ডঃ জয়ন্ত তপাদার, ৫ ডিসেম্বর: সব সমস্যায় পাথর লাগে না
মানুষ যখন কোন ব্যক্তিগত সমস্যা যেমন কর্ম প্রাপ্তিতে বাধা, শিক্ষাজীবনের সমস্যা, চালু ব্যবসা অচল হয়ে যাওয়া, বিবাহে বাধা কিংবা বিবাহের পর চরম সাংসারিক অশান্তি, ক্রমাগত রোগে ভুগে চলা, অথবা বারে বারে অপারেশন বা দুর্ঘটনার মুখে পড়া, প্রবল শত্রুতায় জর্জরিত হয়ে যাওয়া- ইত্যাদি নানান সমস্যায় দিশেহারা হয়ে কোন জ্যোতিষীর কাছে যান মুক্তি লাভের আশা নিয়ে, তখন সেই জ্যোতিষী ব্যক্তিটির জন্ম ছক বিচার বিশ্লেষণ করে খুঁজে বার করার চেষ্টা করেন যে কি কি অশুভ যোগ আছে যার জন্য মানুষটি বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কষ্ট পাচ্ছেন। এবার যখন সমস্যার প্রকৃত কারণ নির্ণয় হয়ে গেল, তখন পরবর্তী কাজ হল সমস্যার সমাধান। অর্থাৎবার্থ চার্টে যে নেগেটিভিটি আছে তার কারেকশন বা প্রতিকার নির্ধারণ করা। এই প্রতিকার হতে পারে কোন গ্রহরত্ন সেই হীরা, পোখরাজ, নীলা, পান্না, চুনি, মুক্তা, গোমেদ বা ক্যাটস আই যাই হোক না কেন। আবার কেউ কেউ দৈব কবজ যেমন বগলামুখী (মঙ্গল গ্রহের সমস্যা জনিত কারণ দূর করতে), মাতঙ্গি (রবি), ধৃমাবতি (কেতুর জন্য), ভুবনেশ্বরী (শুক্র), ছিন্নমস্তা (রাহুর), তারা কবজ (বৃহস্পতির দোষ দূর করতে), কমলা (চন্দ্রের), দক্ষিণা কালিকা কবজ (শনি গ্রহের জন্য), ত্রিপুরা সুন্দরী কবজ (বুধ), ইত্যাদির ব্যবহার করে থাকেন সমস্যা সমাধানের জন্য।
তবে আমি আমার প্রায় আড়াই দশকের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি যে শুধুমাত্র হীরা ও নীলা দ্রুত ফল দিয়ে থাকে অথচ দশম মহাবিদ্যার যে কবচ গুলির নাম আমি উল্লেখ করেছি সেগুলি যদি সঠিকভাবে শাস্ত্র পদ্ধতি অনুসরণ করে বিশেষ তিথিতে প্রস্তুত করা হয় তবে তা যেকোনো অতি মূল্যবান গ্রহ রত্নের থেকেও দ্রুত ও স্থায়ী ফল দিয়ে থাকে। কোন শাস্ত্রে বলা নেই যে মাঙ্গলিক দোষ বা সঠিকভাবে বললে ভৌম দোষ নিবারণে সক্ষম গ্রহরত্ন প্রবাল। তেমনি যে জাতকের শনির সাড়েসাতি চলছে তার প্রতিকার কখনোই নীলা হতে পারে না। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে বর্তমানে ধনু রাশি, মকর রাশি, কুম্ভ রাশির সাড়েসাতি চলছে। আগামী এপ্রিল ২০২২ থেকে শনির সাড়েসাতির দশা শেষ হয়ে যাবে ধনু রাশির আর শুরু হবে মীন রাশির মানুষের। তাই যাদের সাড়েসাতি চলছে তাদের তো বটেই আগামীতে যাদের এই দশা আসছে অর্থাৎ মীন রাশির জাতক-জাতিকাদের কাছে আমার বিনীত আবেদন এই যে তারা সাড়েসাতির দশা শুরু হবার আগেই যাকে ভরসা করেন সেই রকম কোন পন্ডিত জ্যোতিষীর কাছে জন্ম ছকের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে শনির সাড়েসাতির যেন যথাযথ শাস্ত্র প্রতিকার নেন।
আমাদের জন্ম কুণ্ডলীতে মোট বারোটি ঘর বা ভাব থাকে। আর তাতে থাকে লগ্ন (জাতক জাতিকা নিজে), আর থাকে নয়টি গ্রহ যারা বিভিন্ন ঘরে অবস্থান করে। এই নয়টি গ্রহ আবার ২৭ টি নক্ষত্রের মধ্যে যেকোনো নয়টিতে অবস্থান করে। এক্ষেত্রে এই নয়টি গ্রহ পরিচালিত হয় ৯ টি নক্ষত্রের দ্বারা। তাই যখন কোন জন্ম কুণ্ডলী বিচার করা হয় তখন শুধুমাত্র গ্রহের অবস্থানই দেখা হয় না, দেখা হয় তারা ঠিক যে নক্ষত্রে অবস্থান করছে তা কোন ভাবে ষষ্ঠ, অষ্টম, কিংবা দ্বাদশ ভাবের সঙ্গে কোনোরূপ সংযোগ স্থাপন করেছে কিনা
(সাধারণত এই ভাব তিনটিকে অশুভ বলে মনে করা হয়)। অর্থাৎ এক্ষেত্রে যে গ্রহ ওই তিনটি ভাবের মধ্যে কোন একটির সঙ্গে সংযুক্ত, সেই গ্রহের রত্ন ধারণ করলে অশুভ ফল প্রাপ্ত হবেন সেই জাতক জাতিকা। যদি কোন গ্রহ দগ্ধ অর্থাৎ কমবাস্ট হয় তখন সেই গ্রহের রত্ন শুভ ফল দান করতে পারে না। যখন কোনো গ্রহ সূর্যের খুব কাছাকাছি বিচরণ করে তখন সেই গ্রহটি দগ্ধ হয়ে যায়। প্রতিটি গ্রহের কিছু নির্দিষ্ট ও নিজস্ব গুণ আছে। কিন্তু যখন গ্রহটি দগ্ধ হয় তখন গ্রহটির তার নিজস্ব গুণাবলী বিনষ্ট হয়ে যায়। এমনকি যে ঘরে গ্রহটি অবস্থান করে সেই ঘরের ক্ষতি করে। একটি গ্রহ তখনই দগ্ধ হয় যখন সেটি একটি নির্দিষ্ট ডিগ্রীতে সূর্যের কাছে থাকে। এই নির্দিষ্ট ডিগ্রী গুলি হল চন্দ্র ১২ ডিগ্রী, মঙ্গল ১৭ ডিগ্রী, বুধ ১৪ ডিগ্রী (বক্রি হলে ১২ডিগ্রী), বৃহস্পতি ১১ ডিগ্রী, শুক্র ১০ ডিগ্রী( বক্রি হলে ৮ ডিগ্রী), শনি ১৫ ডিগ্রী ইত্যাদি।
এরকম দগ্ধ গ্রহকে রত্ন দিয়ে তার নেগেটিভ প্রভাবকে প্রশমিত করা সম্ভব নয়। এছাড়া বিভিন্ন অশুভ যোগ যেমন কালসর্প দোষ, মাঙ্গলিক দোষ, কেমুন্দ্রম (চন্দ্রের দুপাশে কোন গ্রহ না থাকা), গ্রহণ দোষ (চন্দ্র+কেতু বা চন্দ্র+রাহু অথবা রবি+কেতু), অঙ্গারক দোষ (মঙ্গল+রাহু), পুঃ নরফু দোষ (শনি+চন্দ্র), বিষ যোগ (শনি+মঙ্গল বা শনি+রবি), দারিদ্র্য যোগ (রবি+শুক্র) ইত্যাদি এমন বহু অশুভ যোগ আছে যা রত্ন ধারনের প্রতিকার সম্ভব নয়।
সুতরাং জন্ম ছকের পুঙ্খানুপুঙ্খ্য বিচার বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন সমস্যার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন গ্রহের দোষ নিবারণের দৈব কবজ, বিভিন্ন বীজ মন্ত্র জপ, কি রঙের পোশাক আপনার জন্য শুভ হবে আর কি রঙে বা অশুভ হবে, কোন দিন কি কি দ্রব্য কাকে দান করলে আপনার জন্য মঙ্গলজনক হবে এইসব সঠিকভাবে জেনে আপনি সমস্যা মুক্ত হতে পারেন। ডঃ জয়ন্ত তপাদার (জ্যোতিষ রত্ন উপাধি) যোগাযোগ- ৮২৫০৬২৭২০৩/ ৯৪৭৪৭৩২৯০১। ইভিএম নিউজ