ইভিএম নিউজ ব্যুরো, ১৯ মেঃ (Latest News) জলবায়ু পরিবর্তন রেকর্ড করেছে এশিয়া, আর্দ্র তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা কমপক্ষে ৩০ গুণ বেশি: অ্যাট্রিবিউশন গবেষণা

ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন গ্রুপের অংশ হিসাবে শীর্ষস্থানীয় জলবায়ু বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দলের দ্রুত অ্যাট্রিবিউশন বিশ্লেষণ অনুসারে, মানব সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ, ভারত, লাওস এবং থাইল্যান্ডে এপ্রিল মাসে অভূতপূর্ব আর্দ্র তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা কমপক্ষে ৩০ গুণ বেশি হয়েছে। সমীক্ষাটি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, বিশ্বের তাপপ্রবাহের হটস্পটের অন্যতম স্থান, এই অঞ্চলটির উচ্চ ঝুঁকি সেই প্রভাবগুলিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

এপ্রিলে, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কিছু অংশ রেকর্ড-ব্রেকিং তাপমাত্রা সহ তীব্র তাপপ্রবাহের সম্মুখীন হয়েছিল যা লাওসে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং থাইল্যান্ডে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছিল। তাপের কারণে ব্যাপকভাবে হাসপাতালে ভর্তি, রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, আগুন ছড়িয়ে পড়া এবং স্কুল বন্ধ হওয়া ঘটিয়েছে। মৃতের সংখ্যা এখনও অজানা।

বিশ্বজুড়ে, জলবায়ু পরিবর্তন তাপপ্রবাহকে আরও সাধারণ ঘটনা, দীর্ঘতর এবং আরও তীব্র গরম করে তুলেছে। এশীয় তাপপ্রবাহের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পরিমাপ করার জন্য, বিজ্ঞানীরা আবহাওয়ার ডেটা এবং কম্পিউটার মডেল সিমুলেশন বিশ্লেষণ করে বর্তমানের জলবায়ুকে তুলনা করেছেন। ১৮০০ শতকের শেষের দিকে দশক থেকে শুরু হওয়া প্রায় ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বিশ্বব্যাপী উষ্ণায়নের সাথে অতীতের জলবায়ুর সমক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ দ্বারা পর্যালোচিত পদ্ধতি অনুযায়ী করা হয়েছে।

বিশ্লেষণটি দুটি অঞ্চল জুড়ে, এপ্রিলে টানা চার দিনের জন্য গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এবং তাপ সূচকের সর্বোচ্চ মান তুলনা করেছে, যেখানে  প্রথম অঞ্চলটি হল দক্ষিণ ও পূর্ব ভারত এবং বাংলাদেশ আর দ্বিতীয় অঞ্চলটি হল সমগ্র থাইল্যান্ড এবং লাওস। তাপ সূচক হল এমন একটি পরিমাপ যা তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতাকে একত্রিত করে এবং মানবদেহে তাপ তরঙ্গের প্রভাবকে আরও সঠিকভাবে প্রতিফলিত করে।

উভয় অঞ্চলের গবেষকরা দেখেছেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আর্দ্র তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা কমপক্ষে ৩০ গুণ বেশি হয়েছে, আর জলবায়ুর পরিবর্তন না ঘটলে যা হতো তার চেয়ে তাপমাত্রা কমপক্ষে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি গরম হয়েছে।

সামগ্রিক গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে এবং এই তাপপ্রবাহের মতো ঘটনাগুলি আরও ঘন ঘন এবং গুরুতর হয়ে উঠবে।

বাংলাদেশ ও ভারতে সাম্প্রতিক আর্দ্র তাপপ্রবাহের মতো ঘটনা যেখানে গড়ে এক শতাব্দীতে একবারেও কম সময়ে ঘটত সেটি এখন প্রতি পাঁচ বছরে একবার ঘটবে এমন আশা করা যেতে পারে, এবং যদি তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়  যেমনটি প্রায় ৩০ বছরের মধ্যে ঘটবে, যদি নির্গমন দ্রুত কমানো না যায়  তাহলে, এই ধরনের ঘটনা গড়ে প্রতি দুই বছরে অন্তত একবার ঘটবে।

লাওস এবং থাইল্যান্ডে, বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন যে সাম্প্রতিক অভূতপূর্ব আর্দ্র তাপপ্রবাহের মতো ঘটনা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ছাড়া প্রায় অসম্ভব ছিল, এবং এটি এখনও একটি খুব অস্বাভাবিক ঘটনা যা ২০০ বছরে শুধুমাত্র একবার আশা করা যেতে পারে, এমনকি মানব সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থাকলেও। কিন্তু যদি তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়, তবে এটি আরও সাধারণ হয়ে উঠবে যা ২০ বছরে প্রায় একবার ঘটবে।

যদিও উচ্চ তাপমাত্রা দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক একটি ঘটনা, তবুও এটির মতো প্রথম দিকের তাপপ্রবাহগুলি বিশেষভাবে ক্ষতিকারক। যে সব মানুষেরা সবচেয়ে বেশি সূর্যের সংস্পর্শে আসেন এবং ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীগুলি, তারাই নিয়মিতভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে বৈষম্য এবং বিদ্যমান ঝুঁকিগুলির জন্য তাপপ্রবাহের সমাধানের বর্তমান কর্মপন্থাগুলিকে অবশ্যই উন্নত করতে হবে। তারা আরও বলেছেন যে, তাপপ্রবাহ কর্ম পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং ব্যাপক হওয়া উচিত এবং মৌলিক পরিসেবাগুলিতে পাওয়া নিশ্চিত করা উচিত, যেমন জল, বিদ্যুৎ এবং স্বাস্থ্যসেবা।

ভারত, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, কেনিয়া, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় এবং আবহাওয়া সংস্থাগুলির বিজ্ঞানীরা সহ ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন উদ্যোগের অংশ হিসাবে ২২ জন গবেষক দ্বারা গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছিল।

মন্তব্যগুলি:

ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ টেকনলজি তিরুপতি, ভারত-এর শ্রীচন্দ্র শেখর বাহিনীপতি বলেছেন: “যদিও আমরা তাপপ্রবাহকে সবচেয়ে মারাত্মক বিপর্যয় হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছি, বিশেষ করে ভারত, বাংলাদেশ এবং থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলিতে, সেখানে ঠিক কারা কারা ঝুঁকিতে আছে, ক্ষতি এবং ক্ষয়ক্ষতির অনুমান, পারিবারিক মোকাবিলা করার পদ্ধতি এবং সবচেয়ে কার্যকর তাপপ্রবাহ কর্ম পরিকল্পনা বিষয়ে জ্ঞানের অভাব রয়েছে। মানুষ হতাহত না হলেও, অন্যান্য অর্থনৈতিক এবং অনঅর্থনৈতিক ক্ষয় এবং ক্ষতির সূচকগুলি লিপিবদ্ধ করা হয় না। ঝুঁকির নির্ধারণে কারা কারা ঝুঁকিতে রয়েছে সেটির মূল্যায়নে এবং যে কোনো অভিযোজন পরিকল্পনাকে কার্যকর করার ক্ষেত্রে এটি ঘাটতি সৃষ্টি করে।”

গ্র্যান্থাম ইন্সটিটিউট ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভয়ার্নমেন্ট-এর সিনিয়ার লেকচারার, মিঃ ফ্রিডেরিকে অটো বলেছেন:“আমরা বারবার দেখতে পাচ্ছি যে জলবায়ু পরিবর্তন নাটকীয়ভাবে তাপপ্রবাহ কত ঘন ঘন ঘটে সেটি এবং সেচটির তীব্রতা বৃদ্ধি করে, আর এটিই হল সবচেয়ে মারাত্মক আবহাওয়ার ঘটনাগুলির মধ্যে একটি। এখনও, তাপপ্রবাহ কর্ম পরিকল্পনা বিশ্বজুড়ে খুব ধীরে ধীরেই চালু করা হচ্ছে। সর্বত্র এই বিষয়ে একটি সম্পূর্ণ অগ্রাধিকারযুক্ত অভিযোজন পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, বিশেষ করে এমন জায়গায় যেখানে উচ্চ আর্দ্রতা, তাপপ্রবাহের প্রভাবকে বাড়িয়ে তোলে।”

কোপেনহাগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোপেনহাগেন সেন্টার ফর ডিজাস্টার রিসার্চ-এর ডিরেক্টর, মিঃ এমানুয়েল রাজু বলেছেন:“এটি আরেকটি বিপর্যয় যা ঝুঁকি হ্রাস করার এবং অভিযোজনের সীমা সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। যেহেতু এটি প্রায়শই ঘটে, তাই প্রান্তিক লোকেরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের মধ্যে অনেকেই এখনও অতিমারী থেকে, এবং অতীতের তাপপ্রবাহ ও ঘূর্ণিঝড় থেকে নিজেদের পুনরুদ্ধার করছে, যা তাদের একটি দুষ্টচক্রে আটকে ফেলেছে। দৃশ্যমান এবং অদৃশ্য ক্ষতি এবং ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে প্রথমেই হ্রাস এবং অভিযোজন কৌশলগুলি বাস্তবায়ন করা উচিত।”

দ্রষ্টব্যঃ

এই গবেষণা, “এপ্রিল ২০২৩ সালের মূলত জলবায়ু পরিবর্তন দ্বারা চালিত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চরম আর্দ্র তাপ, ঝুঁকিপূর্ণ এবং সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়ের জন্য ক্ষতিকর” ১৭মে বুধবার বিকেল ৪টে ৩০ মিনিট আইএসটি(IST)/দুপুর ১২টা (12.PM) ইউকে(UK)/বেলা ১ টায়(1pm) সিইএসটি (CEST) -তে প্রকাশিত হবে। যখন নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে, তখন গবেষণাটি এখানে পাওয়া যাবে:

https://www.worldweatherattribution.org/extreme-humid-heat-in-south-and-southeast-asia-in-april-2023-larg ely-driven-by-climate-change detrimental-to-vulnerable-and-disadvantaged-communities

গবেষণার লেখকগণ:

    1. Mariam Zachariah, Grantham Institute, Imperial College London, UK
    2. Robert Vautard, Institut Pierre-Simon Laplace, CNRS, Sorbonne Université, Paris, France
    3. Chaithra S T, Centre for Atmospheric Sciences, Indian Institute of Technology Delhi, India
    4. Joyce J Kimutai, Grantham Institute, Imperial College London, UK
    5. Arulalan T, India Meteorological Department, Ministry of Earth Sciences, Gov. of India, Centre for Atmospheric Sciences, Indian Institute of Technology Delhi, India
    6. Krishna AchutaRao, Centre for Atmospheric Sciences, Indian Institute of Technology Delhi, India
    7. Clair Barnes, Grantham Institute, Imperial College London, UK
    8. Roop Singh, Red Cross Red Crescent Climate Centre, The Hague, the Netherlands
    9. Maja Vahlberg, Red Cross Red Crescent Climate Centre, The Hague, the Netherlands
    10. Julie Arrgihi, Red Cross Red Crescent Climate Centre, The Hague, the Netherlands; Global Disaster Preparedness Center, Washington DC, USA; University of Twente, The Netherlands
    11. Emmanuel Raju, Department of Public Health, Global Health Section & Copenhagen Centre for Disaster
    12. Upasna Sharma, School of Public Policy, Indian Institute of Technology Delhi, India
    13. Anshu Ogra, School of Public Policy, Indian Institute of Technology Delhi, India
    14. Chaya Vaddhanaphuti, Department of Geography, Chiang Mai University, Thailand
    15. Chandra Sekhar Bahinipati, Department of Humanities and Social Sciences, Indian Institute of Technology Tirupati, India
    16. Petra Tschakert, School of Media, Creative Arts and Social Inquiry, Curtin University, Perth, Australia
    17. Ram Chandrasekaran, School of Media, Creative Arts and Social Inquiry, Curtin University, Perth, Australia
    18. Carolina Pereira Marghidan, Red Cross Red Crescent Climate Centre, The Hague, the Netherlands; Faculty of Geo-Information Science and Earth Observation (ITC), University of Twente, Enschede, the Netherlands
    19. Arpita Mondal, Civil Engineering Department, Indian Institute of Technology Bombay, India; IDP in Climate Studies, Indian Institute of Technology Bombay, India
    20. Clemens Schwingshackl, Department of Geography, Ludwig-Maximilians-Universität München, Munich, Germany
    21. Sjoukje Philip, Royal Netherlands Meteorological Institute (KNMI), De Bilt, The Netherlands
    22. Friederike E L Otto, Grantham Institute, Imperial College London, UK

 

ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন (WWA) হল একটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, যা চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলির উপর জলবায়ুর পরিবর্তনের সম্ভাব্য প্রভাবকে বিশ্লেষণ করে এবং সর্বসমক্ষে প্রকাশ করে, যেমন ঝড়, চরম বৃষ্টিপাত, তাপপ্রবাহ, ঠান্ডা হওয়া এবং খরা।

ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন (WWA)-এর পূর্ববর্তী গবেষণায় এমন গবেষণা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা দেখিয়েছে যে জলবায়ু পরিবর্তন এই বছর নাইজেরিয়া এবং পশ্চিম আফ্রিকার অন্যান্য অংশে বন্যাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন (WWA) গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উত্তর গোলার্ধে এই বছরের খরার সম্ভাবনা বেশি ছিল এবং এটি বৃষ্টিপাত বাড়িয়েছে, যা পাকিস্তানের মারাত্মক বন্যার ঘটিয়েছিল, কিন্তু এটি মাদাগাস্কারের 2021 সালের খাদ্য সংকটের প্রধান কারণ ছিল না। (EVM News)

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর