জয় মা তারা। মা তারার নাম নিয়ে সকলকে জানাই সুপ্রভাত, আজ আমরা জানবো মা জগদেশ্বরি অর্থাৎ কালীঘাট এর মায়ের কাহিনী

সন্দীপ মুখার্জি,কে.পি অ্যাস্টোলজার,১৭ জুনঃ কলকাতাতে অনেক ধর্মীয় স্থান আছে। কিন্তু সবচেয়ে প্রাচীন হল কালীঘাটের কালী মন্দির। যাঁরা কলকাতায় বেড়াতে আসেন বা থাকেন তাঁরা কেউই কালীঘাট মন্দির দেখেন নি এমন হয় না। মায়ের ভক্তরা বিশ্বাস করে যে কালী ঠাকুর কখনও তাঁর ভক্তদের খালি হাতে ফেরান না, তবে কালীঘাটের কালী মন্দির কবে সৃষ্টি হল সে ইতিহাসের কোন ধারাবাহিক বিবরণ পাওয়া যায় নি।পৌরাণিক (পীঠমালা তন্ত্র) কিংবদন্তী অনুসারে, সতীর দেহত্যাগের পর বিষ্ণুর সুদর্শন চক্রে ছিহ্নিত দেহের সতীর ডান পায়ের চারটি (মতান্তরে একটি) আঙুল এই কালীঘাট তীর্থে পড়েছিল। জনশ্রুতি যে বল্লাল সেনের সময় (১১৫৯-১১৭৯ খৃঃ) এই জায়গাটি কালীক্ষেত্র নামে বেশ প্রসিদ্ধ ছিল। তাঁর আমলে তীর্থ দর্শনের আশায় অনেক পুন্যার্থী গঙ্গাতীরে অবস্থিত কালীক্ষেত্রে স্নান করতে আসতেন। সেই সময় এই কালীক্ষেত্র বহুলা (বেহালা?) থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছিল। এর মধ্যিখানে ত্রিভুজাকৃতি ৩ কিলোমিটার জায়গাকে অতি পবিত্র বলা হত।

ত্রিভুজের তিন কোণে ছিল ব্রহ্মা, বিষনু ও মহেশ্বরের মন্দির। এই কালীক্ষেত্র সীমার মধ্যে কোন এক জায়গায় সুদর্শন চক্রে ছিন্ন হয়ে সতীদেহের পায়ের আঙুল পড়েছিল। সেই জন্য সেখানে এক দেবীমূর্তি ও একটি ভৈরব মূর্তির প্রতিষ্ঠা হয়। ভৈরবের নাম নকুলেশ্বর আর দেবীমূর্তি কালী। কোনো কোনো গবেষক বলেন “কালীক্ষেত্র” কথাটি থেকে “কলকাতা” নামটির উদ্ভব। এটাই কালীঘাটের উৎপত্তির পৌরানিক ইতিহাস। কালীঘাটের আদি সৃষ্টির ইতিহাস পুরোটাই কিংবদন্তীর ওপর নির্ভর করে।

আগে কালী ছিলেন অনার্যদেবী। তখনও তিনি হিন্দু দেবদেবীদের মধ্যে পুরোপুরি ঠাঁই পান নি। কালীর পূজো পুরনো বিশ্বাস অনুযায়ী নর ও অন্যান্য বলি দিয়ে করা হত। তাই তাঁকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল কালীক্ষেত্রের এই দুর্গম জঙ্গলপূর্ণ এলাকায় যেখানে তখন আইনের শাসন ও সভ্যতার আলো এসে পৌঁছয়নি।

এই অঞ্চলের অধিবাসী তখন প্রধানত পোদ, জেলে, দুলে,বাগদী প্রভৃতি আদিবাসী। কিছু তান্ত্রিক ও ব্রাহ্মণ তীর্থ যাত্রী গোপনে পূজো দেবার জন্য এখানে আসতেন। এরপর থেকে ৩০০ বছর কালীঘাট বা গঙ্গার কোন ইতিহাস পাওয়া যায় না।

এরপর কালীঘাট সম্বন্ধে সঠিক তথ্য পাওয়া গেল ১৪৯৫ খৃষ্টাব্দে বিপ্রদাস পিপলাইয়ের রচিত ‘মনসা মঙ্গল’ কাব্য থেকে। জানতে পেরেছি কলিকাতা, বেতোড়, কালীঘাট সম্বন্ধে কিছু কথা। চাঁদ সওদাগরের বাণিজ্য তরী ভাগলপুর থেকে সাগরের দিকে চলেছে।

তরী বাইতে বাইতে কয়েকদিন বাদে নানা গ্রামগঞ্জ পার হয়ে তাঁরা পৌঁছলেন চিৎপুরে। দুপুরে গঙ্গার পশ্চিম পাড়ে বেতড়ে (বর্তমান শিবপুর) পৌঁছলেন। এখানে রয়েছে বেতাই চন্ডীর প্রাচীন মন্দির।এখানে চাঁদ সওদাগর পূজো দিয়ে ও দ্বিপ্রাহরিক বিশ্রাম করে আবার নদী পেরিয়ে কলকাতা ছেড়ে কালীঘাটে থামলেন। বণিক কালিঘাটে মায়ের পূজো দিলেন। এর কয়েক বছর পরে ১৫১০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীচৈতন্যদেব সম্ভবত ছত্রভোগে অম্বুলিম্বঘাট দর্শন করে পুরীতে যান। চৈতন্য ভাগবতে ছত্রভোগ থেকে জলপথে পুরী যাবার বর্ণনা নেই। চৈতন্যদেব যদি সত্যি ছত্রভোগ থেকে পুরী গিয়ে থাকেন তবে বৃন্দাবন দাসের বর্ণনা অনুসারে তাঁর যাত্রা শুরু হয়েছিল অম্বুলিম্বঘাট থেকে। পথে পড়েছিল বাড়ুইপুর, গড়িয়া বোড়াল ইত্যাদি গ্রাম। নৌকো পেরিয়ে যাচ্ছে কালীঘাট। একটু দূরে নৌকো এসে পৌঁছল মুন্সীগঞ্জের কাছে। এখান থেকে ডানদিকে বাঁক নিয়ে গঙ্গা সোজা বয়ে গেছে কলকাতা চিৎপুর গ্রাম হয়ে হুগলীর দিকে। বাঁদিকে সংকীর্ণ খাড়ি বা খাল। তারা এখানে খাল পেরিয়ে মেদিনী পুর হয়ে পুরী যান। শ্রীচৈতন্যদেব শাক্ত তীর্থ কালীঘাট সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল ছিলেন।বেশ বোঝাই যাচ্ছে ৫০০ বছর আগে থেকেই ঐতিহাসিক তথ্যে কালীঘাট মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে। তখন হুগলী নদী বা গঙ্গা বর্তমান প্রিন্সেপ ঘাটের বাঁদিকে বাঁক নিয়ে কালীঘাট, টালিগঞ্জ, গড়িয়া, বৈষবঘাটার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিদ্যাধরী নদীর সাথে মিলিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশতো। গঙ্গা ছিল বিশাল চওড়া ও গভীর। ঘন নিবিড় জঙ্গলের ভেতর দিয়ে বিপুল জলধারা প্রবাহমান ছিল। এটাই ছিল তৎকালীন বঙ্গোপসাগরে যাবার জলপথ। তখন গঙ্গা প্রবাহিত হত কালী মন্দিরের পাশ দিয়ে। এই পথে ছিল পর্তুগীজ জলদস্যুদের আনাগোনা।ষোড়শ শতাব্দীর গোড়ার দিকে রাজা মান সিংহ (অনেকে বলেন রাজা বসন্ত রায়) আদি গঙ্গার তীরে একটি ছোট কালী মন্দির নির্মাণ করে দেন। এরপর ১৫০০ শতাব্দীতে কালীক্ষেত্র দীপিকা নামে একটি বই থেকে জানা যাচ্ছে এই সময়ে কালীঘাটের আশেপাশের অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে মানুষের বসবাস ছিল। কালীঘাট তখন নানারকম বৃক্ষ ও লতায় আচ্ছন্ন গভীর জঙ্গল। মন্দিরের লাগোয়া একটা সরু রাস্তা দিয়ে হেঁটে সাধু সন্ন্যাসীরা গঙ্গা সাগরে যেত। পরবর্তী সময়ে রাস্তাটির নাম হয় রসা রোড।

বাকি কাহিনী দ্বিতীয় অংশে জানানো হবে।(EVM News)

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর