ইভিএম নিউজ ব্যুরো, বোলপুরঃ  বিশ্বকবির বিশ্বভারতীতে বিতর্ক যেন কিছুতেই থামতে চাইছে না। পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই মুহূর্তে কেষ্টহীন বীরভূমে শাসকদলের ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখার দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন খোদ তৃণমূল সুপ্রিম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি প্রায় তিন দিনের বীরভূম সফরে, সেখানে নোবেল জয়ী অমর্ত্য সেনের বাড়িতে গিয়ে, কেন্দ্রীয় শাসকদল তথা বিশ্বভারতীর উপাচার্যকে একের পর এক আক্রমণ শানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। যা নিয়ে এবার পাল্টা মুখ্যমন্ত্রী কেই নজিরবিহীন ভাষায় আক্রমণ করলেন, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। বুধবার সন্ধ্যায় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফে প্রকাশ করা একটি বিবৃতিতে স্পষ্ট লেখা হয়েছে, “পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী কান দিয়ে দেখেন।” আর এই কথাগুলো উপাচার্যের, সেটাও বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে ওই বিবৃতিতে। সেখানে এমনও লেখা হয়েছে, যে ‘স্তাবকেরা’ যা বলেন, মুখ্যমন্ত্রী সেটাই বিশ্বাস করেন।
প্রসঙ্গত, দিনকয়েক আগেই জমি বিতর্কের জেরে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে নিশানা করেছিলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। নির্দিষ্ট মালিকানা থেকে ১৩ রেশমেল জমি অমর্ত্য সেন দখল করে রেখেছেন বলে, গত বেশ কিছুদিন ধরেই লাগাতার প্রচার করে আসছে, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের দাবি জমি সংক্রান্ত এই বিষয়টি নিয়ে তিনবার অধ্যাপক অমর্ত্য সেনকে চিঠিও পাঠানো হয়েছিল। সেই নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ার পরে, অমর্ত্য সেনের নোবেল পুরস্কার পাওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন স্বয়ং উপাচার্য।
সাম্প্রতিক বীরভূম সফরে গিয়ে, প্রথম তিনি অমর্ত্যের বাড়িতে গিয়ে সেই বিতর্কে নতুন ঘি ঢেলে ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। জমির নথি সংক্রান্ত একটি কাগজ নোবেল জয়ীর হাতে তুলে দিয়ে, তাকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছিলেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমন কি বিষয়টি নিয়ে তিনি, প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়েরও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
আর এরপরেই রাজ্য বনাম বিশ্বভারতীর লড়াইয়ে বাড়তি মাত্রা জুড়ে, মমতা দেখা করেছিলেন বিশ্বভারতীর সাসপেন্ড হওয়া কয়েকজন পড়ুয়া, অধ্যাপক আর কর্মচারীর সঙ্গে। তাঁদের অভাব অভিযোগ শোনার পর মমতা বলেছিলেন, “যদি কেউ মনে করেন, ক্ষমতার জোরে মেরুকরণ, গৈরিকীকরণ করবেন, তা হলে ওঁদের সঙ্গে আমি আছি।”
সেদিনের সেই ঘটনা যে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ খুব ভালো চোখে দেখেনি, বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জারি হওয়া বিবৃতিতে সেটাই যেন স্পষ্ট হল। বিবৃতিতে মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বলা হয়েছে, “বিশ্বভারতীতে এখন ৪৭৩ জন শিক্ষক, প্রায় ১৫ হাজার ছাত্রছাত্রী এবং ৭৫০ জন কর্মচারী বন্ধু রয়েছেন। তার মধ্যে একজন শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের বক্তব্য শুনে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে আক্রমণ করলেন। এটা (মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে) অস্বাভাবিক নয়, কারণ তিনি কান দিয়ে দেখেন। অধ্যাপক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে (উনি) যে অভিযোগ করেছেন, সেটা সর্বৈব ভুল। এটা ছিল একটা প্রস্তাব, যা নিয়ে ওই অধ্যাপক মামলা করেছেন। অতএব বিষয়টা বিচারাধীন। মহামান্য আদালত এখনও কোনও সিদ্ধান্ত জানাননি। ফলে আগেভাগে এনিয়ে মন্তব্য করে মুখ্যমন্ত্রী কি একটু বাড়াবাড়ি করলেন না?”
এখানেই শেষ নয়। যে সম্প্রতিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শাসকদলের নেতামন্ত্রীদের জেলে যাওয়া নিয়েও, বুধবার বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের জারি করা বিবৃতিতে, মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে বলা হয়েছে, “আজ আপনার মনোনীত মন্ত্রী ও উপাচার্য গারদের ভিতরে। এটা কী করে হল? কারণ আপনি স্তাবকদের কথা শুনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেই বিধ্বস্ত।” নাম না করে গরু পাচার মামলায় জেলবন্দি অনুব্রত মণ্ডলের প্রসঙ্গ তুলে ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “আপনার প্রিয় শিষ্য, যাঁকে না হলে আপনি বীরভূম ভাবতে পারতেন না, তিনিও জেলে। কবে বেরোবেন কেউ জানেনা। আগে থেকে (অনুব্রতকে!) সাবধান করলে আপনি দুর্নাম থেকে বাঁচতে পারতেন।”
আর এই বিবৃতি প্রকাশ পাওয়ার পরেই পাল্টা বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কে নিশানা করতে দেরি করেনি, রাজ্যের শাসকদলও। রাজ্য বিধানসভার উপ মুখ্যসচেতক বর্ষিয়ান বিধায়ক তাপস রায়ের মন্তব্য, উপাচার্যের তরফে যে বিবৃতি জারি করা হয়েছে, সেটা আসলে রাজনৈতিক দলের ভাষা।
একদিকে নিয়োগ দুর্নীতি প্রতিবাদে রাজপথে বসে দিনের পর দিন চাকরির দাবি জানানোর পাশাপাশি আদালতে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, অসংখ্য বঞ্চিত শিক্ষক। অন্যদিকে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের ব্যক্তিগত জমিসংক্রান্ত বিতর্কে তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে, রাজনৈতিক আর আইনি লড়াইয়ের হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। এই পরিস্থিতিতে বিরোধী শিবির এবং রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের প্রশ্ন— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গুন আছে বলে, অমর্ত্য সেন সম্প্রতিক যে মন্তব্য করেছিলেন, তার পাশে দাঁড়ানোটা কি সেই প্রশংসারই পাল্টা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ?

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর