ইভিএম নিউজ, ২৮ ফেব্রুয়ারিঃ ধুক-পুক, ধুক-পুক, অথবা লাব-ডাব, লাব-ডাব। হৃদয়ের হাসি-কান্না। সেই হৃদয় অর্থাৎ হৃদপিণ্ড যখন বেগড়বাই করে, অর্থাৎ অনিয়মিত হয় স্পন্দন, অথবা একটু মজা করে বললে, ‘এই ফেল করলাম’ নলে ভয় দেখাতে থাকে, তখন আমরা নিতান্তই অসহায়। পেস মেকার বা অনেক ক্ষেত্রে সদ্য মৃত ব্যক্তির দান করা হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন করে সমস্যার সমাধান যে সবসময় সফল হয় তাও কিন্ত্য নয়। বহু ক্ষেত্রেই বিশেষ করে অন্যের হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন করলে অনেক ক্ষেত্রেই শরীর তা ঠিকভাবে গ্রহণ করতে পারে না। পেসমেকারেও ব্যাটারি পালটাতে হয় সময়মত। আসলে সমস্যা তৈরি করে হৃদপিণ্ডের কোষ। কিছু বিশেষ ধরনের কোষ হৃদপিণ্ডে থাকে যেগুলো সংকুচিত এবং প্রসারিত হতে নিজে থেকেই। তাঁর ফলেই তৈরি হয় হৃদস্পন্দন। আর তার ফলে সক্রিয় থাকে হৃদপিণ্ডের পাম্পিং সিস্টেম, অর্থাৎ দুষিত রক্ত বার করে বিশুদ্ধ রক্ত শরীরে সরবরাহ করার কাজ। বিশেষ ধরনের এই কোষের নাম কার্ডিওমায়োসাইট। কিন্তু আমাদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোষের কার্যক্ষমতাও কমতে থাকে। ফলে হৃদপিণ্ড ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকে।
এই সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে, এরকমই দাবি করেছেন আইআইটি গুয়াহাটির বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, তারা এমন এক ধরনের পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন যাতে ওইসব কোষের প্রয়োজনীয় প্রোটিন তৈরি করা যাবে। আর সেই ওইসব কোষের সরাবরাহ করে দিলেই কার্ডিওমায়োসাইট কোষগুলো আবারও কর্মক্ষম হয়ে উঠবে। বৃদ্ধ মানুষের হৃদপিণ্ডও কাজ করবে একেবারে তরুণের হৃদপিণ্ডের মতোই। আরও একটা বিরাট ব্যাপার, এই প্রোটিন নাকি তারা তৈরি করতে পারছেন মানুষের গায়ের চামড়া থেকে কোষ সংগ্রহ করে তার কিছু জেনেটিক পরিবর্তন ঘটিয়েই। অর্থাৎ আপনার হৃদপিণ্ডর রিপেয়ারিং বা মেরামতির জন্য অন্য কারোর দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। চিকিৎসকরা আপনার দেহের চামড়া থেকে কোষ নিয়েই প্রয়োজনীয় কাজ টুকু সেরে ফেলতে পারবেন।
আইআইটি গুয়াহাটির বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তারা এই প্রোটিন সমাহার তৈরি করার জন্য এক বিশেষ ধরনের টুল বক্স বানিয়েছেন, যার নাম তারা দিয়েছেন ‘রিকমবিট্যান্ট টুল বক্স’।
তা ‘টুল’ যাই হোক না কেন, ঘটনা হল আর বড়জোর এক দশকের মধ্যেই হৃদয় মেরামতির এই কারিকুরি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হতে পারে বিভিন্ন হাসপাতালে-এরকমই সম্ভাবনা কিন্তু দেখা যাচ্ছে। তবে হ্যাঁ, প্রেমে ছ্যাঁকা খাওয়া ভগ্ন হৃদয় মেরামতি কিন্তু সম্ভব হবে না এই টেকনোলজিতে। আবার উল্টোদিকে, সত্তরের বৃদ্ধ-র হৃদয়ও আন্দোলিত হতে পারে নতুন প্রেমে। তরুণ হৃদয় বলে কথা।