গ্রামে দিনের শেষে কিংবা বেলাতেও গা ছম ছমে পরিবেশ। চারদিক শুধু চাষের জমি দিয়ে ঘেরা। ওই চাষের জমির মাঝেই একপাশে রয়েছে কলা বাগান। একবার ভাবুন আপনি সেই কলা বাগান দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন আর হঠাৎই একটা আট ফুটের সুড়ঙ্গ দেখতে পেলেন। সেই সুড়ঙ্গটি কলা পাতা দিয়ে ঢাকা। আপনি যদি কলাপাতাটা সরান তাহলেই চিচিং ফাঁকের মতো সুড়ঙ্গে নামার সিঁড়িও দেখতে পাবেন। এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে এই গা ছমছমে পরিবেশে এমন সুড়ঙ্গে কে থাকেন? এমন পরিবেশে এই সুড়ঙ্গে একজন মানুষের বসবাস।
আজ্ঞে হ্যাঁ, এটা কোনও গল্প কথা নয়। এই সুড়ঙ্গ কাহিনী বেশ কয়েকদিন ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে চাঁদুড়িয়ায়। নদিয়া জেলার চাঁদুড়িয়া এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বলিদাপাড়ার বাসিন্দা সিরাজুল মণ্ডলের বাস ওই কলাবাগানের সুড়ঙ্গে। বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে রয়েছে তাঁর চাষের জমি। সেই তিন বিঘা জমিতেই কলা চাষ করেন তিনি। সেখানেই সুড়ঙ্গ বানিয়ে রাত্রিযাপনও করেন। বাড়িতে খুব একটা ফেরেন না। আর এই নিয়েই শুরু নানা জনের সুড়ঙ্গ জল্পনার।
এই প্রসঙ্গে সিরাজুল ওরফে রাজু বলেন, বাবা-মা মারা গেছেন বেশ অনেকদিনই আগে। কার টানে বাড়ি ফিরবেন তিনি? বছর পঞ্চাশের রাজুর বাড়িতে এখন শুধু মূক ও বধির দিদি রয়েছেন। আবাস যোজনায় ঘর পেলেও সেটি টাকার অভাবে পুরোপুরি তৈরি হয়নি। তাই কলাবাগানেই সারাদিন রাত খেটে টাকা রোজগারের চেষ্টা করছেন। মুড়ি, চিঁড়ে দোকানের পরোটা খেয়ে কেটে যায় একটা গোটা দিন। হনুমানের উপদ্রবের জন্য বাগান ছেড়ে বেরোতে পারেন না তাই ভাত খাওয়াও হয়ে ওঠে না। সেই জন্যই বাগানে থেকে সারাদিন কলা পাহারা দেন তিনি। সিরাজুলের বক্তব্য, হনুমান্রা জাতে তাঁকে সহজেই দেখতে না পায় সেই জন্যই তাঁর সুড়ঙ্গ-বাস। আর শুরঙ্গের মুখ কলা পাতা দিয়ে ঢেকে রাখা একই কারণে। স্থানীয়রা অবশ্য জানান, সিরাজুল ওরফে রাজুর ঘরে একবার সাপ দেখা যায়। সেই ভয় থেকেই তিনি সুড়ঙ্গ কেটে সেখানে রাত্রিবাস করছেন। তাঁর কথায় সুড়ঙ্গে রাত্রের ঘুমও নাকি খুব আরামদায়ক।