জাহাঙ্গীর বাদশা, কাঁথি : এ যেন চোরকে ছেড়ে, চুরির ঘটনার তদন্তকারীকেই পাল্টা জেরা। রাজ্যজুড়ে গরু কয়লা বালি পাথরের একের পর এক চোরাচালানের ঘটনায় এক শ্রেণীর নেতা মন্ত্রীর বিধায়কদের নাম জড়ানোয়, গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বেজায় অস্তিত্ব রয়েছে, রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষনেতৃত্ব। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো, তার ওপর যুক্ত হয়েছে সাম্প্রতিক কালের শিক্ষক নিয়োগ আর আবাস যোজনা নিয়ে একের পর এক দুর্নীতির ঘটনা। সেই যাবতীয় ঘটনার তদন্ত করতে, একের পর এক কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল আসছে রাজ্যে। আর সেই অভিযোগের অভিমুখ ঘোরাতে, রাজ্যে আসা কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিনিধিদের ঘেরাও করে একশোদিনের কাজের বকেয়া চাইতে, প্রান্তিক গ্রামবাসীদের প্ররোচনা দেওয়ার নতুন এক অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে, রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে। শনিবার দুপুরে, তেমনই এক ঘটনা ঘটল, ঘাসফুলে থাবা বসানো বিজেপির নতুন গড় পূর্ব মেদিনীপুরে। এদিন সকালে, কেন্দ্রীয় আবাস যোজনার তালিকার স্বচ্ছ্বতা খতিয়ে দেখতে, কাঁথি ১ নম্বর ব্লকের মুকুন্দপুরগ্রামে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের একটি প্রতিনিধিদল। অভিযোগ— সমীক্ষার কাজ চলাকালীন, হঠাৎই তাঁদের ঘিরে ধরে ১০০ দিনের কাজের বকেয়া চেয়ে দাবি জানাতে শুরু করেন, একদল গ্রামবাসী।
তবে বিতর্কের এখানেই শেষ হয়নি। ক্ষুব্ধ ওই একাংশ গ্রামবাসী একইসঙ্গে, কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিতে ঘিরে ধরে, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় প্রকৃত প্রাপকদের নাম কেন কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন করতে শুরু করেন।
যদিও কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁদের বুঝিয়ে শান্ত করে, নিজেদের কাজ সেরে গ্রাম ছেড়ে চলে যান, ওই কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা। আর এর পরেই বিজেপি সহ স্থানীয় বিরোধীশিবির থেকে পাল্টা কটাক্ষ আর প্রশ্ন ধেয়ে আসতে শুরু করেছে। বিরোধীদের প্রশ্ন— যেখানে রাজ্যের শাসকদলের নেতাদের বিরুদ্ধেই, কেন্দ্রীয় আবাস যোজনার তালিকা তৈরীর কাজে ক্ষমতা আর প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে দুর্নীতি করার অভিযোগ উঠেছে, সেখানে এই প্রশ্ন তাঁদের না করে, কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের কেন করা হল? এটাও কি তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দলের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতে, প্রান্তিক মানুষকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা? কাঁথিতে বিজেপির স্থানীয় কয়েকজন নেতার কটাক্ষ— এ যেন চোরকে জেরা না-করে, উল্টে তদন্তকারীকেই জিজ্ঞাসাবাদ করে, বিতর্কের বল বিপক্ষের কোর্টে পাঠানোর মরিয়া রাজনৈতিক চেষ্টা।