অশান্তি

ব্যুরো নিউজ, ২৬ অক্টোবর: মানসিক অশান্তির কারন   

আজ আমি এমন একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব যা ভাইরাসের মতো প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষকে কুরে কুরে খাচ্ছে। আর এই বিপর্যস্ত মানুষগুলো এর হাত থেকে কিভাবে পরিত্রাণ পাবে তা বুঝে উঠতে পারছে না। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। মনের শান্তি বিদায় নিয়েছে, আর তার জায়গা দখল করেছে এই চিরসাথী মানসিক অশান্তি। নিজেরা মনে মনে ভাবুন আর আত্মসমীক্ষা করে দেখুন  যে সত্যি কি আপনার মনে শান্তি আছে? উত্তরটা হ্যাঁ হবে নাকি না হবে তা কি বলার অপেক্ষা রাখে! মন বড়ই অদ্ভুত একটা বিষয়ে যার কোন ওজন নেই, পরিমাপ করা যায় না, চোখে দেখাও যায় না, শুধুই যদি আপনার নিজের মন বলে কিছু থাকে তবে অন্যের মনকে অনুভব করা যায় মাত্র। এই বস্তু জগতে আলোর গতিবেগ সবচেয়ে বেশি। আলোর গতিবেগ প্রতি সেকেন্ডে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল। এই গতিবেগের থেকে মনের গতিবেগ সবচেয়ে বেশি। মনের শান্তি, অশান্তি, আনন্, দুঃখ সব নিয়ন্ত্রিত হয় মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস নামক একটা বিশেষ অংশের কার্যকারিতায়। আমাদের মনের ইচ্ছে অনুযায়ী কোন ঘটনা ঘটলে, যেমন কেউ বিশেষ কোনো খাবার পছন্দ করে, সে সেটা খেতে পেল, কোন সুন্দর পছন্দের গান শুনল, খুব সুন্দর দর্শনীয় কোন জায়গায় বেড়াতে গেলো, পছন্দের প্রেমিক বা প্রেমিকার সাথে সাক্ষাৎ হল, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শারীরিক মিলন হল, ইত্যাদি পছন্দের কোনো ঘটনা ঘটলে হাইপোথেলামাস থেকে সেরোটোনি নামক ফিল গুড হরমোন নিঃসৃত হয় যা মনের শান্তির বাতাবরণ তৈরি করে।

এবার ঠিক উল্টোটা ভাবুন। বাড়িতে সবসময় ঝগড়াঝাঁটি অশান্তি চলছে। এক্ষেত্রে মস্তিষ্ক থেকে অ্যাড্রিনাল হরমোন ক্ষরিত হয়, যা আমাদের রক্তনালীকে সংকোচিত করে ফলে হঠাৎ হার্ট রেট, পালস রেট ইত্যাদি বেড়ে যায়, শরীরে অস্বস্তি ও ঘাম হতে শুরু করে। তাই এ ধরনের অশান্তি যদি সংসারে বা কর্মক্ষেত্রে নিয়মিত চলতে থাকে তবে হঠাৎ ব্রেন স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদির মত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে যায়। এছাড়াও নিয়মিত মানসিক অশান্তির মধ্যে জীবন যাপন করলে থাইরয়েড, ব্লাড সুগার, হাই ব্লাড প্রেসারে আক্রান্ত যে হবেনই তা নিশ্চিত করে বলা যায়। প্রতিটি বাড়িতে অন্তত একজন ডায়াবেটিস রোগী আছেন আর এই পরিসংখ্যানেই প্রমাণ করছে যে মানসিক শান্তি ভারত মহাসাগরের অতল গভীরে তলিয়ে গেছে। এ তো গেল ডাক্তারি কচকচানি, তা এবার দেখা যাক জন্ম ছকের কি কি অশুভযোগের কারণে মানুষকে মানসিক অশান্তি ভোগ করতে হয়। মানুষের মনকে নিয়ন্ত্রণ করে চন্দ্র। এই চন্দ্র যদি বলবান হয়/শুভ নক্ষত্র যুক্ত হয়/বৃষ রাশিতে অবস্থান করে/জাতক বা জাতিকার জন্ম যদি পূর্ণিমা তিথিতে হয়/চন্দ্র যদি শুভ গ্রহের দ্বারা দৃষ্ট হয় তবে সেই মানুষের মনে অপার আনন্দ ও অনাবিল শান্তি বিরাজ করবে। ঠিক তেমনই চন্দ্রের অবস্থান যদি বৃশ্চিক রাশিতে হয়/চন্দ্র যদি কেতু, শনি, রাহু ইত্যাদির দ্বারা কোনভাবে যুক্ত হয়/জাতক বা জাতিকার জন্ম যদি অমাবস্যা তিথিতে হয় তবে সেই মানুষটির মন অশান্তির বিষে বিষময় হয়ে ওঠে।

সম্পন্ন হোল ‘তরুণের আহ্বান’ ক্লাবের কালিপুজোর খুঁটি

এবার জাতক বা জাতিকার বুধ গ্রহটির অবস্থান কি আছে তা বিচার করতে হবে। বুধ দেয় উপস্থিত বুদ্ধি। সেই বুধ যদি নিজস্ত হয় বা অশুভ গ্রহ দ্বারা কোনভাবে যুক্ত বা দৃষ্ট হয় তবে জাতক নিজের বুদ্ধির দোষে ভুল সিদ্ধান্ত নেবে, আর এতে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে যা মানসিক অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আমাদের হরোস্কোপ বা জন্ম ছকের যে বারটি ভাব (ঘর) আছে তার প্রত্যেকটি থেকে বারটি বিষয়ে বিচার করা হয়, অর্থাৎ ১২ টি ভাব থেকে মোট ১৪৪ টি বিষয় বিচার করা হয়। লগ্নকে প্রথম ভাব ধরে অ্যান্টি ক্লক ওয়াইজ অর্থাৎ ঘড়ির কাটার বিপরীতে গণনা করলে প্রতিটি ভাবকে আমরা পাব। জাতকের রাশিচক্রের পঞ্চম ভাব থেকে বিচার করা হয় সন্তান, মেধা, সাধারণ জ্ঞান, সৌখিনতা, সৌন্দর্য, সামাজিকতা, মন মানসিকতা, বিলাসিতা, ভালোবাসা, কামনা বাসনা, বৈধ অবৈধ আকর্ষণ, অবৈধ প্রেম, বিবাহের পূর্বে ও পরে মানসিক ও শারীরিক সম্পর্ক, খেলাধুলা, লটারি, জুয়া, শেয়ার, রুচি,সৌন্দর্যবোধ, ধর্ষণ, অপহরণ, পূর্ব জন্মের কর্মফল, পুজো অর্চনা, বিচক্ষণতা, স্ত্রী সূত্রে ধনলাভ, মায়ের আর্থিক অবস্থা ইত্যাদি আরো বহু বিষয়। অর্থাৎ এতক্ষণে আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে আজকের আলোচ্য বিষয় অর্থাৎ মানসিক অশান্তির কারণ। এই ব্যাপারটির সঙ্গে এই পঞ্চম ভাবের সম্পর্ক কতটা গভীর। পঞ্চম ভাব যদি পাপ পীড়িত হয়, যেমন পঞ্চম ভাব যদি পাপকর্তার দোষে দুষ্ট হয় তবে মনের শান্তি কর্পূরের ওপরের মতো উবে যাবে। এখানে পঞ্চম ভাবের আগের ও পরের ভাব অর্থাৎ চতুর্থ ভাব ও ষষ্ঠভাবে যদি অশুভ বা পাপ গ্রহ অবস্থান করে তবে এই দোষের সৃষ্টি হয়।

পঞ্চম ভাবের অধিপতি যদি দুস্থান অর্থাৎ ষষ্ঠ, অষ্ট্‌ম, দ্বাদশ ভাবের মধ্যে যেকোনো ভাবে অবস্থান করে বা পঞ্চম ভাবের অধিপতি গ্রহ যদি ষষ্ঠ, অষ্টম বা দ্বাদশ ভাবের স্টার লর্ড বা সাবলডের সঙ্গে কোনোভাবে যুক্ত হয় তবে জাতক বা জাতিকার মানসিক শান্তি যে নষ্ট হবে একথা নিশ্চিত করে বলা যায়। পঞ্চমভাবে যদি রাহু, কেতু,  শনি ইত্যাদি গ্রহের অবস্থান হয় তবে ওই একই অবস্থার সৃষ্টি করে। পঞ্চম ভাব থেকে কি কি বিষয়ে বিচার করা হয় তা আগেই আলোচনা করেছি। এবার এই ভাবটি দূষিত হয়ে পড়ার জন্য কি কি ভাবে মানসিক অশান্তির সৃষ্টি হয়ে থাকে একবার দেখে নিই। সৌখিনতা, সামাজিকতা রক্ষা করতে গিয়ে বহু অর্থ ব্যয় হয়ে গেলে মানসিক অশান্তি ভোগ করতে হয়। লটারি শেয়ারে ভুল লগ্নীর ফলে, বহু মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে গিয়ে মনোকষ্টে দিন কাটায়। সন্তানহীনতার কারণে নিদারুণ মনে কষ্ট পেয়ে থাকেন অনেকে। এবার আসছি বর্তমান সমাজের জ্বলন্ত সমস্যা নিয়ে। পঞ্চম ভাব থেকে জাতক বা জাতিকার রুচিবোধ কিভাবে হবে তা বোঝা যায়। আপনার সন্তান মদ, গাঁজা, হেরোইন ইত্যাদি ড্রাগের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়বে কিনা তা খুব ভালোভাবে বোঝা যায় এই ভাব থেকে। প্রত্যেকটি নাগরিক এই সমাজের একক তাই প্রত্যেকেরই একটা নৈতিক কর্তব্য থাকে যে একটা সুস্থ স্বাভাবিক চেতনা সম্পন্ন সমাজ ব্যবস্থা বজায় রাখার। তাই সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে আবেদন এই যে, আসুন আমরা একটা সুস্থ, সুন্দর, নির্মল সমাজ গরার জন্য নিজেদের নিয়োজিত করি, আমাদের দৈনন্দিন মানসিক অশান্তির কারণ গুলিকে বিলুপ্ত করে শান্তি সুখের সুন্দর একটা সবুজ পৃথিবী গড়ে তুলতে পারি। যাকে দেখে মুক্তকণ্ঠে আমরা বলতে পারি সত্যম শিবম্ সুন্দরম। ইভিএম নিউজ 

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর