সন্দীপ মুখার্জি, কে.পি. অ্যাস্ট্রোলজার, ২২ জুনঃ (Latest News) পাণ্ডবরা যে বনে ঘুমাচ্ছিলেন তার কিছু দূরেই একটি শালগাছে হিড়িম্ব ও হিড়িম্বা নামে দুই রাক্ষস-রাক্ষসী বাস করত। তারা ছিল ভাই-বোন। পাণ্ডবদের দেখে হিড়িম্ব তার বোন হিড়িম্বাকে পাঠাল তাঁদের ধরে নিয়ে আসতে। কিন্তু হিড়িম্বা সুপুরুষ ভীমকে দেখে তাঁর প্রেমে পড়ে যায় এবং পাণ্ডবদের বধ করার কথা ভুলে যায়। হিড়িম্বা সুন্দরী রমণীর বেশ ধরে ভীমের কাছে যায় এবং পাণ্ডবদের বাঁচানোর জন্য হিড়িম্বের দুরভিসন্ধির কথা বলে দেয়। হিড়িম্বার মুখে সব কথা শুনে ভীম হিড়িম্বের নিকট যান এবং হিড়িম্বকে একাই বধ করেন। হিড়িম্বা কুন্তীর নিকট ভীমকে পতি হিসেবে প্রার্থনা করলে কুন্তীও সম্মত হন। তারপর ভীমের ঔরসে হিড়িম্বার গর্ভে এক পুত্রের জন্ম হয়। তার মাথা ঘটের মত এবং চুল খাড়া বলে তার নাম দেয়া হয় ঘটোৎকচ। যখন তাকে ডাকা হবে, তখনই সে হাজির হবে একথা বলে ঘটোৎকচ চলে গেল।
পাণ্ডবরা বল্কল ও মৃগচর্ম পরিধান করে তপস্বীর বেশে মৎস্য, ত্রিগর্ত, পাঞ্চাল ও কীচক দেশের ভিতর দিয়ে যাওয়ার সময় পিতামহ ব্যাসের সাথে দেখা হয়ে গেল। তখন ব্যাস তাঁদের একচক্রা নগরে এক ব্রাহ্মণের গৃহে রেখে আসলেন। সেই নগরে একবার বক-রাক্ষসের দৌরাত্ম্যে লোকজন অতীষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। মাতার আদেশে ভীম বক-রাক্ষসকে বধ করেন। পরে তাঁরা পাঞ্চালরাজ দ্রুপদের কন্যা দ্রৌপদীর স্বয়ংবর সভায় যোগদানের জন্য পাঞ্চালদেশে যাত্রা শুরু করেন। একদিন পর তাঁরা গঙ্গাতীরে সোমাশ্রয়ণ তীর্থে যান। সেখানে গন্ধর্বরাজ চিত্ররথ সস্ত্রীক ভ্রমণে এসে পাণ্ডবদের দেখে হিংসিত ও কুপিত হলেন। চিত্ররথ তাঁদের আক্রমন করলে অজুর্ন তা প্রতিহত করেন এবং গন্ধর্বরাজের রথ দগ্ধ করে ফেলেন। অজুর্ন যুধিষ্ঠিরের অনুরোধে গন্ধর্বরাজের প্রাণভিক্ষা দেওয়ায় গন্ধর্বরাজ তাঁদের বন্ধু হয়ে গেলেন। গন্ধর্বরাজ পাণ্ডবদের চাক্ষুষী-বিদ্যা ও আগ্নেয়াস্ত্র দান করে প্রস্থান করেন। পরে পাণ্ডবরা ব্রাহ্মণের বেশে দ্রৌপদীর স্বয়ংবর সভায় যোগদান করেন।
দ্রৌপদী কিন্তু রাজা দ্রুপদের ঔরসজাত কন্যা নয়। একবার রাজা দ্রুপদ দ্রোণের নিকট পরাজিত হয়েছিলেন। তিনি প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ও পুত্র কামনায় যাজ ও উপযাজ নামক দুই ব্রাহ্মণের শরণাপন্ন হন। তাঁদের নির্দেশমত তিনি পুত্রেষ্টি যজ্ঞ করলে যজ্ঞের অগ্নি থেকে অগ্নিবর্ণের, বর্ম-মুকুটভূষিত, খড়গ-ধনুর্বাণধারী এক কুমার এবং শ্যামবর্ণের এক পরমা সুন্দরী কুমারী উঠে আসলেন। ঐ অগ্নিবর্ণের কুমার ধৃষ্টদ্যুম্ন এবং শ্যামবর্ণের কুমারী কৃষ্ণা নামে খ্যাত হলেন। দ্রুপদের কন্যা বলে কৃষ্ণা দ্রৌপদী নামে পরিচিতা হলেন। দ্রুপ দ্রুৌপদীকে অজুর্নের সাথে বিবাহ দিতে চাইলেন। তাই তিনি এমন এক ধনু নির্মাণ করালেন যাতে গুণ পড়ানো দুঃসাধ্য। তিনি শূন্যে স্থাপিত একটি যন্ত্রের উপর একটি লক্ষ্যবস্তু রাখলেন এবং শর্ত দিলেন যে, যিনি এই ধনুতে গুণ লাগিয়ে লক্ষ্যবস্তু ভেদ করতে পারবেন তিনিই হবেন তাঁর কন্যার বর। রাজা দ্রুপদ দ্রৌপদীকে বিবাহ করার কঠিন শর্ত দিলেন কারণ তিনি জানতেন যে, ঐ লক্ষ্যভেদ একমাত্র অজুর্ন ছাড়া আর কারও পক্ষে সম্ভব নয়।
দ্রৌপদীর সয়ংসভার দিন সভায় উপস্থিত রাজারা একে একে লক্ষ্যভেদ করার চেষ্টা করলেন কিন্তু কেউই লক্ষ্যভেদ তো দূরের কথা, ধনুতে গুণই লাগাতে পারলেন না। কর্ণ সেই ধনুতে গুণ লাগিয়ে লক্ষ্যভেদ করতে যাবেন এমন সময় দ্রৌপদী উচ্চস্বরে বললেন, আমি সূতজাতীয়কে বরণ করব না। কর্ণ অগত্যা লজ্জিত হয়ে ধনু পরিত্যাগ করলেন। তাঁরপর ব্রাহ্মণবেশী অজুর্ন সেই ধনুতে গুণ লাগিয়ে লক্ষ্যভেদ করলেন এবং দ্রৌপদীর বরমাল্য গ্রহণ করলেন। তারপর পাণ্ডবরা দ্রৌপদীকে নিয়ে তাঁদের আশ্রয়দাতা কুম্ভকারের গৃহে এসে আনন্দিত মনে কুন্তীকে জানালেন যে, তাঁরা ভিক্ষা এনেছেন। কুন্তী না দেখেই গৃহের ভেতর থেকে বলে বসলেন, “তোমরা সকলে মিলে ভোগ কর”। পরে দ্রৌপদীকে দেখে কুন্তীর ভুল ভাঙল। কিন্তু মাতৃআজ্ঞা পালনের জন্য পঞ্চ-ভ্রাতাই দ্রৌপদীকে পত্নী রূপে গ্রহণ করলেন। এ কার্যে অজুর্নেরও সম্মতি ছিল। পূর্বজন্মের কৃতকর্মের ফলে দ্রৌপদীর পঞ্চ-স্বামী লাভ করেছেন। পূর্বজন্মে দ্রৌপদী ছিলেন মুনিকন্যা। তিনি তপস্যা করে মহাদেবকে তুষ্ট করলেন এবং বর চাইলেন যে, তিনি যেন সর্বগুণান্বিত পতি লাভ করেন। তিনি পাঁচবার এই বর চাওয়ায় মহাদেব তাঁকে বললেন, “পরজন্মে ভরতবংশীয় পাঁচপুুত্র তোমার পতি হবেন”। পূর্বজন্মের এই বরেই তিনি পঞ্চস্বামী লাভ করলেন। কিন্তু রাজা দ্রুপদ তা মেনে নিতে চাইলেন না। তাই ব্যাস তাঁকে বোঝালেন যে, এই পঞ্চ-পাণ্ডব মূলত ধর্ম, বায়ু, ইন্দ্র ও অশ্বীদ্বয়ের ঔরাসজাত পুত্র। মহাদেবের ইচ্ছায় ঐ পঞ্চ-দেবতা মনুষ্যগর্ভে পুত্র উৎপাদন করেছেন। সেই সাথে তিনি পূর্বজন্মে মহাদেবের বরে দ্রৌপদীর পঞ্চস্বামী লাভ করার কথাও বললেন। সব শুনে রাজা দ্রুপদ পাণ্ডবদের প্রস্তাবে রাজি হলেন এবং পঞ্চ-পাণ্ডবের সাথে পৃথকভাবে দ্রৌপদীর বিয়ে দিলেন। (EVM News)