ব্যুরো নিউজ ১০ জুলাই ২০২৫ : জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুতর বিপদ হয়ে দাঁড়ানো এক ঘটনায়, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (STF) পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারি থেকে দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। অভিযোগ, এই দুই যুবক পাকিস্তানের একটি এনজিও-র সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের হাতে নিজেদের ভারতীয় মোবাইল নম্বর এবং হোয়াটসঅ্যাপ OTP তুলে দিয়েছিল, যা ব্যবহার করে পাকিস্তান থেকে ভারতীয় নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করা হচ্ছিল। এই নম্বরগুলি ভারতীয় সেনা আধিকারিকদের হানিট্র্যাপের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছিল বলেও জানা গেছে।
গ্রেপ্তার ও অভিযোগ
গ্রেপ্তার হওয়া দুই যুবকের নাম মুকেশ রজক ও রাকেশ কুমার গুপ্ত। STF সূত্রে খবর, তারা পূর্ব বর্ধমানের মেমারি, বর্ধমান সহ বিভিন্ন জেলার দোকান থেকে বেনামে সিম কার্ড সংগ্রহ করত। এরপর সেই মোবাইল নম্বরগুলি হোয়াটসঅ্যাপ খোলার জন্য পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থার হাতে তুলে দিত। তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন যে, ধৃতরা সরাসরি হানিট্র্যাপ ফাঁদার কাজে জড়িত ছিল কিনা।
হানিট্র্যাপের কৌশল
রাজ্যের STF-এর তদন্তে বারবার দেখা গেছে যে, পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থাগুলি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে ভারতীয় সেনা এবং টেলিকম সংস্থার কর্মীদের নিশানা করছে। এই ‘হানিট্র্যাপে’ পাকিস্তানি এজেন্টরা মহিলাদের ভুয়া আইডি ব্যবহার করে সেনা আধিকারিকদের সাথে সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগাযোগ করত। এমনকি মহিলা পাকিস্তানি এজেন্টরাও এই ধরনের অপারেশন পরিচালনা করত। তারা সেনা আধিকারিকদের প্রেমের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করত এবং কথোপকথন ও ভিডিও কলের মাধ্যমে গোপন তথ্য পাচার করত। অনেক সময় অর্থের লোভ দেখিয়েও তথ্য সংগ্রহ করা হত।
রাকেশ গুপ্তার গ্রেপ্তার
রাকেশ গুপ্তা বর্ধমানের থানার উল্টো দিকের একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন ছিল। নার্সিংহোমের ম্যানেজার প্রাণকৃষ্ণ ঘোষ জানিয়েছেন, ৩০ জুন রাকেশ হার্নিয়া চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছিল। ৪ জুলাই ছুটি পাওয়ার সাথে সাথেই নার্সিংহোমের বাইরে থেকে STF তাকে গ্রেপ্তার করে। নার্সিংহোম সূত্রে আরও জানা গেছে, এক মহিলা তাকে দেখতে আসতেন, যিনি তার প্রেমিকা বলেই পরিচিত।
STF-এর বক্তব্য
STF জানিয়েছে, যদি ভারতীয় হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর পাকিস্তান থেকে পরিচালিত হয়, তবে তা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি। এর মাধ্যমে স্প্যাম, তথ্য পাচার এমনকি জঙ্গি কার্যকলাপেও হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার হতে পারে। STF-এর একজন আধিকারিক বলেন, “কেউ যদি দেশের মোবাইল নম্বর পাকিস্তানে বসে পরিচালনার সুযোগ দেয়, তাহলে সেটা কেবল বেআইনি নয়, জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধেও স্পষ্ট ষড়যন্ত্র। তদন্তে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
মামলা ও তদন্ত
ধৃতদের বিরুদ্ধে টেলিগ্রাফ অ্যাক্ট, ওয়্যারলেস টেলিগ্রাফি অ্যাক্ট এবং ফরেনার্স অ্যাক্ট সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। বর্তমানে ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া মোবাইল, সিম কার্ড এবং অন্যান্য ডিভাইস ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে STF-এর একটি দল মেমারি এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই দুই সন্দেহভাজনকে আটক করে এবং জিজ্ঞাসাবাদের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে।