ব্যুরো নিউজ, ১৩ ডিসেম্বর: নার্সিংহোমের বিল বকেয়া | টাকা মেটাতে হন্য হয়ে দুয়ারে মা ও শাশুড়ি
চলন্ত ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে ভেঙে যায় পা। কাটা পড়ে আঙ্গুল! নার্সিংহোমের বিল না মেটাতে পারার জন্য নার্সিংহোম থেকে ছাড়া পাচ্ছেন না পরিযায়ী শ্রমিক। বকেয়া বিলের টাকা জোগাতে দুয়ারে দুয়ারে সাহায্যের আবেদন অসহায় শাশুড়ি ও মায়ের। জামাইকে নার্সিংহোম থেকে বাড়ি ফেরাতে দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে সাহায্যের আবেদন শাশুড়ি ও মায়ের। এমনি এক করুন চিত্র ধরা পড়েছে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পিপলা গ্রামের বাসিন্দা তথা হতদরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিক বছর ৪০- এর গণেশ দাস প্রায় এক মাস আগে ভিন রাজ্য দিল্লি থেকে দাদন খেটে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে মালদা রেলওয়ে স্টেশনে ভুল ট্রেনে উঠে পড়েন তিনি। বাড়ির নিকটবর্তী হরিশ্চন্দ্রপুর রেলওয়ে স্টেশনে সেই ট্রেনের স্টপেজ না থাকার কারণে চলন্ত ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে ঘটে বিপত্তি। গণেশ দাসের একটি পা ফ্র্যাকচার হয়ে যায় ও দুটি আঙ্গুল কাটা পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এরপর অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে স্থানীয় সরকারি হাসপাতাল থেকে রেফার করা হয় জেলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেও সঠিক চিকিৎসা না হওয়ার ফলে পার্শ্ববর্তী রাজ্য বিহারের পুর্নিয়ার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে তার পরিবারের লোকেরা ওই পরিযায়ী শ্রমিককে নিয়ে যায়।
দীর্ঘ একমাস চিকিৎসার পর সেই শ্রমিক সুস্থ হয়ে যায়। এরপর নার্সিংহোমের বিলের টাকা চোখে পড়তেই কার্যত চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার যোগাড় ওই পরিবারের। লক্ষাধিক টাকা বিল হয় ওই শ্রমিকের চিকিৎসার ফলে। বিল না মেটাতে পারায় ওই পরিযায়ী শ্রমিককে নার্সিংহোম থেকে ছুটি দিচ্ছে না নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ বলে অভিযোগ। তাই বকেয়া বিলের টাকা জোগাড় করতে হন্যে হয়ে দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছে ওই শ্রমিকের শাশুড়ি ও মা। স্থানীয় পঞ্চায়েত নেতা ও জন-প্রতিনিধিদের কাছেও গিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু তাদের কাছ থেকে শুধু প্রতিশ্রুতি ছাড়া কোন সাহায্য মেলেনি।
এলাকাবাসী,ছোট ব্যবসায়ী ও স্থানীয় পুলিশ অর্থ সাহায্য করলেও সেই অর্থ বকেয়া বিলের থেকে অনেকটাই কম। কার্যত অসহায় অবস্থা পরিযায়ী শ্রমিকের পরিবারের। স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের আবেদন করলেও স্বাস্থ্য সাথী কার্ড পাননি ওই শ্রমিক বলে অভিযোগ।
এদিকে এই ঘটনা সামনে আসতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিজেপির অভিযোগ, স্বাস্থ্য সাথী কার্ড হল রাজ্য সরকারের ভাঁওতাবাজি। যদি রাজ্যের মানুষ কেন্দ্রের আয়ুষ্মান যোজনার সুবিধা পেত তবে এমন অবস্থা হতো না। যদিও এই ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করা নিম্নরুচির সমান এমনটাই দাবী তৃণমূলের। তৃণমূলের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে পাশে থাকার। আবার রাজ্যের কর্মসংস্থান সমস্যা নিয়ে সুর চড়িয়েছে কংগ্রেস। তবে এখন প্রশ্ন গণেশ দাসের পরিবার কি বাস্তবে সাহায্য পাবে? কবে বাড়ি ফিরবে গনেশ? বাবার ফেরার অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে রয়েছে গনেশের দুই নাবালক সন্তান। ইভিএম নিউজ