ইভিএম নিউজ, ব্যুরো রিপোর্ট ৯ মার্চঃ মহাবিশ্বের শেষের শুরু কি হয়ে গেছে? এরকমই কিন্তু মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। সাম্প্রতিক নানা গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে যে এই মহাবিশ্ব অসীম নয়। তার সীমা আছে। আরো অদ্ভুত ব্যাপার হলো, বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই মহাবিশ্ব যা আমরা দেখছি, তা প্রথম নয় এবং শেষও নয়। আগেও এরকম মহাবিশ্ব ছিল ভবিষ্যতেও আরো হবে।
ব্যাপারটা বেশ জটিল। তাই আসুন, একটু সহজে, সংক্ষেপে বোঝার চেষ্টা করা যাক। এই মহাবিশ্বে মহাকাশে আমরা যাই দেখি তা সবই আসলে কিছু কণার সমাহার। কোয়ার্ক, গ্লুয়ন, বোসন ইত্যাদি ইত্যাদি। আমাদের শরীর থেকে শুরু করে মাটি- জল-পাহাড়-পর্বত, চাঁদ-সূর্য সহ সমস্ত গ্রহ উপগ্রহ, সমস্ত গ্যালাক্সি অর্থাৎ নক্ষত্রপুঞ্জ – সবকিছুই তৈরি ওইসব কণা দিয়ে। এবং বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিকতম গবেষণায় ইঙ্গিত মিলছে যে ওই সমস্ত কণাই তৈরি হয়েছিল একবার, এক বারই মাত্র। কিভাবে তৈরি হয়েছিল তা জানা সম্ভব হয়নি এখনো পর্যন্ত। কিন্তু এটা তারা বুঝতে পারছেন যে ওই একবারের পর নতুন করে আর কোন কিছু সৃষ্টি হয়নি।
ওই সব কণা থেকে যে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে তা কিন্তু অমর নয়, চিরকালীন নয়। সৃষ্টি হয়, সেই সৃষ্টি ফুলেফেঁপে বিরাট হয়, তৈরি হয় গ্রহ- নক্ষত্র, তারপর আবার একদিন সবকিছু সংকুচিত হয়ে ধ্বংস হয়। শুধু সেই প্রাথমিক কণাগুলোর কোন ধ্বংস নেই।
একদল বিজ্ঞানী বলছেন এই মহাবিশ্ব এবারে ধ্বংসের পথে এগোচ্ছে। ধীরে ধীরে সমস্ত নক্ষত্রপুঞ্জ, মহাবিশ্বের যাবতীয় যা কিছু তার সব এসে জড়ো হবে একসঙ্গে, এক জায়গায়। সবকিছু জমাট বেঁধে ধীরে ধীরে ঘনীভূত হয়ে একটা বিন্দুতে পরিণত হবে। ঠিক যেমনটা বলা হয় বিগ ব্যাং থিওরিতে।
বিগ ব্যাং থিওরিতে বলা হয় মহাবিশ্বের সমস্ত পদার্থ কণা আকারে একটা জায়গায় জড়ো হয়েছিল। প্রচন্ড চাপ ও তাপের ফলে তা একসময় বিস্ফোরিত হয়েছিল। তৈরি হয়েছিল এই মহাবিশ্ব।
সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল দেখে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ধরে নেওয়া যায় মোটামুটি এই ভাবেই মহাবিশ্বের শুরু। কিন্তু সেই মহাবিশ্ব এবার ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগোচ্ছে। আবারো সবকিছু একসঙ্গে জমাট বেঁধে ঘুনিভূত হবে একটা বিন্দুতে পরিণত হবে। হ্যাঁ। সে সময় মানুষ বা অন্য কোন জীবের পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। ওই পরিস্থিতিতে পৌঁছানোর অনেক আগেই নিশ্চিহ্ন হবে জীবজগৎ।
কিন্তু তারপর কি হবে? সেই আভাসও বিজ্ঞানীরা না কি পাচ্ছেন। তারা বলছেন, যখন সমস্ত পদার্থ ও সমস্ত কণা এক জায়গায় জড়ো হবে, আবার হবে নতুন একটা বিগ ব্যাং, তৈরি হবে আর এক মহাবিশ্ব। অর্থাৎ ধ্বংস থেকে আবার সৃষ্টি কিন্তু কিসের ভিত্তিতে এই অনুমান?
বিজ্ঞানীদের দাবি, মহাবিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে এক ধরনের মাইক্রোওয়েভ রশ্মি যা অত্যন্ত ক্ষীণ। বর্তমান মহাবিশ্বের পরিচিত পদার্থ থেকে বেরিয়ে আসা মাইক্রোওয়েভ রশ্মির মত অতটা জোরালো নয়। আর ওই ক্ষীণ মাইক্রোওয়েভ রশ্মিই নাকি আদতে পূর্ববর্তী মহাবিশ্বের পদচিহ্ন । এর থেকেই তাদের অনুমান, মহাবিশ্বের সৃষ্টি ও ধ্বংস আসলে একটা চক্রাকার প্রক্রিয়া। একটা মহাবিশ্ব তৈরি হয়, সেটা ধ্বংস হয়, আবার একটা তৈরি হয়। অর্থাৎ ধ্বংস নিশ্চিত।
কিন্তু কবে? কত দিন লাগবে আমাদের এই মহাবিশ্ব ধ্বংস হতে? সেই চিন্তায় রাতের ঘুমের বারোটা বাজবে যে! তবে না এখনই এত চিন্তার কারণ নেই বিজ্ঞানীরা বলছেন এখনো এই মহাবিশ্ব ধ্বংস হতে অন্তত: এক লক্ষ কোটি বছর লাগবে। তাই এখনই নাওয়া- খাওয়া-ঘুম ভুলে মাথার চুল ছিঁড়তে বসার প্রয়োজন নেই। বরং নাক ডাকিয়ে খানিকক্ষণ ঘুমিয়ে নেওয়ার সময় অবশ্যই পাওয়া যাবে। কি বলেন?