ইভিএম নিউজ ব্যুরো, ১১ এপ্রিলঃ শুধু মুসলমানরাই ইমাম ভাতা পাবে,মোহাজ্জিন ভাতা পাবে তা নয়, সকল ব্রাহ্মণ এবং অব্রাহ্মণ পুরোহিতরাই যেন ভাতা পায়, সেই দাবিতে নদীয়ার বগুলার গৌরহরি মডার্ন টোলের পক্ষ থেকে সোমবার বগুলায় এক বিশাল মিছিল করা হল। রীতিমতো ব্যানার,পোস্টার হাতে নিয়ে হয় সেই মিছিল। সেই মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন মতুয়া,মাহিষ্য সহ নমঃশূদ্র এবং ব্রাহ্মণ ও অব্রাহ্মণরা।
ওই টোলের কর্ণধার অভিরাম বিশ্বাস জানিয়েছেন,’পুরোহিত মানেই পরের হিত করা। আগে স্কুল কলেজ ছিল না, টোলের মাধ্যমে পড়াশোনা হত। গত ৮ বছর ধরে আমরা এই টোল চালিয়ে যাচ্ছি। অথচ মুসলমানদের ইমাম ভাতা, মোহাজ্জিন ভাতা দেওয়া হলেও ব্রাহ্মণ,অব্রাম্মণ পুরোহিতরা সেই ভাতা পান না।দীর্ঘদিন ধরেই আমরা ব্রাহ্মণ, অব্রাহ্মণ পুরোহিতদের ভাতা দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছি। আমরা চাই,সকলের জন্য হোক সমান অধিকার। মাদ্রাসা এবং বিভিন্ন স্কুল কলেজে যেমন শিক্ষা দেওয়া হয়ে থাকে, তেমনই আমাদের টোলের মাধ্যমে ব্রাহ্মণ এবং অব্রাহ্মণ পুরোহিতদের পৌরহিত্যেরদের শিক্ষা দেওয়া হয়। আমরা চাই,সরকার আমাদের দাবি পূরণ করুক।
মূলত, বাড়িতে বিভিন্ন পূজোর ক্ষেত্রে এখন দেখা যায় পুরোহিতের অভাব। অনেক সময় ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে উপোস থেকে পুজোর জোগাড় হয়ে যাওয়ার পরেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পুরোহিত আসেন না। বাড়ির কচিকাঁচারা উপোস থেকে শেষপর্যন্ত শুধুমাত্র পুরোহিতের কারণে ভীষণ কষ্ট ভোগ করে। বাড়ির কর্তা পুরোহিত সঠিক সময় না আসায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন, যদি কোন পুরোহিত ধরা যায়, সেই আশায়। অবশ্য তাতেও সমাধান হয় না সবক্ষেত্রে। সরস্বতী পুজো করতে গিয়ে হয়ে যায় টেনশন।শুধু সরস্বতী পুজোই নয় লক্ষ্মীপূজো, গণেশ পুজো, কার্তিক পুজো সহ একাধিক পূজার ক্ষেত্রেই পুরোহিতের অভাবে টেনশন ভোগ করতেই হয় পুজো উদ্যোক্তাদের।সেই টেনশন মেটাতে এবার পুরোহিতের যোগান দিচ্ছেন নদীয়ার হাঁসখালি ব্লকের বগুলার গৌরহরি মিশন মডার্ন টোলের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পুরোহিতরা।যদিও তাদের মধ্যে মহিলাদের সংখ্যাই বেশি। তাদের মধ্যে অনেকেই এবার বাংলা নববর্ষের গণেশ এবং লক্ষ্মীপূজো করবেন।ওই মিশনের কর্ণধার অভিরাম বিশ্বাস জানিয়েছেন,’সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অব্রাহ্মণদেরও পৌরহিত্য করার অধিকার রয়েছে।সেই নির্দেশ মেনে আমরা অব্রাহ্মণকে পৌরহিত্য করার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি।’বগুলা স্টেশন থেকে নেমে মাত্র পাঁচ মিনিটের দূরত্ব ঈশ্বর শশধর মল্লিকের বাড়ি।সেই বাড়িতেই বর্তমানে গৌরহরি মিশন মডার্ন টোলের হেডকোয়ার্টার।ওই টোলের বর্তমানে আরও ৫২টি শাখা রয়েছে।এর আগে ওই মিশন থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে কাননবালাদেবী সহ বেশ কয়েকজন মহিলা বিভিন্নরকম দেব-দেবীর পূজো করছেন।ওই মিশনের কার্যকরী কমিটির সদস্য মিল্টন বিশ্বাস জানিয়েছেন,’বছরে নির্দিষ্ট দিনে আমরা পৌরহিত্যের প্রশিক্ষণ দেওয়ার শুরু করার আগে উপনয়নের ব্যবস্থা করি। ইতিমধ্যেই অনেক মহিলা এবং পুরুষকে উপনয়ন দিয়ে তাদের পৌরহিতদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।তাদের মধ্যে মহিলাদেরই ছিল আধিক্য। বিকল্প পেশা হিসেবে পৌরহিত্যের কাজে উৎসাহিত হচ্ছেন মহিলারা। কয়েকদিন আগে কোলে বাচ্চা নিয়েও উপনয়ন নিতে এসেছিলেন বেশ কয়েকজন মহিলা।তাদের দেখভাল করছিলেন কাননদেবী। তিনি গত দু’বছর ধরে দুর্গাপুজোতেও পৌরহিত্যের ভূমিকা পালন করছেন।
কয়েকদিন আগে ৭০ জন অব্রাহ্মণদের পৌরহিত্যের প্রশিক্ষণ দেওয়ার শুরুর আগে উপনয়ন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।ওই মিশনের অন্যতম দায়িত্বপ্রাপ্ত নলিনী রায় মন্ত্র পাঠ করে উপনয়ন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। চাকদহের নরেন্দ্রপল্লীর বাসিন্দা দেবাশীষ পাঠকের মাধ্যমে মহিলা এবং পুরুষদের উপনয়ন দেওয়া হয়। এরপর তারা পৌরহিত্যের প্রশিক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন পুজো মন্ডপ থেকে শুরু করে বাড়ির পুজোর ক্ষেত্রেও পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করবেন। কেন তারা পৌরহিত্যের প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য উদ্যোগী হয়েছেন, সেই বিষয়ে প্রায় সকলেরই বক্তব্য,’আমরা পুজো করি বাড়িতে।নিয়ম নিষ্ঠা পালন করতে পারি না, না জানার কারণে।তাই আমাদের ইচ্ছে, নিয়ম নিষ্টার সঙ্গে পুজো করার। প্রশিক্ষণ নিয়ে অন্তত আমরা বাড়ির পূজোটা নিষ্টার সঙ্গে করতে পারব।এরপর যদি পারি, তাহলে পুজো মণ্ডপ শুরু করে অন্যের বাড়িতেও আমরা পৌরহিত্যেরর দায়িত্ব পালন করতে পারব। গৌরহরি মিশন এবং মডার্ন টোলকে সরকারি স্বীকৃতি দেওয়া এবং ইমাম ভাতার মত হিন্দু পুরোহিতদেরও সকলকে ভাতা দেওয়ার দাবিতে গত ৮ জানুয়ারি বগুলাতে এবং তারপরে কৃষ্ণনগরে ডিএম অফিসে সেই দাবিতে বিশাল মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন অনেকেই।আবার বগুলাতে সোমবার হল মিছিল । এই মিছিলে দেখতে রাস্তার দুপাশে বহু মানুষ ভিড় জমান । তারা জোরের সঙ্গে বলেন ভাতার জন্য কি এবার ধর্মান্তকরণ হতে হবে। প্রশ্ন অনেক, উত্তর অজানা।