ব্যুরো নিউজ,১২ ডিসেম্বর:মায়ানমারের সেনাশাসক সরকার বড় সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে। মংডো শহরের শেষ সেনাঘাঁটি দখল করে নিয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। মায়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলের এই কৌশলগত শহরটি দখল করে তারা ২৭১ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের নিয়ন্ত্রণও নিজেদের হাতে নিয়েছে যা বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত। এর মাধ্যমে মংডো এবং তার আশেপাশের রাখাইন প্রদেশের সম্পূর্ণ এলাকা এখন আরাকান আর্মির অধীনে চলে গেছে।আরাকান আর্মির মুখপাত্র খাইং থুখা জানিয়েছেন, সেনাঘাঁটি দখল করার সময় মিয়ানমার সেনার কম্যান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরেইন তুনকে বন্দি করা হয়েছে। সেনাবাহিনী কিছু সেনা সদস্য প্রাণ বাঁচাতে পালানোর চেষ্টা করেছিল কিন্তু তখনই তাদের এক কমান্ডার বন্দি হয়। মংডো দখলের পর থেকে আরাকান আর্মি নাফ নদী পার হয়ে বাংলাদেশে পালানোর চেষ্টা করা সেনা এবং পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে।
সেডান গাড়ি থেকে উদ্ধার ১০০ কেজি গাঁজা, গ্রেফতার চালক
পরিস্থিতি কঠিন
আরাকান আর্মি, রাখাইন জনগণের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী।এই গোষ্ঠী ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা ত্বোয়ান মারত নাইং ছিলেন একজন ছাত্রনেতা। শুরুতে তারা কাজের জন্য পুরুষদের নিয়োগ করত এবং পরবর্তীতে কাচিন ইন্ডিপেনডেন্স আর্মি থেকে কিছু সময় আশ্রয়ও নিয়েছিল। ২০১৯ সালে রাখাইন প্রদেশের স্বাধীনতা দিবসে তারা কয়েকটি থানায় আক্রমণ চালায় এরপর থেকে মিয়ানমারের সেনা সরকারের সঙ্গে তাদের সংঘাত শুরু হয়।এই গোষ্ঠীটি মিয়ানমারের সেনা সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আসছে এবং বর্তমানে দেশের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের সেনা সরকার ক্ষমতা দখলের পর থেকে আরাকান আর্মি এবং অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলি সক্রিয়ভাবে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। সম্প্রতি ‘অপারেশন ১০২৭’ নামে এক অভিযানের মাধ্যমে তারা সেনা সরকারের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়াই শুরু করেছে।
‘স্পর্ধার চিৎকার’ঃ ১৪ ডিসেম্বর প্রতিবাদী জমায়েতের ডাক
আরাকান আর্মির জন্য রাখাইন প্রদেশের গুরুত্ব অনেক। এখানকার জ্বালানী, কাঁচামাল এবং বন্দরগুলো মিয়ানমারের জন্য অর্থনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মিয়ানমারের সেনা সরকার বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে না পারলে এই প্রদেশ পুরোপুরি তাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে যা দেশের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে।এই সংঘাতের ফলে ভারতের ‘কালাদান মাল্টিমোডাল প্রকল্প’ও বিপদের মুখে পড়েছে। কলকাতা থেকে মিয়ানমারের সিতোই বন্দরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী এই প্রকল্পটি রাখাইন প্রদেশের সামরিক সংঘাতের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে এবং বর্তমানে ‘মৃতপ্রায়’ অবস্থায় রয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে ভারতের সড়ক এবং সামুদ্রিক সংযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্য ছিল। যদিও আরাকান আর্মি এবং সেনা সরকার দাবি করছে ভারতীয় প্রকল্পটি বন্ধ করতে তাদের কোনো ইচ্ছা নেই, তবে পরিস্থিতি কঠিন হতে চলেছে।