ইভিএম নিউজ, ২৩ ফেব্রুয়ারিঃ সোশ্যাল মিডিয়া আর ছোট্ট একটা সেফটিপিন। ব্যস্, এই দুটো হাতিয়ার দিয়ে মোটরবাইক চুরির রমরমা চক্র চালাচ্ছিল, একদল কিশোর। আর তাঁদের এই চক্রের সহযোগিতা করছিল, বয়সে বড় কয়েকজন তরুণ। আর সেই সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রেখেই ঘটনার কিনারা করল হাওড়া থানার পুলিশ। ধরা পড়ল একাধিক কিশোর বাইকচোর।
পুলিশসূত্রে খবর, সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিনরাজ্যের দুই ব্লগারের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। সেই ভিডিওতে তারা শেখান স্কুটার ও মোটরবাইকের চাবি হারিয়ে গেলে কীভাবে সেফটিপিনের সাহায্যে গাড়ির লক খুলতে হয়। আর এই ভিডিওকেই সাহারা বানিয়ে হাওড়ায় তৈরি হয়েছিল বাইক চুরির একটি চক্র। এই চক্রের সদস্যরা বেশিরভাগই তরুণ ও কিশোরের দল। ওই ভিডিও মারফৎ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়েই এই চক্র চালাত তারা। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই সেফটিপিনের সাহায্যে স্কুটার বা মোটরবাইকের লক খুলে গাড়ি নিয়ে চম্পট দিত লুঠকারিরা। সম্প্রতি শিবপুর থানার অন্তর্গত এলাকায় একটি স্কুটার চুরির খবর পায় পুলিশ। সেই ঘটনারই তদন্তে নেমে হাওড়া পুলিশের হাতে আসে এমন অভিনব কায়দায় চুরির কার্যকলাপ।
হাওড়া সিটি পুলিশ সূত্রে খবর, সম্প্রতি শিবপুরের ধর্মদাস গাঙ্গুলি লেনের এক বাসিন্দা স্কুটার চুরির অভিযোগ জানায়। ওই বাসিন্দার নাম রাজন কুমার বর্মা। রাজনবাবুর অভিযোগ, তাঁর বাড়ির সামনেই স্কুটারটি চাবি দিয়ে লক করে রেখেছিলেন। লক করা সত্ত্বেও সেটি কী করে চুরি হয়ে যায়? এই ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ। সেই এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সন্দেহভাজন দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃত বছর পনেরোর ওই কিশোরকে হোমে পাঠানো হয় এবং শেখ আবিদ আলি নামে ১৮ বছরের ওই তরুণকে আদালতের নির্দেশে পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে।
পুলিশি জেরায় ধৃত আবিদ জানায়, বাইক চুরির এই চক্রটি তৈরি হয়েছে ভিন্ রাজ্যের ওই দুই ব্লগারের তৈরি ভিডিয়ো দেখেই। সেই ভিডিয়ো দেখার পরে উলুবেড়িয়া এবং বাগনান এলাকার তরুণ ও কিশোর ছেলেদের নিয়ে আয়োজিত হয় একটি প্রশিক্ষণ শিবিরও। সেখানে কয়েক মাস প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরে চক্রটি কাজ করতে শুরু করে। সেই জিজ্ঞাসাবাদেই পুলিশ আরও জানতে পারে এই চক্রের মূল মাথা এই আবিদই। কীভাবে চলত এই চক্র?
পাঁচলার ওই কিশোর তার তরুণ সঙ্গীদের সঙ্গে নিয়ে রোজ সকালে ট্রেনে করে হাওড়া আসত। তারপরেই হাওড়া স্টেশন লাগোয়া এলাকায় শিবপুর, ব্যাঁটরা, গোলাবাড়ি চত্বরের রাস্তায় কিংবা বাড়ির সামনে বা গলির মধ্যে দাঁড় করানো স্কুটার ও বাইক চুরির কাজ চালাত। চুরি করা সেই বাইকগুলি জমা করা হত এই চক্রের মূল পান্ডাদের জিম্মায়। এই পাণ্ডারা আবার সেই বাইকগুলি বিক্রি করে যা টাকা পেত তা আবিদদের মতো সদস্যের কাছে পৌঁছে যেত। এইভাবেই এই চক্র দিনের প দিন চলত।
এই প্রসঙ্গে, হাওড়া সিটি পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ধৃতদের থেকে দু’টি বাইক ও দু’টি স্কুটার উদ্ধার হয়েছে। চুরি যাওয়া আরও বাইক উদ্ধারের জন্য তল্লাশি চলছে। এই ধরনের চুরি সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে।’’