ইভিএম নিউজ ব্যুরো, ২৩ শে ফেব্রুয়ারিঃ এই সেই টোটোপাড়া। হাজারো সমস্যায় জর্জরিত উত্তরবঙ্গের প্রত্যন্ত প্রান্তের এই উপজাতি সম্প্রদায়। যাঁদের সবথেকে বড় সমস্যা হলো কোথাও পানীয় জলের অভাব তো কোথাও আবার পানীয় জলের অপর্যাপ্ত যোগান । তাই সরকার তথা প্রশাসনের কাছে এই প্রান্তিক জনজাতির কাতর আবেদন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিক তারা। এখানকারই এক বাসিন্দা শচীন টোটো জানালেন, জল ধরে রাখার জন্য এখানে যে ট্যাংক তৈরি করা হয়েছিল, সেই ট্যাংকে এক ফোঁটাও জল থাকেনা।
সমস্যা সত্যি কতটা গভীরে তা জানা গেল টোটো সম্প্রদায়ের আরেক সদস্য আঙ্গুলি টোটোর কথায়। আঙ্গুলি পেশায় একজন আশা কর্মী। তিনি জানালেন, কাছেই পাহাড়ে ঝরনা আছে। সেখানে বর্ষাকালে খুব ভালো জল পাওয়া যায়। কিন্তু শীতকালে আর গ্রীষ্মকালে সেখান থেকে জল পাওয়া যায় না। ফলে অনেক দূর থেকে জল বয়ে আনতে হয়।
টোটো সম্প্রদায়ের আরেক সদস্য ভবেশ টোটো জানালেন, শুরুতে জল পাওয়া যাচ্ছিল। কারণ চারটি বোরিং করা হয়েছিল মাটির নিচ থেকে জল তোলার জন্য। কিন্তু তার মধ্যে দুটি বোরিং গোড়া থেকেই কাজ করে না। আর বাকি দুটি বোরিং এর অবস্থাও তথৈবচ। বাধ্য হয়ে টোটো পাড়ার অনেক বাসিন্দাই নিজেদের গ্যাঁটের কড়ি খরচা করে পাইপ কিনে পাম্পের সাহায্যে সেই সব বোরিং থেকে জল বাড়িতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছেন।
স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপপ্রধানও মেনে নিয়েছেন যে জলের সমস্যা আছে। তবে একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, দুটি বোরিং চালু আছে, অর্থাৎ গ্রামের অর্ধেক মানুষ জল পাচ্ছেন।
অন্যদিকে স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান আসা এস বমজান কোন রাখঢাক না করেই সরাসরি স্বীকার করেছেন, সমস্যা আছে। তিনি জানিয়েছেন, চারটি বোরিং এর মধ্যে দু’টি চালু আছে। এই দু’টি বোরিং যে এলাকায় সেই এলাকার মানুষজন জল পাচ্ছেন। কিন্তু বাকি দুটি নাম মাত্র। জল পাওয়া যায় না একফোঁটাও।
তবে চেষ্টার ত্রুটি রাখছেন না পঞ্চায়েত প্রধান আশা এস রমজান। তিনি মুখ্যমন্ত্রীকেও গোটা ব্যাপারটা জানিয়েছেন। তবে তাতে কাজ যে একেবারে হয়নি তা নয়। কাজ শেষ করার সবুজ সংকেত মিলেছে। কিন্তু যতদিন না কাজ পুরোপুরি হচ্ছে, অর্থাৎ বাকি দুটি বোরিং এর কাজ সম্পূর্ণ হচ্ছে, ততদিন এই জল যন্ত্রণা পোহাতে হবে গ্রামের মানুষদের। তবে তাঁর আশা, শীঘ্রই মিটবে এই সমস্যা।
এরপরে পঞ্চায়েত প্রধান আশা বমজান যা বলেছেন তা চমকে দেওয়ার মতো। তিনি পঞ্চায়েত প্রধান আর তাঁর নিজের বাড়িতেই জল পৌঁছয় না। ঝর্ণার জল খেতে হয়। পাহাড়ে গিয়ে সেই জল আনতে হয়। গ্রীষ্মকালে বা শীতকালে সেখান থেকেও যেহেতু জল পাওয়া যায় না, তাই বছরের এই সময়গুলোতে জল আনতে যেতে হয় অনেকটা দূরে।
অদ্ভুত ব্যাপার, এই প্রত্যন্ত টোটো পাড়ায় এমন এক পঞ্চায়েত প্রধানের দেখা মিলল, যিনি নিজের স্বার্থের চেয়েও আগে দেখেন গ্রামবাসীদের স্বার্থ। কারণ তিনি জানেন, এই গ্রামবাসীরাই তাঁকে ভালোবেসে ভোট দিয়ে পঞ্চায়েতে জয়ী করেছেন। রাজ্যের অন্য বহু পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে কিন্তু আমরা দেখি পুরোপুরি উল্টো ছবি। সেখানে দাঁড়িয়ে এই পিছিয়ে থাকা টোটো পাড়ার পঞ্চায়েত প্রধান আশা এস. বমজান অবশ্যই ব্যতিক্রমী। আলিপুরদুয়ারের এই বিশেষ উপজাতির দীর্ঘ দিনের জলের সমস্যা দ্রুত সমাধানের ব্যাপারে জেলা শাসক কিছুটা আশ্বাস দিলেও আশার আলো দেখাতে ব্যর্থ জলসম্পদ উন্নয়ন দফতর ।