কথা

ব্যুরো নিউজ, ৬ ডিসেম্বর: রূপকথাকেও হার মানাবে ‘আতু’ র ক্যান্সার জয়ের কাহিনী

আতু। ফুটফুটে, সুন্দর, আদুরে। বাঁশবেড়িয়ার হংসেশ্বরী মন্দিরে গেলেই দেখা মিলবে তাঁর। সে ঘুর ঘুর করে লোকের পায়ে পায়ে। ভালবাসে আদর খেতে। সেই কোন ছোট বেলায় সে হংসেশ্বরী মন্দির চত্বরে এসেছিলো। তারপর সেই মন্দিরই হয়ে যায় তাঁর চিরস্থায়ী থাকার জায়গা। এখন আতুর বয়র ৫ বছর। আতু কোন দিন কাউকে তাড়াও করেনি। আর কোনদিন কাউকে কামড়ায়নি। অচিরেই তাঁর এ হেন স্বভাবের জন্য সে সকলের প্রিয় হয়ে ওঠে। সে খুব বাধ্য। পুরোহিত থেকে ভক্ত সে সকলের প্রিয়। ঠাকুরের উচ্ছিষ্ট খেয়ে সে দিব্যি বড় হয়ে উঠেছিলো।

কিন্তু এসব কিছুতে বাঁধ সাধল তাঁর শরীরে বাসা বাঁধা মারণরোগ ‘ক্যান্সার’। মারণরোগ ধরা পড়লো যখন ৪ বছরের চনমনে সেই আতু আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়লো। তাঁর জরায়ু থেকে রক্তক্ষরন হতে শুরু করলো। মাছির জ্বালায় সে তিষ্ঠতে পারত না। শুধু সেই জ্বালা নিয়ে সে এইদিক থেকে ওইদিক দৌড়ে বেড়াতো। খাওয়া দাওয়াও বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো তাঁর। ক্রমশ আতুর শরীর ভেঙ্গে হাড় দেখা দিতে লাগলো।

IPL-এর আগে মা আম্বের মন্দিরে মাহি

স্বভাবতই মনে প্রশ্ন উঠতেই পারে কে এই ‘আতু’? যাকে নিয়ে এতো কথা। আপনাদের এতক্ষন যার কথা বলছিলাম সে আর কেউ নয়। সে হোলো একটি সারমেয়। আতু দীর্ঘ ১ বছর এই মারণরোগের বিরুদ্ধে লড়েছিল। মন্দিরের সবাই বলেন, আতুর ক্যান্সার জয়ের কাহিনী রুপকথাকেও হার মানাবে। না। কোন দুশ্চিন্তার কারন এখন আর নেই। কারন একের পর এক কেমোথেরাপি ও দীর্ঘ চিকিৎসার ফলে আতু এখন সুস্থ। আর এখন সে আগের চেয়েও বেশি ফুটফুটে ও বলিষ্ঠ। আতু দর্শনার্থীদের দিকে হা করে তাকিয়ে থেকে তাদের পুজো দেখে। দু বেলা নিয়ম করে মায়ের মন্দিরের সামনে সে বসে থাকে। কেউ নাম ধরে ডাকলেই সে হাজির হয়ে যায়। ভক্তদের পায়ে মুখ ঘসে আদর করে দেয়। হংসেশ্বরী মন্দির ও লাগোয়া অনন্ত বাসুদেব মন্দির পুরাতত্ত্ব বিভাগের অধিনে। সেই পুরাতত্ত্ব দফতরের এক অস্থায়ী কর্মী প্রতাপ সিংহ পরে যায় সারমেয়টির মায়ায়। মারণরোগ ধরা পরার পরে সারমেয়টির এমন পরিস্থিতি তিনি মন থেকে মেনে নিতে পারছিলেন না। তিনি স্থানীয় ওষুধের দোকানের কর্মীর সাথে কথা বলে ওষুধ কেনেন ও নিজেই ইঞ্জেকশন কিনে আতুকে দিতে শুরু করেন। কিন্তু আতু ধীরে ধীরে কাহিল হতে থাকে।

একসময় শয্যাশায়ী হয়ে পরে সে। কিন্তু ওই যে কথায় আছে ‘রাখে হরি মারে কে?’। এরপর এরুপ পরিস্থিতির মধ্যেই এক মিরাকেল ঘটে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘সন্তু’ নামে বাংলাদেশের একটি পোষা সারমেয়র পেজ রয়েছে। তাঁর জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। সন্তুকে নিয়ে ওই পরিবার বারাসাতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। তাঁরা একদিন হংসেশ্বরী মন্দিরেও বেড়াতে আসেন। সন্তুকে দেখতে মন্দিরে ভিড় উপচে পরে। সুযোগ বুঝে প্রতাপবাবু আতুর সমস্যার কথা সেখানে সবাইকে জানান। তিনি এর ফল পেয়েছিলেন আশাতীত। সবার কাছ থেকে তিনি আতুর সাহাজ্যের জন্য অজস্র আশ্বাস পান। শুরু হয়ে যায় আতুর চিকিৎসা। আতুর কেমোথেরাপির ব্যাবস্থা করে ‘সন্তু’ নামের গ্রুপটি। পরপর ৫ টি কেমো দেওয়া হয় আতুকে। কেমোর ফলে আতুর সারা গায়ের লোম উঠে গিয়েছিলো। ওষুধ খেয়ে ফের আতুর সারা শরীর লোমে ভরে যায়। গত আট মাস ধরে সে সুস্থ জীবনযাপন করছে। এখন আতুর বেশিরভাগ সময় কাটে হংসেশ্বরী মায়ের মন্দিরে বসেই। প্রতাপবাবু ‘সন্তু’ নামের বাংলাদেশের ওই গ্রুপটিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। ইভিএম নিউজ 

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর