মৃত্যু

লাবনী চৌধুরী, ১০ জানুয়ারি: স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম দিনেই মৃত্যু বরণ করেছিলেন কোন স্বাধীনতা সংগ্রামী?

১৮৬৩-র ১২ জানুয়ারি কলকাতার এক কায়স্থ দত্ত পরিবারে  জন্মে ছিলেন বীর সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ। তাঁর জন্মের প্রায় ৭০ বছর পর ১৯৩৩ সালের ১২ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন বীর শহীদ প্রদ্যোৎকুমার ভট্টাচার্য। তবে মৃত্যুর আগেও নত হননি প্রদ্যোত ভট্টাচার্য, তাঁর হুঙ্কারে কেঁপে ওঠেন বার্য সাহেবও।

দ্বিতীয়বার আমেরিকা সফরের আগে কী বলেছিলেন বীর সন্ন্যাসী? 

১৯৩২ সালের ৩০ এপ্রিল মেদিনীপুরের দ্বিতীয় শ্বেতাঙ্গ ম্যাজিস্ট্রেট ডগলাস নিহত হন। তিনি তখন জেলা বোর্ডের এক মিটিংংয়ে সভাপতিত্ব করছিলেন। পুলিশ প্রহরী মোতায়েন ছিলো। এমন সময় প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্য ও তাঁর সাথীরা ডগলাসকে আক্রমণ করে হত্যা করেন। প্রদ্যোৎ তার সঙ্গীর পলায়নের সহায়তার জন্য পিস্তল হাতে রুখে দাঁড়ায় সে সময়েই তাকে পাকড়াও করা হয়।

মেদিনীপুর কলেজ ছাত্র প্রদ্যোতের বয়স তখন সবে মাত্র ২০। প্রদ্যোতের সাথীদের নাম বাতলানোর জন্য তার উপর চলে নির্মম অত্যাচার। কিন্তু তাতেও কোনো ভাবেই দুর্বল করা যায়নি এই বীর যোদ্ধাকে। ১৯৩৩ সালের ১২ জানুয়ারি ফাঁসির সাজা শোনানো হয় প্রদ্যোতকে।

দিনটা ১২ জানুয়ারি, কুয়াশার চাদরে ঢাকা পৌষের ভোর। জেলের ভিতর নিজের সেলে প্রতিদিনের মতো ব্যায়াম করছেন তেজস্বী যুবক প্রদ্যোত ভট্টাচার্য। আজ তাঁর ফাঁসির দিন। তবে তাঁকে দেখে সে সব আঁচ করাই যায় না। গতকাল বিকেল থেকে তিনি স্বচ্ছন্দে ঘোরাফেরা করছেন। রাতেও জেলের সকলেই শুনেছে প্রদ্যোতের উচ্চকণ্ঠের আবৃতি, “অত চুপি চুপি কেন কথা কও | মরণ, ওগো মরণ”

সকালের মতো ব্যায়াম শেষ। এবার গরম জল দিয়ে স্নান করলেন। তারপর বসলেন গীতা পাঠে। দেখতে দেখতে ঘড়ির কাটায় সময় সাড়ে পাঁচটা। সেলের তালা খুলছে ঘাতক প্রহরী। গীতা যথা স্থানে রেখে প্রদ্যোত বলেলন, ‘ঠিক হ্যায়’। অন্যান্য সেলের বিপ্লবীরাও জেগে। আকাশ বিদীর্ণ করে আওয়াজ ‘প্রদ্যোৎকুমার কি জয়’।

ঘড়ির কাটায় তখন সকাল ছ’টা। ফাঁসির মঞ্চে আনা হল প্রদ্যোতকে। জেলাশাসক বার্য জিজ্ঞেস করলেন “Are you ready Pradyut?” উত্তরে প্রদ্যোৎ জানালেন “হ্যাঁ”। এরপর ক্ষণিক নীরবতা। তারপর তীক্ষ্ণ কণ্ঠে প্রদ্যোৎ বলেলন ” We are determind Mr. Burge not to allow any European to remain in Midnapore. Yours is next turn get yourself ready”। যার বাংলা অর্থ করলে হয় “আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মিঃ বার্গ। মেদিনীপুরে কোনো ইউরোপীয়ানকে থাকতে দেব না। পরবর্তী পালা আপনার, আপনিও নিজেকে প্রস্তুত করুন”। তাঁর এই হুঙ্কারে সাহেবের মুখ তখন শুকিয়ে কাঠ। বারবার রুমাল দিয়ে ঘাম মুছছেন সাহেব। 

মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও সংগ্রামকে ভুলে যাননি প্রদ্যোত ভট্টাচার্য। চোখে চোখ রেখে বার্য সাহেবকে মৃত্যুর জন্য তৈরি থাকার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। তাঁর সেই কথা রেখেছিলেন তাঁর সাথীরা। তাঁর মৃত্যুর কয়েকদিনের মধ্যেই তাঁরা নিকেশ করে বার্যকে। ইভিএম নিউজ

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর