ইভিএম নিউজ ব্যুরো, ১০ মার্চঃ জন্মের পর থেকেই মাথাটার আকার স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই বড়। পরে অসহ্য যন্ত্রণায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় চিনের এক বছর একের শিশুটিকে। পরে সিটি স্ক্যান করে দেখা যায় অস্বাভাবিক এক কাণ্ড। শুনলে অবাক হবেন শিশুটির মাথাতে বেড়ে উঠছিল পরস্পর দুটি ভ্রূণ। যেটি অমেরিকান অ্যাকাডেমি অব নিউরোলজি জার্নালে ছাপাও হয়েছে ঘটনাটি।
জেনে নেওয়া যাক ফিটাস ইন ফিটু আসলে কি?
চিকিৎসার পরিভাষায় এই অবস্থাকে বলে ফিটাস ইন ফিটু । অর্থাৎ শিশুর পেটে ভ্রূণের উপস্থিতি। এই বিরল রোগ পৃথিবীর ২০০ জনের মধ্যে দেখা গিয়েছে ।মায়ের গর্ভে থাকার সময়েই একটি ভ্রূণ অন্যটির মধ্যে ঢুকে পড়ে। সাধারণত অপরিণত ভ্রূণ তুলনায় পরিণত হতে থাকা ভ্রূণের শরীরের ভেতরে প্রবেশ করে। সেটি পরিণত ভ্রূণের শরীরের যে কোনও জায়গায় ঢুকে বাড়তে থাকে। সেটা মস্তিস্তিস্কেও হতে পারে আবার পেট অথবা হাড় কিংবা শরীরের কোনও গ্রন্থিতে।
উল্লেখ্য, উনিশ শতকের শুরুর দিকে জোহান ফ্রেডরিক মেকেল প্রথম ‘ফিটাস ইন ফিটু’ -র কথা জানিয়েছিলেন। পরে ১৮০৭ সালে জর্জ উইলিয়াম ইয়াং প্রথম যিনি একজন রোগীর বিস্তারিত কেস রিপোর্ট সামনে আনেন সকলের কাছে ।
সাধারণত যমজ বাচ্চা দুই ধরনের। এক মনোজাইগটিক বা আইডেন্টিক্যাল যমজ, ও দ্বিতীয়টি ডাইজাইগোটিক যমজ।
৭০ শতাংশ মনোজাইগোটিক যমজ একটিমাত্র প্লাসেন্টা বা অমরার (Placenta) মাধ্যমে মায়ের দেহের সাথে যুক্ত থেকে খাদ্য, পুষ্টি সংগ্রহ করে। এমন যমজদের বলা হয় মনোকোরিওনিক (একই অমরাবিশিষ্ট) মনোজাইগোটিক যমজ। এভাবে একই অমরার মাধ্যমে মায়ের দেহের সাথে যুক্ত থেকে বেড়ে ওঠে দুটি নতুন প্রাণ। ফিটাস ইন ফিটুর জন্য দায়ী মনোজাইগোটিক পদ্ধতি। যদি একই মনোকোরিওনিক যমজ হয় তাহলে জাইগোটের বিভাজনের সময় এমন অঘটন ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রে স্টেম কোষের অসম বিভাজনের কারণে একটি ভ্রূণ বড় ও অন্যটি তুলনামূলকভাবে ছোট হয়। সেই ভ্রূণের মৃত্যু হয় অথবা সেটি অন্য ভ্রূণটির ভেতরে ঢুকে গিয়ে পুষ্টিরস নিতে শুরু করে। তখন বড় ভ্রূণের ভেতরে ছোট ভ্রূণটি বাড়তে শুরু করে। বড় ভ্রূণটি ধীরে ধীরে পরিণত হয়। একসময় ভূমিষ্ঠ হয়। কিন্তু তার শরীরের ভেতরেই বাড়তে থাকে সেই অপরিণত ভ্রূণটি।
ফলে শিশুটি ভূমিষ্ঠ হওয়ার কিছুদিন পর থেকেই দেখা দেয় নানা সমস্যা। পেটে, মস্তিষ্কে নানা জায়গায় থাকতে পারে সেই অপরিণত ভ্রূণ। শিশুর দেহে ছোট ভ্রূণের বৃদ্ধি যত বেশি হয়, ততই নানা শারীরিক সমস্যা শুরু হয়। ভ্রূণটিকে সময়মতো সণাক্ত করে বিচ্ছিন্ন করা না হলে শিশুর শরীরে তা একসময় টিউমারে পরিণত হতে পারে।