ব্যুরো নিউজ, ২৬ জানুয়ারি: ৪৪ বছরে শিক্ষকতার চাকরি দৃষ্টিহীন নীলরতনের
২ বছর বয়সে হামে আক্রান্ত হওয়ার পরেই রোগের কারণে দু’চোখের দৃষ্টিশক্তি চলে যায় নীলরতন বালার। তবুও হাল ছাড়েনি পরিবার। পরিবারের উদ্যোগে লেখাপড়া চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। অনেক যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধ করতে করতে একদিন টেট পরীক্ষাও পাশ করে ফেলেন। নীলরতন বালা, প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক হওয়ার জন্য চাকরির পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তাতেও সসম্মানে উতরে যান। তবে ছোটবেলা থেকে যে যুদ্ধটা চালিয়ে যাচ্ছিলেন বড় হয়েও তা থামেনি। নানা কারণে শিক্ষকতার চাকরিটা জোটেনি। এই করতে করতে যৌবন শেষে এখন পার হয়ে গিয়েছে ৪৪ বসন্ত। দৃষ্টিহীন মানুষটি ১৫ মিনিটের পথ লাঠি হাতে হেঁটে এখন স্কুলে যাচ্ছেন রোজ। সেখানে তিনি শিক্ষকতা করেন। হাবড়ার কাশীপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কাছে তার এক চিলতে বাড়ি। সেখানে থাকেন স্ত্রী অন্নপূর্ণা। তিনিও দৃষ্টিহীন। নীলরতন চোখে দেখতে পান না। তিনি বলেন, ‘এখনও অনেকটা পথ বাকি। আমার কোনও ছাত্রছাত্রী যদি ভালো ফল করে বিদ্যালয়ের নাম উজ্জ্বল করে, তবেই আমার স্বপ্ন সফল হবে’। মাস গেলে বেতন জুটছে বলে সংসারে খানিক শ্রী ফিরেছে। এখন আর তাকে ট্রেনে ধূপকাটি বিক্রি করতে হচ্ছে না।
শেখ শাহজাহান সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য মন্ত্রী অখিল গিরির
নীলরতন জানান, ২০১০ সালে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। সে পরীক্ষা বাতিল হয়। ২০১২ সালে ফের পরীক্ষায় বসেন। তার প্যানেল প্রকাশ হয় ২০১৪ সালে। প্যানেলে নামও ছিল। কিন্তু একাধিক জটিলতায় নিয়োগ আটকে যায়। তারপর আদালতে মামলা। চাকরির জন্য লাগাতার লড়াই করতে করতে আন্দোলনের শরিক হয়ে যান দৃষ্টিহীন মানুষটি। ২০২১ ও ২০২২ সালে প্যানেল ভুক্তদের নিয়োগ দিয়েছিল শিক্ষাদপ্তর। কিন্তু তাঁর চাকরি জোটেনি। এই পর্যায় সংসার টানতে ট্রেনে ধূপ বিক্রি করেছেন নীলরতন। খদ্দের টানতে গান গাইতেন কামরায় ঘুরে ঘুরে। গলাটা সুরেলা। ফলে গান শোনার ফাঁকে ধূপকাঠিও কিনে নিতেন ক্রেতারা। সে উপার্জনের টাকায় চাল-ডাল-ওষুধ। মামলার খরচ। জীবন চলত খুঁড়িয়ে। পরবর্তীকালে ব্যাঙ্কশাল আদালতে মামলার পর কপাল ফেরে। ২০২৩ সালে চাকরি পান নীলরতন। তিনি ক্লাসে পড়ানোর সময় ব্রেইল পদ্ধতির সাহায্য নেন। ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের চোখে বইয়ের সঙ্গে তা মিলিয়ে নেয়। বোর্ডে লেখার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হয়। ক্লাসের কোনও পড়ুয়া তার হয়ে লিখে দেয় বোর্ডে। ইভিএম নিউজ