ব্যুরো নিউজ ১০ জুলাই ২০২৫ : ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই, ২০২৫) বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে ভোটার তালিকা বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (Special Intensive Revision – SIR) বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যদিও আদালত এই সংশোধনের প্রক্রিয়াকে সঠিক বলে মনে করেছে, তবে এর সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
মূল উদ্বেগ সংশোধনের সময়কাল তবে স্থগিতাদেশ নয়
বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ মন্তব্য করেছে যে ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়াটি সমস্যাজনক না হলেও, নির্বাচনের এত কাছাকাছি সময়ে এটি শুরু করা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বেঞ্চ নির্বাচন কমিশনকে (ECI) উদ্দেশ্য করে বলেছে, “আপনার অনুশীলন সমস্যা নয়, সমস্যা হল এর সময়… কেন বিহারে এই এসআইআরকে নভেম্বরের বিধানসভা নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে? এটি নির্বাচন নির্বিশেষে কেন করা যায় না?”
Voter List : ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে মহুয়াদের আবেদন খারিজ সুপ্রিম কোর্টের , ১০ জুলাই ফের শুনানি ।
পরিচয়পত্র গ্রহণে নির্দেশনা এবং পরবর্তী শুনানি
শীর্ষ আদালত নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে যে ভোটার যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার সময় আপাতত আধার কার্ড, ভোটার আইডি কার্ড এবং রেশন কার্ডকে বৈধ নথি হিসেবে বিবেচনা করতে হবে এবং যাচাই করতে হবে। পূর্বে নির্বাচন কমিশন এসব নথি গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছিল, যা আবেদনকারীদের প্রধান অভিযোগগুলোর মধ্যে একটি ছিল। আদালত বলেছে, “আমাদের নির্বাচন কমিশনকে অবিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। তারা বলছে যখন , আমরা তাদের যুক্তি পরিক্ষা করতে চাই । বিষয়টির শুনানি প্রয়োজন। ২৮ জুলাই এটি তালিকাভুক্ত করা হোক। এর মধ্যে তারা খসড়া ( ভোটার তালিকার ) প্রকাশ করবে না।”
ভোটারদের প্রতিকার নিয়ে উদ্বেগ
বিচারপতি ধুলিয়া সতর্ক করেছেন যে একবার ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হয়ে গেলে, আদালত সাধারণত তাতে হস্তক্ষেপ করে না। তিনি বলেছেন, “একবার ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হয়ে গেলে আদালত তাতে হস্তক্ষেপ করবে না… যার অর্থ হল একজন ভোটাধিকার বঞ্চিত ব্যক্তি নির্বাচনের আগে এটিকে (সংশোধিত তালিকা) চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ পাবে না।”
সংশোধনের যৌক্তিকতা ও সংবিধানের অবস্থান
নির্বাচন কমিশন যুক্তি দিয়েছে যে বিগত দুই দশকে ভোটার তালিকায় ব্যাপক সংযোজন ও বিয়োজন হওয়ায় এবং নকল এন্ট্রির ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় এই সংশোধন প্রয়োজন। কমিশন জানিয়েছে, ২০০৩ সালের পর বিহারে এমন নিবিড় সংশোধন আর হয়নি। আদালতও স্বীকার করেছে যে ভোটার তালিকা থেকে অনাগরিকদের নাম বাদ দিতে একটি কঠোর প্রক্রিয়া থাকা প্রয়োজন। বিচারপতিরা বলেন, “তারা যা করছে তা সংবিধান অনুযায়ীই করছে। সুতরাং আপনি বলতে পারবেন না যে তারা যা করার কথা নয় তা করছে।”
আবেদনকারীদের প্রধান যুক্তি
আবেদনকারীদের পক্ষে সওয়ালকারী আইনজীবী কপিল সিবাল (আরজেডি নেতা মনোজ ঝার পক্ষে), গোপাল শঙ্করনারায়ণন এবং অভিষেক মনু সিংভি সুপ্রিম কোর্টে নিজেদের যুক্তি তুলে ধরেন। তাদের মূল যুক্তিগুলো নিম্নরূপ:
- অল্প সময়ে ব্যাপক সংশোধন: নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে ৩০ দিনের মধ্যে পুরো তালিকা সংশোধনের প্রক্রিয়াটি অসম্ভব এবং এতে বহু যোগ্য ভোটার বাদ পড়তে পারেন।
- নথি সংক্রান্ত সমস্যা: ইসিআই আধার কার্ড এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথি গ্রহণ করতে অস্বীকার করছে এবং বাবা-মায়ের নথিও চাওয়া হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাচারী ও বৈষম্যমূলক। বিশেষ করে ২০০৩ সালের পরে নিবন্ধিত ভোটারদের জন্য কঠোর নিয়ম আরোপ করা হয়েছে।
- আধার কার্ডের গুরুত্ব: যখন আধার পরিচয়পত্র হিসেবে স্বীকৃত, তখন এটিকে কেন যাচাই প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়া হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
- নাগরিকত্বের প্রশ্ন: নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী বলেছেন যে আধার নাগরিকত্বের বৈধ প্রমাণ নয়। এর উত্তরে সুপ্রিম কোর্ট কড়া মনোভাব নিয়ে বলেছে যে নাগরিকত্ব যাচাইয়ের অধিকার নির্বাচন কমিশনের নেই, এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার।
- প্রতিকারের অভাব: একবার তালিকা চূড়ান্ত হলে বাদ পড়া ব্যক্তিদের কাছে নির্বাচনের আগে তা চ্যালেঞ্জ করার জন্য যথেষ্ট সময় থাকবে না।
Bihar : বিহারের ঐতিহাসিক ই-ভোটিং উদ্যোগ: গণতন্ত্রে নতুন দিগন্ত?
আদালতের প্রশ্ন ও পর্যবেক্ষণ
আদালত ইসিআইকে জিজ্ঞাসা করেছে যে নিবিড় সংশোধন নিয়মের আওতায় পড়ে কিনা এবং কখন এটি করা যেতে পারে। আদালত আরও বলেছে যে আবেদনকারীরা কমিশনের এখতিয়ারকে চ্যালেঞ্জ করছে না, বরং সংশোধনের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। বিচারপতি বাগচী উল্লেখ করেছেন যে আরপি অ্যাক্টের ২১ ধারার উপধারা ৩ অনুযায়ী কমিশনের বিশেষ সংশোধনের অধিকার আছে, যা তারা যথাযথভাবে করতে পারে। তবে, নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে এই প্রক্রিয়া শুরু করলে তা ভোটারদের অধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে।
পরবর্তী শুনানি
সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে এবং বলেছে যে ভোটার তালিকা পরিষ্কার করার কোনো ভুল নেই, তবে নির্বাচনের ঠিক আগে এটি করা উপযুক্ত নাও হতে পারে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি ২৮ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে।