ব্যুরো নিউজ ০৮ জুলাই ২০২৫ : রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) সম্প্রতি তাদের প্রান্ত প্রচারকদের তিন দিনব্যাপী এক ব্যাপক বৈঠক সম্পন্ন করেছে। এই বৈঠকে সাংগঠনিক বৃদ্ধি, সামাজিক সম্প্রীতি এবং জাতীয় নিরাপত্তা সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের বিশদ বিবরণ সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন অখিল ভারতীয় প্রচার প্রমুখ সুনীল অম্বেকর।
দেশজুড়ে কার্যক্রমের সম্প্রসারণ ও চ্যালেঞ্জ পর্যালোচনা
বৈঠকে আরএসএস-এর দেশব্যাপী কার্যক্রমের চলমান সম্প্রসারণের বিষয়ে পর্যালোচনা করা হয়। বিশেষত, যেসব এলাকায় সংঘের উপস্থিতি সীমিত, সেখানকার চ্যালেঞ্জ এবং কর্মপন্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সীমান্ত রাজ্যগুলিতে আরএসএস-এর প্রচেষ্টা এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সাথে স্বয়ংসেবকদের যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে কীভাবে সামাজিক সংহতি বাড়ানো হচ্ছে, তার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়।
মণিপুর পরিস্থিতি ও শান্তি ফেরানোর উদ্যোগ
আলোচনার একটি বড় অংশ জুড়ে ছিল মণিপুরের বর্তমান পরিস্থিতি। আরএসএস সক্রিয়ভাবে মণিপুরের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সংলাপের প্রচার করছে, যার লক্ষ্য হলো শান্তি ও সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনা। অম্বেকর জানান, এই অঞ্চলে ইতিবাচক উন্নয়নের খবর পাওয়া গেছে, যদিও এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হতে কিছুটা সময় লাগবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরএসএস-এর শতবর্ষ উদযাপন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বৈঠকে আরএসএস-এর শতবর্ষ উদযাপন নিয়েও গভীর আলোচনা হয়। দেশজুড়ে বিজয়াদশমী অনুষ্ঠানের আয়োজনের পরিকল্পনা চলছে, যেখানে নিজ নিজ অঞ্চলের সকল স্বেচ্ছাসেবকদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সংঘ ১,০৩,০০০-এরও বেশি হিন্দু সম্মেলন আয়োজনের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এই সম্মেলনগুলো মন্ডল এবং পাড়া-মহল্লা স্তরে অনুষ্ঠিত হবে, যার উদ্দেশ্য সামাজিক ঐক্য প্রচার করা এবং সামাজিক কুসংস্কার দূরীকরণ ও ধর্মীয় সচেতনতা প্রসারের মতো বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করা।
প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের অগ্রগতি
প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ছিল বৈঠকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে আরএসএস ১০০টি প্রশিক্ষণ শিবির পরিচালনা করেছে। এতে ১৭,৬০৯ জন স্বেচ্ছাসেবক অংশগ্রহণ করেন, যার মধ্যে ৪০টি জেলা থেকে ৮,৮১২ জন ছিলেন এবং তাদের মধ্যে ৪,২৭০ জনের বয়স ৪০ বছরের বেশি। এই শিবিরগুলিতে প্রথম বর্ষের ‘শিক্ষা বর্গ’ও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
জাতীয় নিরাপত্তা ও সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রসঙ্গ
জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে, বৈঠকে দেশের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি, বিশেষত সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। ‘অপারেশন সিঁদুর’ প্রসঙ্গে অম্বেকর বলেন, “আমরা সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে এই অভিযানের প্রতি উৎসাহ ও উদ্দীপনার প্রতিক্রিয়া পেয়েছি, এবং কীভাবে এই ঘটনাগুলির প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছিল তাও পর্যালোচনা করা হয়েছে।”
সমাজের সর্বস্তরে পৌঁছানো ও পঞ্চমুখী রূপান্তর
আরএসএস সমাজের সকল স্তরে তাদের প্রসার বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে, যাতে গ্রাম, শহর ও শহুরে এলাকার প্রতিটি পরিবারে তাদের যোগাযোগ নিশ্চিত করা যায়। সংগঠনটি পাঁচটি মূল রূপান্তরের উপর মনোযোগ দিচ্ছে, যার লক্ষ্য হল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের পাশাপাশি অর্থনৈতিক অগ্রগতির উপর জোর দিয়ে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
বৈঠকের শেষে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সদস্যদের জড়িত করে ১১,৩৬০টিরও বেশি সামাজিক সম্প্রীতি সভা আয়োজনের একটি পরিকল্পনা করা হয়। এই সভাগুলির উদ্দেশ্য হল ঐক্য প্রচার করা এবং সামাজিক কুসংস্কার দূর করার উপায় নিয়ে আলোচনা করা।
শতবর্ষ চলমান থাকায়, আরএসএস দেশজুড়ে তাদের উপস্থিতি সুসংহত করতে এবং সামাজিক সংহতি শক্তিশালী করতে তাদের প্রচেষ্টা আরও জোরদার করছে।