সঙ্কল্প দে, ২৭ মার্চঃ(LATEST NEWS) পায়রাই জীবন। হ্যাঁ পায়রাই জীবন। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের কচুয়া বোয়ালমারী এলাকার বাসিন্দা রঞ্জিত সরকার দীর্ঘ ৩৬ বছর ধরে পায়রা পোষেন। তাঁর কাছে রয়েছে হরেক রকমের পায়রা।শুধু মাত্র শখ কিংবা বিনোদনের জন্য এই ভালোবাসা নয়। ছোটবেলায় এক ব্যক্তিকে পায়রা কিনে আনতে দেখেছিলেন তিনি। জিজ্ঞাসা করেছিলেন,” কি করবেন এই পায়রা গুলি দিয়ে?” তৎক্ষণাৎ সেই ব্যাক্তি বলেন, ” কেটে মাংস রান্না করে খাবো।” মায়া জন্মায় ছোট্ট রঞ্জিতের। জেদ ধরেন পায়রাকে ভালবাসবেন। আর সেই থকেই শুরু পায়রা পোষা।
১৯৮৭ সাল থেকে শতাধিক পায়রা পুষেছেন রঞ্জিত। নীল-ধূসর, কালো, সাদা সব রঙেরই পায়রা রয়েছে তাঁর কাছে। রঞ্জিতের পায়রার যা চাহিদা তাতে করে সেই পায়রা বিক্রি করে অর্থ উপার্জনেরও উপায় ছিল তাঁর কাছে। কিন্তু সেই উপায় অবলম্বন করেননি তিনি। কারণ ভোগে নয়, ত্যাগে বিশ্বাসী রঞ্জিত জানেন, বিক্রি করলে যে ভোগীদের ভোগ-সামগ্রী হয়ে যাবে তাঁর ভালবাসার পারাবত।
রঞ্জিত বাবুর পায়রা প্রেম দেখে প্রতিবেশীরা তো তাঁর নামই দিয়ে দিয়েছেন ‘কবুতর’। কেউ আবার ভালোবেসে ‘জারসি’ বলেও সম্বোধন করেন। প্রতিবেশীরা এই সব নামে ডাকলে রাগ ঢাক না করে বেশ উপভোগই করেন তিনি। পায়রার জন্য যেমন সুন্দর ঘর রয়েছে তেমনই সুষ্ঠ পরিচর্যা, রক্ষণাবেক্ষণ এমনকি ব্যবস্থাপনাতেও কোন খামতি নেই রঞ্জিতের। প্রাচীন কালে কবুতরের মাধ্যমে বার্তা আদান-প্রদান হত। রঞ্জিতের বাড়িও সীমান্তবর্তী এলাকায় হওয়ায় অনেক সময়তেই তাঁর দু-একটি পায়রা উড়ে চলে যায় বাংলাদেশে। তবে কিছুদিন পর ফের নিজের ঘরে ফিরে আসে তারা। তবে দু-দেশের মানুষদের মধ্যে কোন বার্তা আদান প্রদান করেনা তারা।
বর্তমানে রঞ্জিতের সংগ্রহে রয়েছে ষাটটি পায়রা । প্রতীক চিহ্ন হিসেবে প্রতিটি পায়রার পায়ে লাগানো রয়েছে একটি বেল্ট। যাতে করে কোথাও হারিয়ে গেলে তাদের সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়। রঞ্জিত বলেন , কখনও কখনও তাঁর পায়রাগুলো সিকিম, ভুটান, নেপাল এমনকি অসমেও ঘুরতে চলে যায়। পাহাড়ি এলাকায় ঘুরতে ভালবাসেন যে তাঁর কপোতেরা। প্রতীক চিহ্ন দেখে তাঁর অনুগামীরাই ছবি তুলে তাঁকে দেখিয়েছে। ঘোরা হয়ে গেলেই কিছুদিনের মধ্যে ফের নিজের ঘরে ফিরে চলে আসে তারা। রঞ্জিতের তাই প্রতিজ্ঞা, যতদিন বেঁচে থাকবেন সঙ্গী থাকবে তাঁর কবুতরেরাই।(EVM News)