ব্যুরো নিউজ, ১৪ নভেম্বর: পূর্ব বর্ধমানের রায়নায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে
পূর্ব বর্ধমানের রায়না ১ ব্লকে ফের প্রকাশ্যে এসেছে, বিধায়ক গোষ্ঠী বনাম তৃণমূলের ব্লক সভাপতি গোষ্ঠীর মধ্যে চূড়ান্ত কাদা ছোড়াছুড়ি। একদিকে বিধায়ক গোষ্ঠীর লোক ব্লক সভাপতি ঘনিষ্ঠ পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষকে মঞ্চ থেকে চোর, সিপিএমের হার্মাদ বলে অপবাদ দিচ্ছে। অন্যদিকে তারই পাল্টা প্রতিবাদে খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ সাংবাদিক বৈঠক করে বিধায়ক ঘনিষ্ট নেতাকে রীতিমত তুলোধোনা করে ছাড়লেন। পাশাপাশি মহ: ইসমাইল ওরফে শান্ত নামে ওই বিধায়ক ঘনিষ্ঠ নেতাকে মাতাল, চরিত্রহীন, তোলাবাজ বলেও কটাক্ষ করেছেন রায়না ১ পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ জাহানুল হক।
জয়নগরে জোড়া খুন| পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ
পূর্ব বর্ধমান জেলার রায়না ১ ব্লকে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। ব্লক সভাপতি বামদাস মন্ডল ও বিধায়ক শম্পা ধারা বলেন, গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব একপ্রকার সর্বজনবিদিত। বারবার এই দুই শিবিরের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব খবরের শিরোনামে এসেছে। এবার আবার একেবারে প্রকাশ্যে এলো।
মহ: ইসমাইল মঞ্চ থেকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, “বর্তমান পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ এক সময় সিপিআইএমের হার্মাদ ছিলেন। একসময় তিনি বিজেপির সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখেছিলেন। পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ থাকা অবস্থায় খাদ্য দপ্তরের আনুষঙ্গিক বিভিন্ন বিষয়ে দুর্নীতি করছেন একের পর এক। রেশন ডিলারদের কাছ থেকে তোলাবাজি নিয়ে চালাচ্ছে ওই নেতা। মানুষ সব দেখছে”। বিধায়ক ঘনিষ্ট তৃণমূল নেতার প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে এহেন বক্তব্যে সরগরম রায়নার রাজনৈতিক মহল। বিধায়ক ঘনিষ্ঠদের এমন মন্তব্যের জবাব দিতে ছাড়েননি ব্লক সভাপতি ঘনিষ্ঠরাও। খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ জাহানুল হক বলেন, ‘বিধায়কের সঙ্গে থাকলে আমরা তৃণমূল আর ব্লক সভাপতির সঙ্গে থাকলে আমরা সিপিএমের হার্মাদ। কিন্তু গত বিধানসভা নির্বাচন বা তার পরবর্তী সময়ে এই অবস্থা ছিলনা। তিনি আরো বলেন বিধায়ক ঘনিষ্ঠরা যে সমস্ত অভিযোগ করেছেন তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মিথ্যা। সভাপতির বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে আমি এবং আমরা আদালতে মানহানির মামলা করব তৃণমূল নেতা শেখ মহম্মদ ইসমাইলের (শান্ত) বিরুদ্ধে। যারা এই অভিযোগ করছেন তারা পঞ্চায়েতের গাছ বিক্রির দুর্নীতি সহ একাধিক দুর্নীতিতে যুক্ত। আমার কাছে প্রমাণ আছে”।
জাহানুল হক প্রশ্ন তুলেছেন, “ওই তৃণমূল নেতার এতো বিলাসিতার টাকা আসে কোথা থেকে? ওর বাবা তো একসময় নাইট গার্ডের কাজ করতো। দেড় বিঘা জমি ছিল ওদের। এখন শমসপুরে একটা দোতলা বাড়ি, সেটা আবার সিসি ক্যামেরায় মোড়ানো। বর্ধমানের লক্ষ্মীপুর মাঠে দোতলা বাড়ি, নবাব হাটের কাছে দুটি জমির প্লট, নিজের স্কর্পিও গাড়ি, বউয়ের চাকরি – এইসব এলো কোথা থেকে। এতো বড় নেতা যে এরপরেও নিজের গ্রামেই থাকতে পারে না। ওর নিজের সোর্স অফ ইনকাম কি? সব জায়গায় নিজের প্রভাব খাটিয়ে কখনো সরকারি গাছ বিক্রি করে, কখনো সৎ মানুষের সঙ্গে বেইমানি করে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করেছেন। এমনকি বিয়ে করবে বলে মেয়ের বাড়ি থেকে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে একসময় তার মীমাংসা করে মেটাতে হয়েছিল দলের নেতাদের। নারীঘটিত প্রচুর অভিযোগের কাগজ রয়েছে আমার কাছে। এইসব সবকিছুর প্রমাণ আমার কাছে আছে। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগকারী তার স্ত্রীর চাকরি করেছেন নিজের প্রভাব খাটিয়ে। এক সময় তিনি নিজেও সিপিএম পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এমনকি ব্লক সভাপতি বামদাস মন্ডলকে প্রাণে মেরে ফেলারও চক্রান্ত করেছিলেন এই নেতা”।
এদিকে তৃণমূলের অন্দরে এহেন কাদা ছোড়াছুড়ি নিয়ে বিরোধী দলগুলো কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। সিপিআইএম এর রায়না ১ এরিয়া কমিটির সভাপতি কওসের আলী বলেন, “প্রবাদ আছে চোরে চোরে মাসতুতো ভাই। কিন্তু এখন দেখছি চোরে চোরে আপন ভাই। আসলে তৃণমূল দলের প্রায় সবাই চোর, তার প্রমাণ ইডি, সিবিআই এর হাতে নেতা, মন্ত্রীদের গ্রেপ্তারি। এই সমস্ত চোরেদের দলকে আগামী নির্বাচনে প্রত্যাখ্যান করবে এলাকার সাধারণ মানুষ।’ অন্য দিকে বিজেপির রায়না বিধানসভার প্রার্থী মানিক রায় বলেন, ‘আসলে তৃণমূল দলটারই কোনো অস্তিত্ব নেই। আর কিছু দিন অপেক্ষা করুন তৃণমূল দলের সমস্ত নেতাদের ঠাঁই হবে শ্রীঘরে”। ইভিএম নিউজ