ব্যুরো নিউজ ০২ জুলাই : কসবার সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে যখন ক্ষোভ বাড়ছে, তখন এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য সরকার ও তৃণমূল কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বুধবার এই জঘন্য ঘটনার প্রতিবাদে তিনি কলকাতায় এক বিশাল মিছিল ও জনসভার নেতৃত্ব দেন। তার এই কর্মসূচি শুধু কসবা কাণ্ডের প্রতিবাদেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং আসন্ন ২১শে জুলাই তৃণমূলের শহীদ দিবসের পাল্টা হিসেবে উত্তরকন্যা অভিযান এবং ৯ই আগস্ট আরজি কর কাণ্ডের বর্ষপূর্তিতে নবান্ন অভিযানের মতো গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিরও ঘোষণা করা হয়েছে। এই ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে নতুন করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
প্রতিবাদ মিছিল ও কড়া স্লোগান
রাসবিহারী মোড় থেকে শুরু হওয়া এই প্রতিবাদ মিছিল বৃষ্টি উপেক্ষা করেই কসবার দিকে এগিয়ে যায়। মিছিলে বিজেপি দলের মহিলা কর্মীদের ঝাঁটা হাতে দেখা যায়, যা এক প্রতীকী প্রতিবাদের বার্তা বহন করে। যুব মোর্চার কর্মী-সমর্থকরাও মিছিলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন। “কন্যা বাঁচাও” স্লোগান তুলে এই মিছিল সাউথ ক্যালকাটা ল’কলেজের কাছে শেষ হয় এবং সেখানেই এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শুভেন্দু অধিকারী রাজ্য সরকার ও তৃণমূল কংগ্রেসকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, “বাঙালি হিসেবে অন্য রাজ্যে গিয়ে পরিচয় দিতে লজ্জা বোধ হয়। এই রাজ্যে মহিলাদের বিরুদ্ধে অনেক অপরাধ হয়।” সমাবেশ থেকে শুভেন্দু একাধিক স্লোগান দেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য: “ঝাড়ু মেরে করো সাফ, মমতার সরকার!”, “এক হাজার ঝাড়ু এক হাজার মা মিছিল করেছেন। কন্যা বাঁচাও মমতা হটাও!”, “ধর্ষকদের ফাঁসি চাই, মমতার পতন দেখতে চাই!”, এবং “বিজেপি কর্মীরা গুলি খেতেও তৈরি।” বক্তব্য রাখার সময় তিনি আরজি কর হাসপাতালে এক চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের প্রসঙ্গও টেনে আনেন, যা রাজ্যে নারী নির্যাতনের ক্রমবর্ধমান চিত্র তুলে ধরে।
শুভেন্দুর জোড়া কর্মসূচি: ২১ জুলাই উত্তরকন্যা ও ৯ আগস্ট নবান্ন অভিযান
কসবার প্রতিবাদ সমাবেশ থেকেই শুভেন্দু অধিকারী দুটি বড় কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেন। প্রথমত, তিনি ২১শে জুলাই উত্তরকন্যা অভিযানের ডাক দেন। প্রতি বছর এই দিনেই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস ধর্মতলায় তাদের ‘শহীদ দিবস’ পালন করে থাকে। শুভেন্দু এই দিনে শিলিগুড়িতে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, “ওইদিন চোরেরা কলকাতায় ডিম ভাত খেতে আসে। আর আমরা উত্তরকন্যা নড়িয়ে দেব।” এই ঘোষণা তৃণমূলের শহীদ দিবসের গুরুত্বকে ম্লান করার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, শুভেন্দু জানান যে ৫ই আগস্ট তিনি অভয়ার বাবা ও মায়ের কাছে যাবেন (আরজি কর কাণ্ডের ভুক্তভোগী)। সেখানেই তিনি তাদের ৯ই আগস্ট পতাকা ছাড়া নবান্ন অভিযান করার কথা বলবেন। বিরোধী দলনেতা বলেন, “৫ তারিখে পানিহাটিতে উল্টো রথে যাব। ওইদিন আমি অনুমতি নিয়ে অভয়ার বাবা-মার কাছে যাব। আর বাবাকে বলব, পতাকা ছাড়া ৯ অগাস্ট অভয়ার ধর্ষণ-খুনের বর্ষপূর্তিতে নবান্ন অভিযান করতে হবে।” ৯ই আগস্ট আরজি কর কাণ্ডের এক বছর পূর্ণ হবে এবং এই দিনে নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়ে শুভেন্দু নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে তার অবস্থান আরও স্পষ্ট করেছেন। এই অভিযানে অভয়ার মা ও বাবাকে থাকার জন্য আবেদন জানানো হবে বলেও শুভেন্দু জানিয়েছেন।
উপসংহার
কসবা গণধর্ষণ কাণ্ডের প্রতিবাদে শুভেন্দু অধিকারীর এই কর্মসূচিগুলি রাজ্যের নারী নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ২১শে জুলাই এবং ৯ই আগস্টের এই পাল্টা কর্মসূচিগুলি নিঃসন্দেহে রাজ্যের রাজনৈতিক তাপমাত্রাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে এবং আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।