ইভিএম নিউজ ব্যুরো, ২৫ জুনঃ (Latest News) পরিবেশ নিয়ে ভাবতে বসলে প্রথমেই যে বইটার দিকে আমাদের নজর পড়ে সেটি হল ১৯৬২-তে প্রকাশিত রাচেল কারসন রচিত ‘Sailent Spring’ বইটি। তিনি সেই বইতে দ্যর্থহীনভাবে বলেন যে আমেরিকায় কৃষিক্ষেত্রে কীট মারার জন্য যেভাবে রাসায়নিক ব্যবহার হচ্ছে তাতে খাদ্যশস্যও বিষাক্ত হচ্ছে, পাশাপাশি সেই বিষাক্ত শস্যদানার বিষক্রিয়াজনিত কারণে পাখিরা বিপন্ন হচ্ছে কারণ তাদের ডিমের খোলা হয়ে যাচ্ছে পাতলা,তাই পাখির ছানার জন্মও সমস্যার মুখোমুখি। তিনি এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেন যে একদিন পৃথিবী এমন এক বসন্ত দেখবে যা হবে পাখির কলকাকলিহীন। তারপর ভারতে সবুজ বিপ্লবের আগমন ঘটার পর বর্তমানে তার যা পরিণতি ঘটে চলেছে তা আমরা সবাই জানি।

পৃথিবীর পরিবেশের ধ্বংস সাধন নিয়ে সরকারিভাবে ভাবনার প্রয়াস প্রথম শুরু হয় আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ দ্বারা ১৯৭২ সালের পরিবেশ সন্মেলন থেকে যেটা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ইউরোপের স্টকহোম শহরে। এখনো পর্যন্ত ২৭ বার সন্মেলন হয়ে গেছে। প্রথম সন্মেলনে ভারতসহ ১১৩টি দেশ অংশগ্রহণ করেছিল। সর্বশেষে ১৯৭টি দেশ। সাধারণত Conference of Parties (COP) এই নামে এই সন্মেলনগুলি হয়ে থাকে। সন্মেলনের আলোচনার বিষয়বস্তু পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা করা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। তবে এতোগুলি আলোচনার নীট ফল যে অশ্বডিম্ব সেটা আজকের পৃথিবীর প্রকৃতি পরিবেশের পরিণতি দেখলেই তা বোঝা যাচ্ছে। এই বিষয়ে প্রখ্যাত ভূগোলবিদ ‘মাসিসো কুইনি’-র মন্তব্য বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন “আর্থিক দিক থেকে প্রভাবশালী যে দেশগুলি বিশ্বায়ন চালু করেছে, তারা কেবলমাত্র সর্বহারাশ্রেণীকেই বিপর্যস্ত করছে এমন নয়,বড় মাপের পরিবেশ নিধনযজ্ঞ চালিয়ে তারা তাদের নিজেদের শ্রেণীর জন্যও বিপদ ডেকে আনছে”। বিভিন্ন বুর্জোয়া পরিবেশবিদরা এই বিপদ সম্পর্কে সরব হওয়ার অনেক আগেই কার্ল মার্কস বলেছিলেন যে পুঁজিবাদের অগ্রগতির অবসম্ভাবি ফল অতি উৎপাদনের কারণে পরিবেশ ধ্বংস। বর্তমানে এসে পুঁজিবাদ তার মুনাফার স্বার্থে একদিকে মানবসম্পদ অপর দিকে প্রাকৃতিক সম্পদের নির্বিচারে লুন্ঠন, মানুষসহ সমগ্র জীবজগতের পক্ষেই এক ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে। অতঃপর কি করণীয় ?

এই প্রসঙ্গে বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক শ্রী অশোক মুখোপাধ্যায়ের একটি লেখা আমাদের কিছুটা ‘গাইড লাইন’ দিতে পারে। প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘মানবমন’ পত্রিকাতে।’মানবমন’ মনোবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের আধুনিক ধারা পরিচায়ক একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা। বিশিষ্ট বস্তুবাদী রাশিয়ার মনোবিজ্ঞানী পাভলভের আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি যার হাত ধরে ভারতবর্ষে বিস্তারলাভ শুরু করেছিল সেই বিশিষ্ট মনোচিকিৎসক ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠিত এই ‘মানবমন’ পত্রিকা। প্রবন্ধটি বড়। সেই প্রবন্ধের প্রাসঙ্গিক অংশটি তুলে দিচ্ছি। শিরোনাম আমার।

প্রসঙ্গ পরিবেশ : প্রথম পর্ব

” বাস্তুতন্ত্র, পরিবেশ এবং জীব-মিত্র উন্নয়নের সমস্যাগুলি মতবাদ নিরপেক্ষ সামুহিক ও জগতজোড়া বিবেচনাধীন মুদ্দা। মার্কসবাদীদের পাশাপাশি অনেক অমার্কসবাদীও এই বিষয়ে প্রায় সমানভাবেই উদ্বিগ্ন এবং সক্রিয়।আর সত্যি কথা বলতে গেলে, এই উদ্বেগের জায়গাটা অমার্কসবাদীরাই অনেক দিন আগে থেকে প্রচার আন্দোলন করে সামনে এনেছেন। মার্কসবাদীরাই বরং পরিবেশ আন্দোলনে এসেছেন বেশ খানিকটা দেরিতে। পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনে বিশিষ্ট সংগঠক শ্রদ্ধেয় সমর বাগচী মার্কসবাদের প্রতি আস্থাশীল হয়েও মোহনদাস গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে এই বিষয়ে যে সমস্ত অনুকূল বক্তব্য খুঁজে পেয়েছেন এবং নানা আলোচনায় উল্লেখ করে থাকেন, তার মধ্যেও এই সত্যের আভাস পাওয়া যায়।(বাগচী ২০১০) প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নে এই সংক্রান্ত কিছু কিছু সমস্যা নিয়ে ১৯৭০-এর দশক থেকে বৈদ্যায়তনিক চর্চা শুরু করলেও বিভিন্ন দেশের কমিউনিস্ট দলগুলি তাদের গণ-আন্দোলনের দাবিপত্রে পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র বিষয়ক মুদ্দাগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করেছে ১৯৯০-এর দশকের শেষ দিকে।১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও দ্য জ্যানেইরো-তে বসুন্ধরা শীর্ষ সন্মেলন এবং সেখানে কিউবার কমিউনিস্ট নেতা কমরেড ফিদেল কাস্ত্রোর লেখা পুস্তিকা Tomorrow will be Too Late প্রচারের আলোয় আসার পর। তাই যদি হয়, তাহলে মার্কসের কথাই এখানে আমরা বিশেষ করে টেনে আনছি কেন ?

আনছি, কেননা, মার্কসের রচনায় আলোচ্য সমস্যার ব্যাপারে কিছু অবিসংবাদিত মূল্যবান অভিজ্ঞান তো পাওয়া যায়ই আমার ধারণা অনুযায়ী তার আরও তিনটে খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। (ক্রমশ)

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর