লাবনী চৌধুরী, ২১ নভেম্বর: চলে গেলেন নেহেরুর ‘সাঁওতালি স্ত্রী’
জওহরলাল নেহরুর 'সাঁওতালি স্ত্রী' যিনি তার সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আজীবন বঞ্চনার সম্মুখিন হয়েছিলেন, তাঁর নাম বুধনি মাঞ্ঝিয়াইন। ১৭ নভেম্বর, শুক্রবার রাতে ঝাড়খণ্ডের পাঞ্চেতের কাছে নিজের বাড়িতে মারা যান নেহরুর 'সাঁওতালি স্ত্রী' বুধনি মাঞ্ঝিয়াইন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। ২৫২ বছরে পদার্পণ করলেন কৃষ্ণনগরের ‘বুড়িমা’ তবে কেন বুধনি মাঞ্ঝিয়াইন সাঁওতাল সম্প্রদায়ের বঞ্চনার শিকার হন? সে অনেককাল আগের কথা। ৬ই ডিসেম্বর ১৯৫৯ সালে, নেহেরু একটি বাঁধ উদ্বোধন করতে পশ্চিমবঙ্গের একটি গ্রামে গিয়েছিলেন। দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন নেহরুকে স্বাগত জানানোর জন্য বুধনি মাঞ্ঝিয়াইন নামে ১৬ বছর বয়সী আদিবাসী মেয়ে নেহরুর গলায় মালা পরিয়েছিলেন। নেহেরু ভালবাসতেন শিশু, কিশোর- কিশোরীদের। তাই স্নেহ স্বরূপ একইভাবে নেহেরুও তাঁর গলার মালা খুলে সেই তরুনীর গলায় পরান। এই ঘটনা পাঞ্চেত বাধ উদ্বোধনের সময় ঘটে ছিল, আর তাকেই আদিবাদিরা নেহেরুর সঙ্গে ওই তরুণীর বিয়ে হয়ে গেছে বলে বিশ্বাস ও প্রচার করতে শুরু করেন। আর বুধনির মালা বদল হয়েছে অন্য সম্প্রদায়ের পুরুষের সঙ্গে। আর সেই কারণেই নিজেদের সম্প্রদায়ে ঠাই পাননি বুধনি। ঝাড়খণ্ডের পাঞ্চেতের কাছে থাকতেন বুধনি। সেখানেই তাঁর মেয়ে রত্নার সঙ্গে থাকতেন তিনি। নেহেরুর মূর্তির পাশে স্থানীয় পার্কে তাঁর মূর্তি বসানোর দাবি ওঠে। স্থানীয় DVC কলোনিতে তাঁর মেয়ে রত্নার বাড়ির কাছেই একটি স্মৃতিসৌধ করার আবেদনও জানান স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান ভৈরব মণ্ডল। রত্নার ছেলে বাপি (৩৫ বছর) থাকেন মাইথনে। তিনি DVC অ্যাকাউন্টেন্ট পদে চাকরী করেন। DVC-র সহকারী চীফ ইঞ্জিনিয়ার সুরেশ কুমার জানান, স্মৃতিসৌধ তৈরি করার ব্যপারে কোনও সিদ্ধান্তই হয়নি, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন DVC-র উচ্চপদস্থ কর্তারা। ১৯৫২ সালে পাঞ্চেত সংলগ্ন এলাকায় বুধনি মাঞ্ঝিয়াইন-এর পৈত্রিক জমি দুবে যায় বন্যার জলে। কোনওরকমে সাঁতার কেটে প্রাণ বাঁচান বুধনি। পাঞ্চেত প্রকল্প নির্মাণে সেই ছিল প্রথম ঠিকাশ্রমিক। তাই বাধ উদ্বোধনে নেহেরুকে স্বাগত জানানোর জন্য তাঁকে এবং রাভেন মাঝিকে বেঁছে নেওয়া হয়। বুধনি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বোতাম টিপে বাধের জল সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার উদ্বোধন করেন। এরপর চলে আসেন পুরুলিয়াতে, সেখানেও তিনি দিনমজুর হিসাবে কাজ করতেন। সেখানেই আলাপ হয় জণৈক সুধীর দত্তের সঙ্গে। এরপরই সুধীর দত্তের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। ১৯৮৫ সালে প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী যখন আসানসোলে আসেন, তখন রাজীব গান্ধীকে স্থানীয় এক কংগ্রেস নেতা বুধনি- নেহেরুর মাল্যদানের ঘটনা বর্ণনা করেন। এরপরেই বুধনি মাঞ্ঝিয়াইনকে DVC-তে একটি স্থায়ী চাকরী দেওয়া হয়। ২০০৫ সালে তিনি সেই চাকরী থেকে অবসর নেন। ইভিএম নিউজ