সিংহ

রাজীব ঘোষ, ২১ অক্টোবর: চকদিঘির সিংহরায় পরিবারের দুর্গাপুজোয় ব্রাত্য মহিলারা

পূর্ব বর্ধমানের চকদিঘির সিংহরায় পরিবারের দুর্গাপুজোয়, পুজোর জোগাড়ে মহিলাদের অংশগ্রহণ একেবারে নিষিদ্ধ। সমস্ত কিছুই করেন জমিদার বংশের পুরুষেরা। এই নিয়মেই চলে আসছে সিংহরায় পরিবারের দুর্গাপুজো। চকদিঘির জমিদার বাড়ির এই দুর্গাপুজোয় নারী শিক্ষার প্রাণপুরুষ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের, সাহচর্য ছিল। বাংলায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের সময় জমিদারি ব্যবস্থা শুরু হয়। তখনই জামালপুরের চকদিঘির জমিদারদের নামও এই জমিদার প্রথার সঙ্গে জড়িয়ে যায়। বর্তমানে এইসব জমিদারি আর নেই। তবে রয়ে গিয়েছে পুরনো রীতিনীতি। প্রায় ১০০ বিঘে চকদিঘির জমিদারদের বাগান বাড়ির সুবিশাল মন্দিরে প্রায় ২৮৭ বছর ধরে দেবী দুর্গা পূজিত হয়ে আসছেন। এই দুর্গাপুজোয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এসেছেন। চিত্রপরিচালক সত্যজিৎ রায়ও সিনেমার শুটিং এর জন্য এই বাগানবাড়িতে এসেছেন।

ময়দানে রাজ্যপাল, পুজোয় ঘোষণা সেরা বাঙালিয়ানা পুরষ্কারের

যতদূর জানা যায়, সারদাপ্রসাদ সিংহ রায়ের হাত ধরে চকদিঘির এই জমিদার বাড়ির পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে। সারদা প্রসাদ এলাকার সার্বিক উন্নতিতে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। তিনি শিক্ষা বিস্তারের জন্য স্কুল তৈরি করেছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সেই স্কুল উদ্বোধন করেন। চকদিঘি হাসপাতাল, মেমারি- চকদিঘি রাস্তা সবই সারদা প্রসাদ সিংহ রায়ের উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল। তিনি সমাজ সেবামূলক কাজে ভূমিকা নিয়েছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এই জমিদার পরিবারের কাছের মানুষ ছিলেন। তার থাকার জন্য জলাশয়ের ধারে একটি হাওয়াখানা ঘর তৈরি হয়। বাগান বাড়ির ভিতরে কাছারি বাড়ির সামনেই রয়েছে দূর্গা পুজোর স্থায়ী মন্দির। মন্দিরের সঙ্গেই টিনের ছাউনি দেওয়া বসার জায়গা। জানা যায়, এই জমিদার পরিবারের অন্য দুর্গামন্দিরটি চকদিঘি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে মনিরামবাটি গ্রামে রয়েছে। সেখানকার মন্দিরটিও একই আদলে তৈরি। পরিবারের সদস্যরা কাজের জন্য সারা বছর অন্যান্য জায়গায় থাকলেও পুজোর কটা দিন সকলেই চকদিঘির বাগানবাড়িতে একত্রিত হন।

চকদিঘির সিংহরায় জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো বৈদিক মতে হয়। একচালার কাঠামোয় ডাকের সাজে প্রতিমা সাজানো হয়। দেবীর মূর্তির দুই পাশে জয়া ও বিজয়ার মূর্তি থাকে। বিভিন্ন আঙ্গিকে মন্দির চত্বর সাজানো হয়। প্রতিপদের দিন পুজো শুরু হয়। নৈবেদ্যতে অন্যান্য বিভিন্ন ফলের সঙ্গে কাজু, কিসমিস, পেস্তা, আখরোট ও  মেওয়া ফল থাকে। পারিবারিক নিয়ম অনুযায়ী দেবীর পুজো স্থলপদ্মে হয়। শুধু সন্ধিপুজোয় লাগে ১০৮ টি জলপদ্ম। দেবীর কাছে প্রতিদিন হরেক রকম নিরামিষ ভোগ নিবেদন করা হয়। মহাষ্টমীর দিন পুজোর নৈবেদ্যতে দেওয়া হয় মাখা সন্দেশ।

আগে ছাগবলির প্রথা থাকলেও বেশ কয়েক বছর সেই প্রথা বন্ধ হয়েছে। পরিবর্তে এখন সন্দেশ নিবেদন করা হয়। নবমীর দিন চকদিঘি ও মনিরামবাটীর মন্দিরে কুমারী পুজো অনুষ্ঠিত হয়। তবে উৎসবের এই দিনগুলোতে পর্দার আড়ালেই থেকে যান মহিলারা। এই পরিবারের দুর্গাপুজোয় আজও তারা ব্রাত্য। শুধু আভিজাত্য বজায় রাখার জন্যই এই নিয়ম মেনে চলছেন চকদিঘির সিংহরায় পরিবারের মহিলারা। ইভিএম নিউজ 

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর