ব্যুরো নিউজ ২১ জুলাই ২০২৫ : আজ ৬ই শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, শ্রাবণ মাসের প্রথম সোমবার। এই পবিত্র শ্রাবণ মাস ভগবান শিবের আরাধনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বাস করা হয়, শ্রাবণ মাসে মহাদেবের মন্ত্র জপ করলে সকল প্রকার দুঃখ-কষ্ট দূর হয় এবং জীবনের বড় বড় সংকট থেকেও মুক্তি মেলে। শাস্ত্রজ্ঞরা মনে করেন, মহাদেবের কিছু মন্ত্র এতটাই শক্তিশালী যে, নিয়মিত ও নিষ্ঠার সাথে জপ করলে তা মৃত্যুভয়ও দূর করতে পারে। মহাদেবের ১০টি মহাশক্তিশালী মন্ত্র এবং তাদের অর্থ নিচে দেওয়া হলো, যা আপনার জীবনকে আধ্যাত্মিক শক্তি ও শান্তি এনে দেবে।
মহাদেবের ১০টি শক্তিশালী মন্ত্র ও তাদের তাৎপর্য
১. মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র
“ওঁ ত্র্যম্বকং যজামহে সুগন্ধিং পুষ্টিবর্ধনম্। উর্বারুকমিব বন্ধনান্ মৃত্যোর্মুক্ষীয় মামৃতাত্।।”
অর্থ: আমরা তিন চক্ষুবিশিষ্ট ভগবান শিবের পূজা করি, যিনি সুগন্ধযুক্ত এবং পুষ্টি বর্ধনকারী। যেমন একটি পাকা ফল গাছের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়, তেমনই তিনি যেন আমাদের মৃত্যু ও সংসারের বন্ধন থেকে মুক্ত করে অমরত্ব দান করেন।
২. শিব গায়ত্রী মন্ত্র
“ওঁ তত্পুরুষায় বিদ্মহে মহাদেবায় ধীমহি তন্নো রুদ্রঃ প্রচোদয়াৎ।”
অর্থ: আমরা সেই পরম পুরুষ, মহাদেবের ধ্যান করি, যিনি রুদ্র রূপে বিরাজমান। সেই রুদ্রই যেন আমাদের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দান করে।
যারা আপনাকে বোঝে না, তাদের সাথে কীভাবে চলবেন? শিবের ৪টি শিক্ষা
৩. দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ স্তোত্র
“সৌরাষ্ট্রে সোমনাথং চ শ্রীশৈলে মল্লিকার্জুনম্। উজ্জয়িন্যাং মহাকালং ওঙ্কারং মামলেশ্বরম্।। পরল্যাং বৈদ্যনাথং চ ডাকিন্যাং ভীমশঙ্করম্। সেতুবন্ধে তু রামেশং নাগেশং দারুকাবনে।। বারাণস্যাং তু বিশ্বেশং ত্র্যম্বকং গৌতমীতটে। হিমালয়ে তু কেদারং ঘুশ্মেশং চ শিবালয়ে।। এতানি জ্যোতির্লিঙ্গানি সায়ং প্রাতঃ পঠেন্নরঃ। সপ্তজন্মকৃতং পাপং স্মরণেন বিনশ্যতি।।”
অর্থ: সৌরাষ্ট্রে সোমনাথ, শ্রীশৈলে মল্লিকার্জুন, উজ্জয়িনীতে মহাকাল, ওঙ্কারেশ্বরে মামলেশ্বর, পরলিতে বৈদ্যনাথ, ডাকিনীতে ভীমশঙ্কর, সেতুবন্ধে রামেশ্বরম, দারুকাবনে নাগেশ্বর, বারাণসীতে বিশ্বনাথ, গোদাবরীর তীরে ত্র্যম্বকেশ্বর, হিমালয়ে কেদারনাথ এবং শিবালয়ে ঘুশ্মেশ্বর। যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা এই জ্যোতির্লিঙ্গগুলির নাম স্মরণ করে, তার সাত জন্মের পাপ বিনষ্ট হয়।
৪. বিল্বপত্র অর্পণ মন্ত্র
“দর্শনং বিল্বপত্রস্য স্পর্শনং পাপনাশনম্, অঘোরপাপ-সংহারং বিল্বপত্রং শিবাপর্ণম্।”
অর্থ: বিল্বপত্র দর্শন ও স্পর্শ করলে সমস্ত পাপ নাশ হয়। আমি এই বিল্বপত্র ভগবান শিবকে অর্পণ করছি আমার সকল পাপ বিনাশের জন্য।
৫. অঘোর মন্ত্র
“সর্বেভ্যঃ সর্ব সর্বেভ্যো নমস্তে’স্তু রুদ্র রূপেভ্যঃ।”
অর্থ: সকল রুদ্র রূপধারী (ভগবান শিব) কে প্রণাম, যিনি সকল ভয়ংকর রূপের ঊর্ধ্বে।
৬. লঘু রুদ্র মন্ত্র
“ওঁ নমো ভবায় সর্বায় রুদ্রায় বরদায় চ, পশূনাং পতয়ে নিত্যম্ উগ্রায় চ কপার্দিনে।”
অর্থ: আমি ভগবান শিবকে প্রণাম করি, যিনি সকল সৃষ্টির উৎস, সকল দুঃখের বিনাশকারী, সকল প্রাণীর রক্ষক, চিরন্তন উগ্র এবং জটাবিশিষ্ট।
৭. শিব ধ্যান মন্ত্র
“কর-চরণ-কৃতং বাক্-কায়জং কর্মজং বা শ্রবণ-নয়ন-জং বা মানসং বাপরধম্। বিহিতং অবিহিতং বা সর্বমেতত্ ক্ষমস্ব জয় জয় করুণাব্ধেশ্রী মহাদেব শম্ভো।।”
অর্থ: শরীর, মন ও আত্মাকে সকল প্রকার চাপ, ব্যর্থতা, হতাশা এবং অন্যান্য নেতিবাচক শক্তি থেকে মুক্ত করে শুদ্ধ করার জন্য পরম সত্তার প্রতি নিবেদন। হে করুণাসাগর, মহাদেব শম্ভু, আমার হাত, পা, কথা, শরীর, কর্ম, চোখ, কান এবং মন দ্বারা কৃত সকল অপরাধ, যা বিধি অনুসারে হোক বা না হোক, সবকিছু ক্ষমা করুন। আপনার জয় হোক!
৮. তীক্ষ্ণ বুদ্ধির জন্য শিব মন্ত্র
“ওঁ নমো ভগবতে দক্ষিণামূর্তয়ে মহ্যং মেধাম্ প্রয়চ্ছ স্বাহা।”
অর্থ: হে ভগবান দক্ষিণামূর্তি, আপনাকে প্রণাম জানাই, আমাকে বুদ্ধি ও জ্ঞান দান করুন।
Sawan Somvar Vrat : প্রথম শ্রাবণ সোমবারে ব্রত পালনে যে ৫টি ভুল এড়িয়ে চলবেন
৯. শিব মন্ত্র
“মৃত্যুঞ্জয়ায় রুদ্রায় নীলকণ্ঠায় শম্ভবে অমৃতেশায় সর্বায় মহাদেবায় তে নমঃ।”
অর্থ: হে মৃত্যুঞ্জয়, রুদ্র, নীলকণ্ঠ (যিনি বিষ পান করে নীল হয়েছেন), শম্ভু, অমৃতের ঈশ্বর, সর্বস্বরূপ, মহাদেব, আপনাকে প্রণাম।
১০. পঞ্চাক্ষর মন্ত্র
“ওঁ নমঃ শিবায়”
অর্থ: আমি ভগবান শিবকে প্রণাম করি।
উপসংহার
এই পবিত্র শ্রাবণ মাসে, বিশেষ করে প্রতি সোমবারে, বিশুদ্ধ দেহ এবং চিত্তে , এই মন্ত্রগুলি নিষ্ঠার সাথে জপ করে আপনি মহাদেবের বিশেষ কৃপা লাভ করতে পারেন। আপনার সকল বিপদ দূর হোক এবং জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসুক।