ইভিএম নিউজ ব্যুরো, ২৮ ফেব্রুয়ারিঃ “ সততার নামে দিচ্ছে ধোকা শান্তির নামে সন্ত্রাস, নীতির নামে চলছে দুর্নীতি সন্ধির নামে ত্রাস”… বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এবং সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেসের শাসনকালে ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে দিদির দূতেদের অর্থাৎ শাসক দলের বিভিন্ন নেতা মন্ত্রীদের কে ঘিরে দিকে দিকে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রামবাসীদের যে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে, তা অবশ্যই মনে করিয়ে দিচ্ছে শিক্ষক রাজনীতিবিদ মোতাহার হোসেনের লেখা ‘দুর্নীতি’ কবিতার এই লাইনটিকে।
একদা ‘সততার প্রতীক’ কে সামনে রেখে পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতির পাকে জড়িয়েছেন শাসক তৃণমূলের তাবড় তাবড় নেতা মন্ত্রিরা। জেল বন্দী রয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সহ প্রায় গোটা শিক্ষা দফতর। কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে শিক্ষাকে বিক্রি করা হয়েছে অযোগ্যদের কাছে ।পথে বসতে বাধ্য করা হয়েছে শিক্ষিত মেধাবী যোগ্য যুব সম্প্রদায়কে।
সারদায় আর্থিক তছরুপ থেকে শুরু করে নারদা সঙ্গে কয়লা চুরি, প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য পাঠানো কেন্দ্রীয় বরাদ্দের টাকা তছরুপ, গরু পাচার থেকে বালি চুরি, বেআইনি নির্মাণ,আবাস যোজনায় দুর্নীতি, মিড ডে মিলের টাকা চুরি, একশো দিনের কাজে ভুয়ো জব কার্ড, সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে দুর্নীতি ,অপর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা পাশাপাশি তোলাবাজি আর দুর্বৃত্তরাজ- একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ হতে হয়েছে রাজ্যের শাসক দলকে।
এই দিকে শিয়রে পঞ্চায়েত ভোট। তার আগে গত ১১ই জানুয়ারি থেকে রাজ্যের ১০ কোটি মানুষের সমস্যার কথা জানতে ৩৩০০ গ্রামে শুরু হয়েছে দিদির দূত নামক কর্মসূচি। বিরোধীদের অভিযোগ মূলত পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের কর্মী সহ অন্যান্য গ্রামবাসীদের মধ্যে তৈরি হওয়া ক্ষোভ প্রশমনই এই কর্মসূচীর মুখ্য উদ্দেশ্য। কিন্তু দেখা যাচ্ছে প্রায় প্রতিটি কর্মসূচিতেই শাসক দলের নেতা মন্ত্রিদেরকে ঘিরে বিক্ষোভ সংঘটিত হচ্ছে।
বীরভূমের সাংসদ অভিনেত্রী শতাব্দী রায়কে ঘিরে প্রথম গ্রামবাসীদের এই বিক্ষোভ নজরে আসে। তারপর একে একে পাঁশকুড়া, বাঁকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা সহ প্রায় সমস্ত জেলাতেই বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।এমনকি, বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে সারদা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ সহ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, তারকা বিধায়ক লাভলি মৈত্র,জুন মালিয়া, সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতানেত্রীদের। উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরে খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষকে অভিযোগ জানাতে গিয়ে তৃণমূল কর্মীর হাতে চড়ও খেতে হয়েছে স্থানীয় এক বাসিন্দাকে।
তার সঙ্গে দিকে দিকে বোমা-আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারেরঘটনা আর গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।এমনকি বোমার আঘাতে প্রান হারিয়েছে বেশ কয়েকজন শিশুও। প্রশ্ন উঠেছে, শাসক দলের এই পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতি ও বেনিয়মের নিষ্পত্তি তবে কবে ঘটবে?এর থেকে সাধারণ মানুষের আদতে কি মুক্তি পাওয়া সম্ভভ? বিরোধীদের মতে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, বিধবা ভাতা ইত্যাদির মাধ্যমে উঠোনে ভাত ছড়িয়ে মানুষকে আর ভুল বোঝানো যাবে না। ভোট বাক্সতে জবাব দিয়ে এই অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটাবে মানুষই এবং তার সূচনা হবে আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের মধ্য দিয়েই।