক্রমশ বাড়ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর