গ্রেফতার

ব্যুরো নিউজ, ৯ ডিসেম্বর: গ্রেফতার বালু আশা-আশঙ্কায় দিন গুনছেন

ছিলেন নেহাতই সাদামাটা তৃণমূল নেতা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছের লোক বলেই ১৯৯৬ সাল থেকে পরিচিতি। আর এহেন বালু তথা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ২০১১ র পর মন্ত্রিত্ব পেয়ে হয়ে গেলেন ‘হুলো বেড়াল’। রাজ্যের শাঁসালো খাদ্য দফতর হাতে পেয়ে তিনি কার্যত ধরা কে সরা মনে করতে শুরু করে ছিলেন। কারণ আকটাই তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত তাঁর মাথার ওপরে ছিল। বালু কংগ্রেস ভেঙে মমতার তৃণমূল গড়ার প্রথম দিন থেকেই নেতৃর ছায়াসঙ্গী। পলিস্টিকের বাড়িতে থাকার কালে ছাত্র জীবনে ছাত্র পরিষদের হয়ে গলা ফাটাতেন ও আড্ডা দিতেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের লেকে। দাদা ডাক্তার। ফলে আর্থিক অবস্থা ছিল খুবই সচ্ছল। কিন্তু, মানসিকতা? তা নিয়ে যে সংশয় তার বন্ধুবান্ধবের ছিল সেতাই ফুতে উঠেছিল মন্ত্রীর চেয়ারে বসার পর।  খাদ্য দফতরে যে বিপুল হারাফেরির সুযোগ আছে তা বুঝে উঠতে বিশেষ সময় লাগেনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পেয়েরের’ বালুর। আর বেআইনি রোজগার ‘সালটাতে’ বন্ধুত্ব তৈরি করেছিলেন এক আইনজীবীর সাথে। নানা ঠিকাদারদের সঙ্গে নিয়িমিত গভির রাতে বৈঠকে বসাও অভ্যাস করে ছিলেন উচ্চারণে ‘স’-এর দোষ থাকা বালু।

টাটাদের আই ফোন, কারখানা বাংলায় নয়

মন্ত্রীর চায়ারে বসে ঘুঁটি সাজিয়েছিলেন নিপুনভাবে। বরাবরই চাতুর্য আর ছক কষায় বালুর জুড়ি ছিল না। মমতার সমস্ত আন্দলনে প্রথম সারিতে ছিলেন বালু। সেই সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে নেত্রীর মনিকোঠায় স্থান করে নিয়েছিলেন। বাম আমলে পূর্ব কলকাতার ইএম বাইপাসের ধারে যুব ভারতী ময়দান সংলগ্ন একটি হোটেল নির্মাণে বাঁধা দেওয়ার সময় তার দিকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে ছিলেন  আইপিএস রচপাল সিং। সে সময় একটি চলন্ত বাসে ক্ষিপ্র গতিতে উঠে প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন বালু। কিন্তু, বিধির লিখন অবসরের পর সেই রচপালের সঙ্গে তিনিও মন্ত্রিত্ব করে ছিলেন। গিলতে হয়েছিল নেত্রীর সিদ্ধান্ত। কিন্তু কই করা যায়? দলে তো একটাই পোস্ট বাকিরা ‘ল্যাম্পপোস্ট’। তাই যন্ত্রের মতো নিরবে দাড়িয়ে আলো দিয়েছেন বালু। নেত্রী যখনই সুইচ অফ করেছেন তকনই আলো নিভেছে। কিন্তু, নেত্রীর ‘গুড বুকে’ থাকা বালুর দলের প্রথম সারিতে থাকে কোনও দিনই আটকায়নি।

কিন্তু, দলের অনেকেই শুধু নয়, খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বুঝতে পারেননি যে, নরেন্দ্র মোদী অন্য ধাতুতে গড়া। বাচপেয়ির আমলে প্রধানমন্ত্রীর আফুরন্ত ‘স্নেহ ও প্রশ্রয়’ পেয়েছিলেন মমতা। ভেবে ছিলেন, তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির সক্ষতা অটুট থাকবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা অনেকবারই হুশিয়ারি দিয়েছিলেন যে, মমতাকে শান্তিতে থাকতে দেবেন না বিজেপি। তৃণমূল নেতা, বিধায়ক, মন্ত্রীদের সীমাহীন লোভ মোদীকে সুযোগ করে দিল কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার। সারদা, নারদ, রজভ্যালি বহু চিটফান্ডের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক গুছিয়ে প্রচার শুরু করেছে বিজেপি। সেই সঙ্গে কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের দায়ের করা মামলায় চালু হওয়া সিবিআই তদন্ত ভাবিয়ে তুলেছে মমতাকে। আর্থিক কেলেঙ্কারি এতটাই বাড়ছে যে ইডির হস্তক্ষেপে ক্রমশই চিন্তার জল মাথার ওপর দিয়ে বইতে শুরু করেছে। শিক্ষা দুর্নীতিতে বিরোধী আক্রমণে জেরবার তৃণমূল এবার খাদ্য দফতরের কেলেঙ্কারিতে ত্রাহি ত্রাহি ডাক ছাড়ছে। আর এর মধ্যেই গত ২৬ অক্টোবর হঠাৎ বালুর সল্টলেকের বাড়িতে ইডি সারা রাত তল্লাশির পর ২৭ অক্টোবর সকালেই গ্রেফতার হয় বালু। ২১ ঘণ্টা টানা জেরায় কাহিল হয়ে গিয়েছিল বালু। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সিজিও কমপ্লেক্সে।

গ্রেফতারের কয়েক সপ্তাহ আগে জন সভায় বলেছিলেন ইডি, সিবি আই, আইটি কেউ তার কেশাগ্র ছুতে পারবে না, আর তাঁদের চিঠি হাতে এলে সে সব তিনি থুতু দিয়ে তিনি ছুড়ে ফেলে দেবেন। কিন্তু, বিধি বাম। সেই ইডি তাকে গ্রেফতার করেছে। যে স্ত্রী -কন্যার সঙ্গে শান্তিতে দিন কাটিয়ে ছিলেন, সেখানে আর রাত কাটাতে পারছে না। একা জেলের ভাত খাচ্ছেন। এবার শুরু করেছেন নানা অভিনয়। ইডির জিম্মায় তিনি কখনও অজ্ঞান হওয়ার ‘ভান’ করছেন, আবার কখনও বলছেন আমার পক্ষাঘাত হয়ে যাচ্ছে। সুগার ছাড়া আর কোনও রোগ লক্ষন পায়নি ইডি। ফলে খাদ্য ভবনের সেই সুখের দিন আর নেই, পরে বন দফতরে যাওয়া অরন্যের রাম রাজত্ব বালুর নেই। সামাজিক মান-সম্মান সবই লুটিয়েছে। প্রথম দিকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন বালুর কিছু হলে ছাড়ব না। কিন্ত ওই পর্যন্তই। এরপর কে কার ঝাড়ে বাঁশ কাটে? বালু উল্টে বলে দিলেন, মমতা- অভিষেক সব জানে। তিনি সব বলেছেন, এখন তিনি মুক্ত। কিন্তু, তার হাতে আর এখন ইডি, সিবি আই, আইটির চিঠি নেই। আছে শুধু ইডির অদৃশ্য ‘হ্যান্ডকপ’ আর একা নিশি যাপন। সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘যক্ষের নিবেদনে’ নির্বাসিত যক্ষ স্ত্রীর কাছে খবর পাঠাতে মেঘকে দূত হিসাবে পাঠিয়ে ছিলেন। কিন্তু ‘বেচারা’ বালুর এতো খারাপ অবস্থা নয়। হাসপাতালে বাড়ির খাবার পাচ্ছেন। টিউশন করে প্রায় ৪ কোটি রোজগার কোরা মেয়ে ও চাকরী না করা বিপুল টাকা ও সম্পত্তির অধিকারী বউয়ের  সঙ্গে দেখা করতে পাচ্ছেন। কিন্তু ছাড়া পাবেন কবে? কুনালের মতো সারে ৩ বছর পরে? না ৭ বছর পর? রাম জানে। ইভিএম নিউজ 

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর