দশভূজা

রাজীব ঘোষ, ২২ অক্টোবর: হেঁশেল সামলে দশভূজার মুখোশ গড়ে স্বনির্ভর দশভূজারা

দশভূজার আরাধনায় মেতে উঠেছে সারা বাংলা। আর ঠিক সেই সময়েই রান্নাবান্না থেকে শুরু করে সংসারের সমস্ত দৈনন্দিন কাজ সামলে রীতিমতো টাকা উপার্জন করছেন সংসারের দশভূজারা।

সকাল থেকেই পুজোর তোরজোড় শোভাবাজার রাজবাড়ীতে 

হ্যাঁ, এই এলাকার গৃহবধূরা এক একজন দশভূজা। এই দুর্গাপুজোর সময়ে তারা রীতিমতো মোটা টাকা উপার্জন করছেন। তাও আবার নিজের সংসারের রান্নাবান্না থেকে শুরু করে সন্তানদের লালন পালন, প্রাত্যহিক সমস্ত কাজকর্ম সামাল দিয়ে নিজের হাতের কাজের মাধ্যমে মোটা টাকা আয়ের মুখ দেখছেন। পুজোর মরশুমে তাই পুরুলিয়ার বাগমুন্ডি ব্লকের অযোধ্যা পাহাড় এলাকার চড়িদা গ্রামের বধুরা মা দুর্গার মুখোশ বিক্রি করে পুজোর মরশুমে রীতিমতো স্বনির্ভর হয়ে উঠেছেন।

এমনিতেই পুরুলিয়ার চড়িদা গ্রাম বিখ্যাত ছৌ নৃত্য শিল্পের মুখোশ তৈরীর জন্য পরিচিত। এখানে প্রায় অধিকাংশ বাড়িতেই ছৌ নাচের মুখোশ তৈরি করা হয়। শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ বা দেশের অন্দরে নয়, বিদেশেও সমানভাবে এখানকার মুখোশের চাহিদা রয়েছে। যে কোনো এলাকা থেকে পর্যটকরা আসলেই এই পুরুলিয়ার চড়িদা গ্রামে আসেন এবং সেখান থেকে ছৌ নৃত্যের মুখোশ সংগ্রহ করে থাকেন। আর সেই শিল্পকলাকে কাজে লাগিয়েই বাড়ির গৃহবধূরাই হয়ে উঠেছেন এক একজন দশভূজা।

এদিক ওদিক খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেল, পুরুলিয়ার চড়িদার গ্রামে ছৌ নাচের মুখোশের প্রচুর দোকান বা স্টুডিও রয়েছে। সেখানে পরিবারের পুরুষ সদস্যের সঙ্গে মহিলারাও সহযোগিতা করেন। আর এবার শুধু সহযোগিতা নয়, রীতিমতো ছৌ নাচের মুখোশ নিজেরাই তৈরি করে দোকানে বিক্রি করে বা পর্যটকদের মাধ্যমে বিক্রি করে কম বেশি মাসে ২৫ হাজার টাকার উপরে আয় পর্যন্ত করছেন।

এবারের পুজোয় অযোধ্যা পাহাড়ের চড়িদা গ্রামের রুবি এবং গঙ্গা দেবী নামে দুই মহিলার হাতে তৈরি ১২০ টাকা দামের মা দুর্গার ছোট মুখোশ পর্যটকদের হাতে রীতিমতো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চড়িদার এরকমই এক গৃহবধূ জানালেন, তিনি বিয়ে হওয়ার পরে এই গ্রামে এসে স্বামীর কাছ থেকেই মুখোশ তৈরীর এই শিল্পের কাজ শিখেছেন। বর্তমানে তিনি মুখোশের একটি দোকান দিয়েছেন। সংসারের সমস্ত কাজ সামলে রেখে তারপর তিনি এই মুখোশ তৈরি করে বিক্রি করেন। তিনি নিজেই জানালেন, অনেকেই তাদের দশভূজা বলে। কিন্তু দশভূজা কিনা তারা তা জানেন না। সংসারের নিত্য প্রয়োজন মেটানোর জন্য তারাও যদি কিছু করে একটু আয় করা যায়, সেই চিন্তা-ভাবনা থেকেই স্বনির্ভর হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। বর্তমানে পুজোর সময় প্রতিদিন কম বেশি ২ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়ে যায়।

এরকমই আরেক গৃহবধূ জানালেন, তার প্রায় ২৮ বছর হলো বিয়ে হয়ে গিয়েছে। চড়িদা গ্রামে এসে দেখেন সকলেই মুখোশ তৈরি করেন। আর তারপর তিনিও সেই কাজ শিখে নিয়েছেন। এবার পুজোয় মা দুর্গার ছোট মুখোশ বিরাট পরিমানে বিক্রি হচ্ছে। আর তাই তারাও সংসারের সমস্ত কাজ সামলে মুখোশ তৈরির কাজে হাত লাগিয়ে মাসের শেষে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন। এই প্রসঙ্গে তাদের একটিই বক্তব্য, গ্রামের আরও মেয়েদের বলবো, আমাদের মত ছৌ মুখোশ তৈরি করে তোমরাও স্বনির্ভর হও। ইভিএম নিউজ

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর