মাধব দেবনাথ, ২ মার্চঃ জীবিত না মৃত, সেটা কোনও ডাক্তার নয়, ঠিক করে দিচ্ছেন একজন তৃণমূল নেতা। রীতিমতো চোখ কপালে তুলে, দিনের পর দিন এমনই ঘটে চলেছে, নদিয়ার শান্তিপুরে। ঘটনায় পুলিশ আর প্রশাসনের নজরদারির গাফিলতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় মানুষ।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে, গত ২৫ শে ফেব্রুয়ারি। স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, শনিবার বেলা তিনটে নাগাদ, শান্তিপুরের হরিপুর পঞ্চায়েত এলাকার নৃসিংহপুর উত্তর কলোনীর বাসিন্দা, জনৈক রবি দাসের ১৪ বছরের মেয়ে শর্মিষ্ঠার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। পরিবারের লোকজন তড়িঘড়ি ওই নাবালিকাকে শান্তিপুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। কিন্তু পুলিশকে কোনওরকম তথ্য না দিয়েই, মৃতদেহ হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এরপর নৃসিংহপুরের কালনাঘাট এলাকার একটি অবৈধ শ্মশানে ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়াই দাহ করা হয়, ওই নাবালিকার মৃতদেহ। এমনকি মৃতদেহ সৎকারের সময় স্থানীয় পঞ্চায়েতের তরফে ওই অবৈধ শ্মশানে যাঁর থাকার কথা, তিনিও ছিলেন না বলে জানা গেছে। ঘটনার কথা জানাজানি হতেই চাপে পড়ে যায়, মৃত নাবালিকার পরিবার। আইনি জটিলতায় জড়িয়ে যাওয়ার ভয়ে, পরিবারের লোকজন এরপর, নৃসিংহপুর বাজার এলাকার এক হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের কাছ থেকে ডেথ সার্টিফিকেট নেয়। আর এরপরেই শুরু হয় নতুন বিতর্ক। অস্বাভাবিক মৃত্যুর এই ঘটনায়, নাবালিকার দেহ কেন ময়নাতদন্তে পাঠানো হল না, তা নিয়ে শান্তিপুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে, অভিযোগের আঙ্গুল উঠতে শুরু করে। পাশাপাশি, মৃত্যুর কারণ খতিয়ে না দেখে, শুধুমাত্র পরিবারের লোকজনের মৌখিক বয়ানের ভিত্তিতেই একজন ডিগ্রিধারী হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক কীভাবে ডেথ সার্টিফিকেট দিলেন, তা নিয়েও শুরু হয় চাঞ্চল্য।
প্রশ্নের মুখে পড়ে, বাসুদেব বণিক নামের ওই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক রীতিমতো এক চাঞ্চল্যকর দাবী করেছেন। ওই চিকিৎসকেরদাবি গোপাল মজুমদার নামে এলাকার এক পঞ্চায়েত সদস্য তথা তৃণমূল নেতা তাঁকে ফোন করে ডেথ সার্টিফিকেট দিতে বলেছিলেন। এবং এখানেও শেষ নয়। মাধ্যমে ক্যামেরার সামনে ওই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক আরও দাবি করেন, আগেও স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের কথায় বেশ কয়েকবার তিনি সামান্য টাকায় এভাবে ডেথ সার্টিফিকেট লিখে দিয়েছেন। কারণ নেতাদের কথা না শুনলে, ওই এলাকায় তার ডাক্তারি বন্ধ হয়ে যাবে।
গোটা ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর, ফের একবার হাঁসখালি থানার সেই মর্মান্তিক ঘটনার ছায়া দেখতে শুরু করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অন্যদিকে, শাসকদলের স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান এবং বিধায়ক এনিয়ে পরস্পর বিরোধী মন্তব্য করায়, বিষয়টি আরো ঘোরালো হয়ে উঠেছে। পঞ্চায়েত প্রধানের দাবি তিনি এবিষয়ে কিছুই জানতেন না। সংবাদ মাধ্যমের কাছে ঘটনাটি জানার পর তিনি এবিষয়ে খোঁজখবর নেবেন। শান্তিপুরের তৃণমূল বিধায়ক ব্রজকিশোর গোস্বামী জানিয়েছেন, ঘটনার কথা তিনি শুনেছেন। উপযুক্ত পদক্ষেপও করবেন।
প্রসঙ্গত, নদীয়ার হাঁসখালি সেই মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল গোটা রাজ্যে। কিন্তু তারপরও যে স্থানীয় প্রশাসন আর পুলিশ এধরনের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে কোনও নজর দেয়নি, তা আরও একবার প্রমাণ করে দিল, পুরের নৃসিংহপুর এলাকার এই চঞ্চল্যকর ঘটনা। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে বিরোধী শিবিরের নেতা সকলেরই একটাই প্রশ্ন। এমন একটা ভয়ংকর বেআইনি ঘটনা স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান জানতে পারলেন না, অথচ বিধায়ক জানতে পারলেন। এটা কী করে সম্ভব! নদিয়া থেকে মাধব দেবনাথের