ব্যুরো নিউজ ০৮ জুলাই ২০২৫ : দিল্লির তীব্র বায়ুদূষণ মোকাবিলায় এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে প্রথমবারের মতো কৃত্রিম বৃষ্টিপাত বা ‘ক্লাউড সিডিং’য়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে শহরের বায়ুর মান উন্নয়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও, প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা নিয়ে কিছু প্রশ্নও উঠছে।
ঐতিহাসিক প্রচেষ্টা: মেঘবীজ বপন
দিল্লির ক্রমবর্ধমান বায়ুদূষণ একটি বড় উদ্বেগের কারণ। এই সমস্যা সমাধানের জন্য ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (IIT) কানপুর, ইন্ডিয়ান মেটিওরোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট (IMD) পুণে এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটিওরোলজি (IITM) পুণের সহযোগিতায় ‘ক্লাউড সিডিং’ প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটাচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় বিমান থেকে মেঘের ভেতর সিলভার আয়োডাইড, আয়োডিনযুক্ত লবণ এবং রক সল্টের মতো বিশেষ রাসায়নিক ছড়িয়ে দেওয়া হয়, যা বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করে। এর মূল উদ্দেশ্য হল বায়ুমণ্ডলে ভাসমান দূষিত কণাগুলিকে ধুয়ে ফেলা এবং বায়ুর গুণমান উন্নত করা।
Kolkata : ভারী বর্ষণে কলকাতা জল্মগ্ন ! ভেনিসের মতন হয়ে উঠল মহানগর !
প্রকল্পের সময়সূচীর পরিবর্তন:
প্রাথমিকভাবে, এই কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ৪ জুলাই থেকে ১১ জুলাই, ২০২৫ পর্যন্ত চালানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে, দিল্লিতে চলমান বর্ষা ঋতু এবং প্রাকৃতিক বৃষ্টিপাতের কারণে এই তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই প্রকল্পটি এখন ৩০শে আগস্ট থেকে ১০ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বর্ষা পরবর্তী সময়ে মেঘের গঠন ক্লাউড সিডিংয়ের জন্য আরও বেশি উপযুক্ত হবে, যা প্রকল্পের সাফল্য নিশ্চিত করবে।
ক্লাউড সিডিং প্রক্রিয়া ও কার্যকারিতা:
আইআইটি কানপুর সিলভার আয়োডাইড ন্যানোপার্টিকেল এবং লবণের মিশ্রণ ব্যবহার করে একটি বিশেষ ফর্মুলেশন তৈরি করেছে। এই মিশ্রণটি পরিবর্তিত সেসনা বিমানের মাধ্যমে ফ্লেয়ার-ভিত্তিক সিস্টেম ব্যবহার করে মেঘে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। প্রতিটি বিমান অভিযান প্রায় ৯০ মিনিট স্থায়ী হবে এবং উত্তর-পশ্চিম এবং বাইরের দিল্লির প্রায় ১০০ বর্গ কিলোমিটার আকাশসীমা জুড়ে এই প্রক্রিয়া চালানো হবে। নিম্বোস্ট্র্যাটাস মেঘ, যা সাধারণত ৫০০ থেকে ৬,০০০ মিটার উপরে গঠিত হয়, এই ধরনের ক্লাউড সিডিংয়ের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত বলে বিবেচিত। পূর্ববর্তী পরীক্ষা এবং বৈশ্বিক গবেষণার ভিত্তিতে, কৃত্রিম বৃষ্টির মাধ্যমে বৃষ্টিপাতের সাফল্যের হার ৬০-৭০% পর্যন্ত হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
Weather update : দিনভর বৃষ্টি – আবহাওয়ার সতর্কবার্তা
মূল লক্ষ্য: দূষণমুক্ত দিল্লি, কিন্তু সংশয়ও থাকছে
এই প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য হল “দিল্লি এনসিআর দূষণ প্রশমনের বিকল্প হিসাবে ক্লাউড সিডিংয়ের প্রযুক্তি প্রদর্শন ও মূল্যায়ন”। কৃত্রিম বৃষ্টির মাধ্যমে বাতাসে ভাসমান দূষিত কণা, ধুলো এবং ধোঁয়াশার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে, বিশেষজ্ঞদের মনে একটি সংশয়ও দানা বাঁধছে। যদি মেঘের ঘনীভবন (condensation) সম্পূর্ণ সম্পৃক্ততার (saturation) নিচে থাকে, তবে সেই ক্ষেত্রে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা এবং ময়লার কণাগুলো বৃষ্টির কণা তৈরি না করে স্মগ তৈরি করতে পারে। এটি কেবল কৃত্রিম বৃষ্টিপাত প্রচেষ্টাকেই ব্যর্থ করবে না, বরং দূষণ নিয়ন্ত্রণকেও নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এই দিকটি প্রকল্পের সাফল্য নির্ধারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হিসেবে রয়ে যাচ্ছে।
এই সাহসী পদক্ষেপটি দিল্লির পরিবেশগত সংকট মোকাবিলায় এক নতুন দিশা দেখাবে বলে মনে করা হচ্ছে, তবে এর প্রকৃত প্রভাব জানতে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।