দ্বীপে

ব্যুরো নিউজ, ২৪ অক্টোবর: প্রত্যন্ত দ্বীপের আকর্ষণ ‘কুমারী পুজো’ 

 

মূলভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ। সেই দ্বীপে কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। প্রত্যন্ত দ্বীপ এলাকা হওয়ার কারণে টিভির পর্দায় চোখ রেখে উপভোগ করতে হতো নবমীর কুমারী পুজো। এই সাগরদ্বীপ এলাকার মানুষের কুমারী পুজো দেখবার বা করবার যে আক্ষেপ হয়েছিল তার অবসান ঘটলো। সাগরদ্বীপের এই প্রথম কুমারী পুজোর শুভ সূচনা করলো কয়লাপাড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব পূজা কমিটি। এই কুমারী পুজো দেখতে সাগরদ্বীপের মানুষেরা ভিড় জমিয়েছে।

 

এ বছর কয়লাপাড়া সার্বজনীন দুর্গোৎসব পুজো কমিটির পুজো ৪৭ তম বর্ষে পদার্পণ করেছে। সাগরদ্বীপ এলাকার মানুষদের কথা মাথায় রেখে এবছর থেকেই শুরু হয়েছে সাগরদ্বীপে কুমারী পুজো। এ বিষয়ে সুধীর কুমার মাইতি বলেন, আমাদের এই দ্বীপ মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা। আমরা বেলুড় মঠের কুমারী পুজো টিভির পর্দায় দেখি। এই দ্বীপ এলাকার মানুষেরা ইচ্ছা থাকলেও ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে কুমারী পুজো দেখতে কলকাতায় যেতে পারে না। সাগরদ্বীপ এলাকার মানুষদের এই আক্ষেপ দূর করার জন্য এবছর থেকেই আমরা কুমারী পুজোর আয়োজন করেছি। এই কুমারী পুজো দেখতে সাগরদ্বীপের মানুষদের স্বতঃস্ফূর্ত উদ্দীপনা দেখে আমরা আপ্লুত।

নবমীর কুমারী পুজোয় শুভেন্দু অধিকারী

ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায়, স্বামী বিবেকানন্দ প্রথম কুমারী পুজো করেন ১৮৯৮ সালে, তাঁর কাশ্মীর ভ্ৰমনকালে। তিনি যখন ১৮৯৮ সালে কাশ্মীর ভ্রমণে গেছিলেন, তখন তিনি এক মুসলিম মেয়েকে নিয়ে কুমারী পুজো করেছিলেন। শাস্ত্ররীতিতে ব্রাহ্মণ কন্যাকেই কুমারীপুজোর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তিনি সমস্ত রীতির উর্ধ্বে গিয়ে পুজো করেছেন মুসলমান কন্যাকে। তিনি জাতপাতের উর্ধ্বে দেবী দর্শন করেছিলেন। দেবীত্ব কেবল ব্রাহ্মণত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বা দেবীত্ব ও মাতৃ্ত্ব কারোর একচেটিয়া সম্পদ নয়। মাতৃত্ব ও দেবীত্ব প্রতিটি নারীর আজন্ম সম্পদ। স্বামীজির ধ্যানে ও দর্শনে তা প্রমাণিত। তাই তিনি মুসলমান কন্যার মধ্যে দেবীত্বের সন্ধান পেয়েছিলেন। তিনি  দর্শকদের বলেছিলেন, যেদিকে তাকাচ্ছি দেখছি কেবল মায়ের মূর্তি। অবাক হয়ে গিয়েছিলেন দর্শকরা স্বামীজির ভাবমূর্তি দেখে। এরপর ১৮৯৯ সালে তিনি কন্যাকুমারী শহরে ডেপুটি একাউণ্ট্যাণ্ট জেনারেল মন্মথ ভট্টাচার্যের কন্যাকে কুমারী রূপে পুজো করেছিলেন।

 

১৯০১ সালে স্বামী বিবেকানন্দ, বেলুড় মঠে দুর্গা  ও কুমারী পুজো শুরু করেন। ১৯০১ সালে বেলুড় মঠের প্রথম কুমারী পুজোয় স্বামী বিবেকানন্দ ৯ জন কুমারীকে পুজো করেন। এখন বেলুড়মঠে একজনেরই পুজো করা হয়ে থাকে। এটাই নাকি শাস্ত্রীয় রীতি। স্বামীজির দিব্যদৃষ্টিতে সকল কুমারীই দেবীর এক একটি রূপ। সেই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তিনি পুজো করেছিলেন ৯ জন কুমারীকে। স্বামীজি প্রতিটি কন্যাকে ভক্তিভরে পুজো করেছিলেন। ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করেছিলেন শ্রদ্ধাভরে। এই ৯ জন কন্যার মধ্যে একজন ছিলেন গৌরীমার পালিতা কন্যা দুর্গামা। যাঁর কপালে টিপ পরাতে গিয়ে স্বামীজি ভাবাবিষ্ট হয়ে গিয়েছিলেন। চন্দনের টিপ পরানোর সময় তিনি ভাবে শিহরিত হয়েছিলেন। আবেগভরে তিনি বলেছিলেন- “ আঃ! দেবীর বোধ হয় তৃ্তীয় নয়নে আঘাত লেগে গেল।” তাঁর দৃষ্টি ঠিকই। আমাদের দুটো চোখ থাকলেও, তৃ্তীয় চোখ থাকে দেবী দুর্গার। তিনি সেই কুমারীর মধ্যে তৃ্তীয় নয়ন প্রত্যক্ষ করেছিলেন।

 

তাঁর দৃষ্টিতে তিনি যেমন ‘সেদিন দুর্গারূপে প্রতিষ্ঠিতা’- পরবর্তীকালেও সেই কন্যা দুর্গামা নামে পরিচিতা হয়েছিলেন। স্বামীজির স্নেহধন্যা ছিলেন এই কন্যা। স্বামীজির কুমারীপুজোয় যেন সত্যি সত্যিই ঠিক দুর্গা মা রূপে তিনি পরিগণিতা হয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, ‘দুর্গামা’ অধ্যক্ষারূপে প্রতিষ্ঠিতা হয়েছিলেন সারদেশ্বরী আশ্রমে। স্বামীজির অন্তর্দৃষ্টি যেন বাস্তবায়িত হয়েছিল এই কুমারীপুজোর মধ্য দিয়ে। অবশ্য এই ৯ জন কুমারীর মধ্যে দুর্গা মা যেমন ছিলেন, তেমনি শ্রীরামকৃষ্ণের ভাইপো রামলালদাদার কনিষ্ঠা কন্যা রাধারানীও ছিলেন। স্বামীজি এই পুজোর দ্বারা যেন একটা নূতন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। সমস্ত নীতির উর্ধ্বে গিয়ে তিনি সৃষ্টি করেছিলেন এক নূতন নীতি। তিনি নারীজাতির প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা নিদর্শন করেছেন এই কুমারীপুজোর মধ্য দিয়ে। শুধু তাই নয়, ইদানীং যে দুর্গাপুজোর সময় জীবন্ত কন্যাকে কুমারীপূজা করার প্রচলন তা স্বামীজিরই আবিষ্কার বা তিনিই এর প্রচারক।

 

অন্য একটি ঘটনার মধ্যে আমরা তাঁকে পাই দিব্যভাবের পূজক হিসাবে। তিনি তখন উত্তর প্রদেশের গাজীপুরে বসবাস করতেন। সেখানে এক প্রবাসী বাঙালির কুমারী মেয়েকে কুমারীপুজো করেছিলেন। সেই মেয়েটির নাম ছিল মণিকা। পরবর্তীকালে এই মণিকাদেবী হয়ে উঠেছিলেন যশস্বিনী সন্ন্যাসিনী। এ যেন স্বামীজির ঐ দিব্য বীজের বপন, যেন অনাঘ্রাত কুসুমকে দেবসেবায় উৎসর্গ করা। যথার্থ তাঁর দেবী দর্শন। কুমারীপুজোয় উৎসর্গীকৃ্তা মণিকা যেন দেবীমূর্তিতে প্রতিষ্ঠিতা। এই মণিকাদেবী শেষজীবনে সন্ন্যাসিনী হয়ে যশোদা মাঈ নামে পরিচিতা হয়েছিলেন জগতে। এও স্বামীজির এক অন্য আবিষ্কার। ইভিএম নিউজ 

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর