লাবনী চৌধুরী, ১০ জানুয়ারি: দ্বিতীয়বার আমেরিকা সফরের আগে কী বলেছিলেন বীর সন্ন্যাসী?
১৮৯৩ সালে কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কার উপলক্ষ্যে আয়োজিত হয়েছিল দ্যি কলম্বিয়ান এক্সপোজিশন। সেই মেলার অন্যতম অনুষ্ঠান হিসেবে ছিল বিশ্বধর্ম সম্মেলন। তাতে ১০টি ধর্ম অংশগ্রহণ করেছিল। সেখানে হিন্দু ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করেন স্বামী বিবেকানন্দ।
জীবনের বহুবিধ বাধা অতিক্রম করে রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের সান্নিধ্যে এসে নরেন্দ্রনাথ হয়ে ওঠেন বীর সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ। তাঁর জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা এটি। শিকাগোর বিশ্ব ধর্ম সম্মেলেন ছিল বিবেকানন্দের বিশ্ববন্দিত বিবেকানন্দ হয়ে ওঠার মঞ্চ। যার মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে হিন্দু ধর্মকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ভারতের বীর সন্ন্যাসী।
স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে শিকাগোয় অনুষ্ঠিত বিশ্বধর্ম মহাসম্মেলনে ভারত ও হিন্দুধর্মের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। এরপর তিনি দ্বিতীয়বার আমেরিকা সফর করেন ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে। সেবার আমেরিকা যাত্রার আগে ১৯ জুন সন্ধ্যায় স্বামী বিবেকানন্দ বেলুড়মঠে তরুন সন্ন্যাসী ও শিষ্যগণের সভায় একটি সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দেন। সেই বক্তৃতার বিষয়বস্তু ছিল, ‘সন্ন্যাসীর আদর্শ ও তৎপ্রাপ্তির সাধন’।
বক্তৃতাকালে স্বামীজী বলেন, “ত্যাগ সম্বন্ধে সুদীর্ঘ বক্তৃতা দিবার সময় এখন নাই, আমি সংক্ষেপে উহার লক্ষণ নির্দেশ করিতে চাই; মৃত্যুকে ভালোবাসো।”
এই কথাটি শুনে যে কেউ অবাক হতেই পারেন। অনেকের মনে উদয় হতে পারে এই প্রশ্ন যে, মৃত্যুকে ভালোবাসার অর্থ কি? মানুষকে ভালবাসার অর্থ পরিষ্কার। তবে মৃত্যুকে কীভাবে ভালবাসতে হইবে?
মৃত্যুকে ভালোবাসার অর্থ ও তাৎপর্য বিশ্লেষণ করেছেন স্বামীজী নিজেই। তিনি বলেছেন, সাংসারিক ব্যক্তি জীবন ভালবাসে, সন্ন্যাসীকে মৃত্যু ভালোবাসিতে হইবে।
জন্মগ্রহণ করলে মৃত্যু নিশ্চিত, এটাই জীবনের নিয়ম। তাই ” আমাদিগকে মরিতে হইবে, ইহা অপেক্ষা ধ্রুব সত্য কিছুই নাই; তবে আমরা কোনও মহৎ, সৎ উদ্দেশ্যের জন্য কেন দেহপাত করি না?” এই প্রশ্নও তিনি সকলের কাছে উন্মোচন করেন। সকলের মনে এই মহৎ ভাবাদর্শের উদয় করান যে, “আমাদের সকল কাজ-আহার, বিহার, অধ্যায়ন প্রভৃতি, যাহা কিছু করি সব যেন আমাদিগকে আত্মত্যাগের অভিমুখী করিয়া দেয়।”
প্রত্যেক মানুষের জীবনে মৃত্যু অনিবার্য, কিন্তু মহৎ কাজের মাধ্যমে যখন মানুষ ভালোবেসে তাকে (মৃত্যুকে) আহ্বান করে, আত্মত্যাগ করে, সেই মহৎ কাজের লক্ষ্যে জীবন উৎসর্গ করে তখন তা হয়ে ওঠে ‘মহামৃত্যু’। অর্থাৎ আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে কোনও মহৎ উদ্দেশ্যে মৃত্যুকে আহ্বান করার কথাই তিনি বলে ছিলেন। ইভিএম নিউজ