নেশা মুক্তির চিকিৎসা
বর্তমান আধুনিক সমাজে নেশা এক জীবন্ত অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে। সমাজ, সংসার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এই নেশার কবলে পড়ে ।নেশাকে কেন্দ্র করে স্বামী স্ত্রীর অশান্তি, ডিভোর্স, বাবা-মাকে
পর্যন্ত খুন করা এইসব ঘটনা হামেশাই চোখে পড়ে। নেশার কবলে পড়ে ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুল কলেজ জীবন নষ্ট করে ফেলছে।
বলা যেতে পারে একপ্রকার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বর্তমান প্রজন্মের মেরুদন্ড।
নেশার বস্তু হিসেবে সাধারণত ব্যবহার হয়ে থাকে মদ ,গাঁজা, হিরোইন ,ব্রাউন সুগার, কোকেন ,ফেনসিডিল এর মত নিষিদ্ধ কাফ সিরাপ, বিভিন্ন রকম পেইনকিলার অর্থাৎ ব্যথা নাশক ওষুধ।
হিরোইন ব্রাউন সুগার যারা দীর্ঘদিন ব্যবহার করছে তাদের মধ্যে অনিদ্রা ,ক্ষুধামন্দ, মানসিক অবসাদ, হতাশা, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, মাংসপেশী দুর্বলতা ,আংশিক প্যারালাইসিস বা বা পখ্যা ঘাত এইসব রোগ হতে পারে। রোগ প্রতিরোধ শক্তি ভেঙ্গে পড়ে ফলে টিবি ,এইডস এর মত মারনরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায় ।এছাড়াও শ্বাস কষ্ট, যৌন দুর্বলতা, পরবর্তী সময় সম্পূর্ণ অক্ষমতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাড়ির ইনফেকশন অর্থাৎ মুখে দুর্গন্ধ, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, আর্থাইটিস দেখা যায়।
যারা মদের নেশায় আক্রান্ত তাদের শরীরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে অর্গানিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে লিভার বা যকৃত। অ্যালকোহল হেপাটিক সেলকে ভীষণভাবে ড্যামেজ করে। ফ্যাটি লিভার, সিরোসিস অফ লিভার এমনকি লিভার ক্যান্সারেরও অন্যতম কারণ হচ্ছে এই অ্যালকোহল। লিভার মানব শরীরের একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা আমাদের শরীরের বায়োকেমিক্যাল ল্যাবটরিও বটে ।লিভারে বিভিন্ন রকমের এনজাইম তৈরি হয় যেমন পিত্তরস, যা আবার গলব্লাডারে এসে জমা হয়। আবার শরীরে যে বিভিন্ন রকমের টক্সিন পদার্থ উৎপাদিত হয় তা বিভিন্ন রকম বিপাকীয় পদ্ধতি বা মেটাবলিজমের মাধ্যমে যা লিভার কিডনির মাধ্যমে রক্ত থেকে ছেঁকে নিয়ে ইউরিন বা মূত্রের আকারে দেহ থেকে বের করে দেয়।
পেইনকিলার বা ব্যথার ওষুধ খেয়ে যারা নেশা করে তাদের মস্তিষ্কের কোষ অর্থাৎ ব্রেইন সেল ড্যামেজ হয়ে যায়। স্মৃতি শক্তি কমে যায় ও কিছু শিখবার ক্ষমতা কমে আসে। ভাসকুলার স্টেনোসিস অর্থাৎ রক্তনালী সংকুচিত হবার ফলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। রক্তনালী সংকুচিত হলে ডিস্টাল পার্ট অফ দি বডি যেমন ফিমোরাল আটারি আক্রান্ত হতে দেখা যায়। অর্থাৎ আমাদের থাই মাসেলের ভেতর ফিমার নামক লম্বা যে হাড়টি রয়েছে। তার মাথাটি রক্তের অভাবে ক্ষয় হয়ে যায়। এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি হিপ জয়েন্ট এর যন্ত্রণায় কষ্ট পায়। আর অবশেষে সার্জারি করে রিপ্লেসমেন্ট করতে হয়।
খৈনি, গুটকা, গুড়াকু ইত্যাদি থেকে ওরাল কারসিনোমা বা মুখ গহ্বরে ক্যান্সার হতে দেখা যায়।
এইরকম ক্ষেত্রে নেশা মুক্তি কেন্দ্র বা দি অ্যাডিকশন সেন্টার এর শরণাপন্ন হয় বাড়ির লোকজন। তবে সেখানে কয়েক মাস সুস্থ থাকার পর বাড়ি ফিরলে আবার বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে সব ভুলে গিয়ে পুরনো অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবনে ফিরে যায়।
এরকম ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার বিশেষ ভূমিকা আছে এই রোগীর ব্যাপারে কাউন্সিলিং করে সম্পূর্ণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন ওষুধ নিয়মিত একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খাওয়ালে নেশা আক্রান্ত ব্যক্তিরা সম্পূর্ণ রূপে নেশা মুক্ত হন। এক্ষেত্রে ওষুধ ছাড়াও ওই নেশা আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে বাড়ির লোকেরা কিরূপ ব্যবহার করবে কিভাবে না বলে ওষুধ খাওয়াবে? কি কি খাবার খাওয়াবে আর কি খাওয়াবে না সমস্ত কিছুই গাইডলাইন মেনে চলতে হবে।
নেশা মুক্তির চিকিৎসা | ডঃ জয়ন্ত তাপাদার [ ডি.এইচ.এম.এস (কলকাতা)] যোগাযোগ- ৮২৫০৬২৭২০৩/ ৯৪৭৪৭৩২৯০১ ইভিএম নিউজ