আরও একটা পঞ্চায়েত নির্বাচন আসন্ন। জঙ্গল মহল হাসছে না। এবং ক্রমশ দিনের আলোর মতো পরিস্কার হচ্ছে বিষয়টি। ভোট এলেই “গরিবদরদী” রাজনৈতিক ভিআইপিদের পা পরে, দরিদ্র প্রান্তিক আর পিছিয়ে পড়া সমাজের উঠোনে। ‘শুরু হয় লাঞ্চ পলিটিক্স।‘ আমি তোমাদেরই লোক বোঝানোর জন্য যেন প্রতিযোগিতা লেগে যায়। কিন্তু তারপর? দিন, মাস আর বছর গড়িয়ে গেলেও, ভোটের প্রতিশ্রুতি আর বাস্তব হয় না। রাজ্যে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোটের আবহে, কেন্দ্রীয় আবাস যোজনায় দুর্নীতিকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে এল, আরও এক প্রত্যাশাভঙ্গের ছবি। চূড়ান্ত আবাস তালিকায় নাম না থাকায়, এবার ভোট বয়কটের হুমকি দিল, জঙ্গলমহলের প্রান্তিক লোধা-শবরভূক্ত বেশ কিছু পরিবার।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রাম জেলায় প্রায় ৬০ টি লোধা-শবর পরিবারের বাস। অবাক করার মতো ঘটনা হল, জঙ্গল ঘেরা প্রত্যন্ত ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়া অঞ্চলের কালাঝরিয়া গ্রামের মানুষ এতদিন জানতেনই না, যে কেন্দ্রীয় আবাস যোজনায় তাঁদেরও একটা বাড়ি পাওয়ার অধিকার আছে। গোটা রাজ্য জুড়ে চলা প্রবল শোরগোলের ছিটেফোঁটা অবশেষে তাঁদের কানে আসতেই বেঁকে বসেছে এই প্রান্তিক ভোটার সমাজ। এবার তাঁদের কথা একটাই – ঘর নেই, তো ভোট নেই।
পরিবারগুলির অভিযোগ, এর আগেও বিভিন্ন ভোটে তাঁদের গ্রামে একাধিক নেতা বারবার এসে নানা সরকারি সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলেও, ভোট মিটতেই সেই প্রতিশ্রুতি, কার্যত বাতাসে বুদবুদের মতোই উবে গিয়েছে। ফলে আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই প্রচন্ড শীতের মধ্যেও, এই পরিবারগুলিকে যথারীতি ভাঙা দেওয়াল আর ত্রিপলের ছাদের নীচে কোনওক্রমে দিন কাটাতে হচ্ছে। নেই পর্যাপ্ত রোজগার আর গ্রাসাচ্ছদনের ব্যবস্থা। তার উপর জঙ্গলের গায়ে বসবাস করার জন্য, যখন তখন হাতির হামলার ভয়। সবমিলিয়ে ভয়াবহ এক পরিস্থিতিতে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর জীবন কাটাচ্ছে এই ৬০ টি প্রান্তিক পরিবার।