'রিভার অ্যাম্বাস্যাডর' প্রকল্পঃ কলকাতার ঘাটে পরিচ্ছন্নতা ও জীবনরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

ব্যুরো নিউজ,২৩ ফেব্রুয়ারি :কলকাতার প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী নদী ঘাটগুলিতে একটি বিশেষ উদ্যোগের মাধ্যমে নতুন একটি প্রকল্প চালু করা হয়েছে, যার নাম ‘রিভার অ্যাম্বাস্যাডর’। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ঘাটের শ্রমিকদের—যেমন হকার, নাপিত এবং ঝাড়ুদার—কে নিয়ে একটি নতুন প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। তারা এখন শুধু ঘাটের পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করবেন না, বরং ঘাটের ইতিহাসও তুলে ধরবেন এবং জীবনরক্ষা সংক্রান্ত কাজেও অংশগ্রহণ করবেন।সংবাদ মাধ্যম সূত্রের খবর  ঘাটে কর্মরত কর্মীরা সকালে থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন কাজ করেন, যেমন চা বা ঝালমুড়ি বিক্রি করা, সাফাই করা বা ক্ষৌরকর্ম করা। এই শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরে ঘাটের খুঁটিনাটি সম্পর্কে অভিজ্ঞ এবং নানা পরিবর্তনের সাক্ষী। এখন, তাদের ‘রিভার অ্যাম্বাস্যাডর’ হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে আহিরিটোলা ঘাট থেকে বাগবাজার মায়ের ঘাট পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায়।

ইউপি ওয়ারিয়র্সের প্রথম জয়, দিল্লি ক্যাপিটালসকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ল দীপ্তির দল

কৌশল শেখানো হচ্ছে

এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে, ঘাটের শতাব্দী প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে তাদের জানানো হচ্ছে এবং ঘাটের পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করার কৌশল শেখানো হচ্ছে। সাঁতার জানেন এমন কর্মীদের ডুবন্ত মানুষকে জীবনরক্ষা করার প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। কলকাতার ঘাটের আশেপাশে অনেক মানুষ সাঁতার না জানার কারণে জোয়ারের জলে ভেসে যান অথবা মানসিক চাপের কারণে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তাদের প্রাণ বাঁচানোর জন্যই এই প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।মঙ্গলবার চাঁপাতলা ঘাটে ১৬ জন চা বিক্রেতা ও নাপিত এই প্রশিক্ষণে অংশ নেন। তাদের একটি পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়েছে এবং প্রশিক্ষণকালীন সময়ের জন্য প্রতিদিন ১০০ টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এই সহায়তা পেয়ে তারা বেশ খুশি।

এই প্রকল্পের উদ্যোগী সংস্থার কর্ণধার লাইলি থম্পসন জানিয়েছেন, ‘চাঁপাতলা ঘাট থেকে এই পাইলট প্রজেক্ট শুরু হয়েছে। আগামী তিন বছরের মধ্যে ১০০ জন হকারকে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য, এই ঘাটগুলি ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তকমা পাবে। এজন্য পাঁচ বছরের একটি পরিকল্পনা রয়েছে।’এছাড়া, সি এক্সপ্লোরার ইনস্টিটিউট ও লিভিং ওয়াটার মিউজিয়ামের কলকাতা চ্যাপ্টারও এই প্রকল্পে যুক্ত রয়েছে। সি এক্সপ্লোরার ইনস্টিটিউটের সম্পাদক নীলেন্দ্র সরকার জানিয়েছেন, গত বছর হুগলি নদীতে ১৭৪ জন ডুবে মারা গিয়েছিলেন। সাঁতার জানা কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এই সংখ্যাকে কমানো সম্ভব হবে।

গ্রেস হ্যারিসের ঐতিহাসিক হ্যাটট্রিক, WPL-এ নতুন নজির গড়লেন অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার

লিভিং ওয়াটার মিউজিয়ামের সদস্য সুকৃত সেন জানিয়েছেন, ‘এই হকাররা দীর্ঘদিন ধরে এখানে কাজ করছেন, সেটাও একটা ইতিহাস। ভবিষ্যতে, আহিরিটোলা ঘাট, রথঘাট, মল্লিক ঘাট, চাঁপাতলা ঘাট, কুমোরটুলি ঘাট নিয়ে ইন্টার-অ্যাকটিভ মিউজিয়াম এবং বড় আকারে রিভার ফেস্টিভ্যাল করার পরিকল্পনা রয়েছে।’চা বিক্রেতা প্রদীপ দাস, যিনি ৩০ বছর ধরে এই ঘাটে কাজ করছেন, জানিয়েছেন, ‘ঘাটের চরিত্র কীভাবে বদলে যায়, তা আমি চোখের সামনে দেখেছি। এই উদ্যোগে আমরা খুবই খুশি।’এছাড়াও, কলেজ ছাত্র সুদীপ্ত রায় জানিয়েছেন, ‘এটা অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। হকারদের পরিচয়পত্রের মাধ্যমে আমরা তাদের চিনতে পারব এবং ঘাটের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারব।’এই অভিনব প্রকল্পের মাধ্যমে ঘাটের পরিচ্ছন্নতা, ইতিহাস সংরক্ষণ এবং জীবনরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ঘাটের কর্মীদের নতুন দায়িত্ব ও সম্মান প্রদান করা সম্ভব হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর