ব্যুরো নিউজ ০২ জুলাই : পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক হিংসা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘকাল ধরেই বিতর্ক চলছে। এবার সেই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের ওপর হামলার ঘটনা। গত ১৯ জুন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজে আক্রান্ত হন সুকান্ত মজুমদার। আক্রান্ত বিজেপি কর্মীদের দেখতে গিয়ে তিনি তৃণমূলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তোলেন। শুধু তাই নয়, স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও করেন তিনি। এই ঘটনায় লোকসভার সচিবালয় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের থেকে রিপোর্ট তলব করেছে, যা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জমা দিতে হবে। এই ঘটনাটি রাজ্যের ‘দুর্নীতিগ্রস্ত শাসন’ এবং পুলিশের পক্ষপাতমূলক আচরণ নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে, যেখানে একদিকে একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়, অন্যদিকে পুলিশ শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের ওপর চড়াও হয়।
বজবজে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ওপর হামলা ও অভিযোগ
১৯ জুন বজবজে আক্রান্ত বিজেপি কর্মীদের দেখতে যান সুকান্ত মজুমদার। সেখানেই তাঁর কনভয়ের ওপর হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। তিনি লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে লেখা চিঠিতে জানান যে, বিক্ষোভকারীদের একটি দল তাঁর কনভয় ঘেরাও করে এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ পাথর ও চপ্পল ছোড়ে। এছাড়াও গালিগালাজ করা হয় এবং গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এই ঘটনায় তাঁর সঙ্গে থাকা বেশ কয়েকজন জখম হন বলেও তিনি দাবি করেন। সুকান্ত মজুমদার এই আক্রমণকে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করেছেন। তিনি লোকসভার কার্য পরিচালনা বিধির বিধি ২২২ এর অধীনে একটি নোটিশ জমা দিয়ে এটিকে একজন সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মর্যাদা, নিরাপত্তা এবং চলাচলের স্বাধীনতার উপর গুরুতর আক্রমণ এবং অধিকার লঙ্ঘন বলে আখ্যায়িত করেছেন।
পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা এবং পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
সুকান্ত মজুমদার তাঁর চিঠিতে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশকে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং তাঁকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন যে, বজবজে যখন এই জঘন্য ঘটনা ঘটে, তখন পুলিশ সুপার (শ্রী রাহুল গোস্বামী) ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু কোনো প্রতিরোধমূলক বা প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হন। সুকান্ত মজুমদার এটিকে ‘ইচ্ছাকৃত অবহেলা, কর্তব্যে অবহেলা এবং রাজনৈতিক হিংসাকে উৎসাহিত করার সামিল’ বলে অভিহিত করেছেন। এমনকি, ডায়মন্ড হারবারের এসডিপিও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না, যদিও তাঁর আসার বিষয়ে পুলিশ অবগত ছিল। সুকান্ত দাবি করেন, তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিযুক্ত সিআইএসএফ কর্মীদের হস্তক্ষেপের পরেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এখানে প্রশ্ন ওঠে, যখন একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজনৈতিক হিংসায় আক্রান্তদের দেখতে যাচ্ছেন, তখন পুলিশ কীভাবে ভিড় জমতে দিল এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ব্যর্থ হলো? জনসভার অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও এই ধরনের জমায়েত কীভাবে সম্ভব হলো, তা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তোলে।
গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ এবং পুলিশের দ্বৈত ভূমিকা
এই ঘটনার সঙ্গে আরেকটি ঘটনাকে জুড়ে দেখা হচ্ছে, যেখানে রাজ্যের নারী ধর্ষণ এবং সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবাদ করার জন্য খোদ সুকান্ত মজুমদারকে কলকাতা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। এটি স্পষ্টতই পুলিশের দ্বৈত ভূমিকা তুলে ধরে: একদিকে তারা রাজনৈতিক জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে বা অপরাধীদের ধরতে ব্যর্থ হয়, অন্যদিকে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারী এবং সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করে। এটি একটি স্বৈরাচারী শাসনের নিখুঁত উদাহরণ, যেখানে নাগরিক অধিকারের চেয়ে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যই বেশি প্রাধান্য পায়।
কেন্দ্রীয় প্রশংসা পেল উত্তরপ্রদেশ: GeM (গভর্নমেন্ট ই-মার্কেটপ্লেস) ব্যবহার করে সরকারি ক্রয়ে শীর্ষে
উপসংহার
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ওপর হামলা এবং পুলিশের বিতর্কিত ভূমিকা পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এক উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরে। এই ঘটনাগুলি শুধু একজন মন্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তার প্রশ্ন নয়, বরং রাজ্যের গণতান্ত্রিক কাঠামো এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে গভীর সংশয় তৈরি করে। লোকসভার সচিবালয়ের রিপোর্ট তলব এবং এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তই পারে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করতে এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে। একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থার জন্য, যেখানে রাজনৈতিক পরিচয় নির্বিশেষে সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়, তা অত্যন্ত জরুরি।