ধর্মণে হীনাঃ পশুভিঃ সমানাঃ। অর্থাৎ, ধর্ম ছাড়া মানুষ পশুর সমান।
যদ্ ধর্মো নাস্তি হতং তদ্ যথা তৎ।। অর্থাৎ, যেখানে ধর্ম নেই, সেই স্থান ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
ধর্ম হিন্দু জীবনের অন্যতম মৌলিক নীতি, এবং এটি বোঝা কেবল ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, জীবনযাপনের শিল্প হিসেবেও অপরিহার্য। সুতরাং, আর দেরি না করে, চলুন আজকের বিষয়ে গভীরভাবে প্রবেশ করি।
ধর্মের অর্থ ও সংজ্ঞা ‘ধর্ম’ শব্দটি সংস্কৃত থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ “যা ধারণ করে”। ধর্ম শুধু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানকেই বোঝায় না, বরং জীবনের সমস্ত দিককে অন্তর্ভুক্ত করে। এটি সত্য, ন্যায়বিচার, কর্তব্য এবং নৈতিকতাকে প্রতিনিধিত্ব করে।
হিন্দু দর্শনে ধর্মের প্রকারভেদ হিন্দু দর্শনে, বিভিন্ন সামাজিক শ্রেণী এবং জীবনের পর্যায় অনুসারে ধর্মকে বিভিন্ন প্রকারে ভাগ করা হয়েছে। আসুন এই প্রকারগুলি বিস্তারিতভাবে জেনে নিই:
সাধারণ ধর্ম (सामान्य धर्म) সাধারণ ধর্ম, যা সাধারণধর্ম নামেও পরিচিত, সকল মানুষের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। প্রতিটি ব্যক্তির শ্রেণী, বর্ণ বা বয়স নির্বিশেষে এটি মেনে চলা উচিত। এর মধ্যে নিম্নলিখিত প্রধান উপাদানগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:
- সত্য কথা বলা (सत्य): সর্বদা সত্য কথা বলা এবং মিথ্যা পরিহার করা।
- অহিংসা (अहिंसा): হিংসা থেকে বিরত থাকা এবং সকল জীবের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করা।
- অস্তেয় (अस्तेय): চুরি না করা এবং অন্যের সম্পত্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা।
- শৌচ (शौच): শারীরিক ও মানসিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা।
- সন্তোষ (सन्तोष): নিজের পরিস্থিতিতে সন্তুষ্ট থাকা এবং অপ্রয়োজনীয় আকাঙ্ক্ষা পরিহার করা।
- তপস্যা (तपस्): আত্ম-শৃঙ্খলা এবং সংযম অনুসরণ করা।
- স্বাধ্যায় (स्वाध्याय): ক্রমাগত আত্মজ্ঞান এবং শিক্ষার জন্য সচেষ্ট থাকা।
- ঈশ্বরপ্রণিধান (ईश्वरप्रणिधान): ঈশ্বরের প্রতি আস্থা ও নিষ্ঠা রাখা।
আধুনিক জীবনে, ধর্মের নীতিগুলি প্রাসঙ্গিক এবং অপরিহার্য রয়ে গেছে। যদিও প্রেক্ষাপট পরিবর্তিত হতে পারে, সত্য, ন্যায়বিচার, কর্তব্য এবং নৈতিকতার মূল মূল্যবোধগুলি ব্যক্তিকে ন্যায়নিষ্ঠ জীবনযাপনে পরিচালিত করে চলেছে।
ধর্ম নৈতিক জীবনযাপনে উৎসাহিত করে, যা সমসাময়িক সমাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তিগত এবং পেশাগত পারস্পরিক ক্রিয়াকলাপে সততা, নিষ্ঠা এবং ন্যায়পরায়ণতা বজায় রাখা একটি ন্যায়সঙ্গত এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করে।
ধর্মচর্চার মধ্যে সামাজিক দায়বদ্ধতা পূরণ করা অন্তর্ভুক্ত, যেমন অভাবীদের সাহায্য করা, পরিবেশ রক্ষা করা এবং সমাজের কল্যাণে অবদান রাখা। এই কাজগুলি একাত্মবোধ এবং সম্মিলিত মঙ্গল বৃদ্ধি করে।
ধর্ম আমাদের বস্তুগত এবং আধ্যাত্মিক লক্ষ্যের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে শেখায়। যদিও সাফল্য এবং সমৃদ্ধি অর্জন করা গুরুত্বপূর্ণ, এটি যেন নৈতিক মূল্যবোধ এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির বিনিময়ে না হয়। একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপন সামগ্রিক মঙ্গল এবং পরিপূর্ণতা নিশ্চিত করে।
धर्म एव हतो हन्ति धर्मो रक्षति रक्षितः। तस्माद्धर्मो न हन्तव्यो मा नो धर्मो हतोऽवधीत्।। অর্থাৎ, ধর্মকে ধ্বংস করলে তা ধ্বংস করে; ধর্মকে রক্ষা করলে তা রক্ষা করে। অতএব, ধর্ম ত্যাগ করা উচিত নয়, পাছে পরিত্যক্ত ধর্ম আমাদের ধ্বংস করে দেয়।
ধর্ম কেবল ধর্মীয় আচারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি আমাদের অস্তিত্বের প্রতিটি দিককে স্পর্শ করে। এটি আমাদের সঠিক ও ভুলের মধ্যে পার্থক্য শেখায় এবং ন্যায়ের পথে চলতে অনুপ্রাণিত করে।