ইভিএম নিউজ ব্যুরো, ২৭ ফেব্রুয়ারিঃ তারিখটা ছিল ২০২২ এর ২১শে মার্চ। বীরভূমের রামপুরহাটের অন্তর্গত বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল উপপ্রধান ভাদু শেখ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হওয়ার পর পরই পাঁচটি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনাকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল বীরভূম সহ গোটা বকটুই গ্রাম। উদ্ধার হয়েছিল ২ শিশু সহ মোট ৮ জনের দগ্ধ মৃত দেহ। শিহরিত হয়েছিল গোটা বাংলার মানুষ।এই ঘটনার পরই ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে চিঠি লিখে বাংলায় ভারতীয় সংবিধানের ৩৫৫ ধারা কার্যকর করার দাবি জানিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ফের একবার কোচবিহার জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের দাবি তুললেন বিরোধীরা।
গত শনিবার দিনহাটার বাসন্তীতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের কনভয়ের ওপরে হামলা ও ভাঙড় কাণ্ডে ধৃত ISF বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকিকে দিনের পর দিন জেলে আটকে রাখার ঘটনার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ দাবি করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখে রাজ্যে ৩৫৫ ধারা প্রয়োগের জন্য আর্জি জানালেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাছাড়াও গত এক বছরে কোচবিহার জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগের বলেও জানান শুভেন্দু।
কিন্তু কোচবিহার জেলার গত একবছরের পরিস্থিতিটা ঠিক কিরকম ?
১) ২০২২এর মার্চঃ দিনহাটা -১ ব্লকের ভেটাগুড়ি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল কার্যালয় ভাঙচুর।
২)২০২২এর জুলাইঃ বিজেপির সভা ঘিরে দুই শিবিরের কর্মী- সমর্থকদের সংঘর্ষ।
৩)২০২২এর অগস্টঃ তিরবিদ্ধ তৃণমূলের ভটাগুড়ি-১ অঞ্চল সভাপতি অনন্ত বর্মণ।
৪)২০২২এর অক্টোবরঃ দিনহাটা শহরে বিজেপি নেতা অজয় রায়ের বাড়িতে বৈঠক চলাকালীন তৃণমূলের বিক্ষোভ।
৫)২০২২এর নভেম্বরঃ সিতাইয়ে নিশীথ প্রামাণিকের কনভয়ে ‘হামলা’।
৬)২০২৩এর ২৪ শে ফেব্রুয়ারিঃ ভেটাগুড়ির রুইয়েরকুঠি গ্রামে তৃণমূল নেতা বিপুল বর্মণের বাড়ি ভাঙচুর।
৭)২০২৩এর ২৫ শে ফেব্রুয়ারিঃ নিশীথকে কালো পতাকা দেখানোর পাশাপাশি দু’পক্ষের সংঘর্ষ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর গাড়িতে গুলি চালানোর অভিযোগ।
কিন্তু এই ৩৫৫ ধারা আদতে কি?
ভারতীয় সংবিধান অনুসারে রাজ্যের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব রাজ্য পুলিশ প্রশাসন ও রাজ্য সরকারের ওপর বর্তায়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট রাজ্যে কোনোরকম বাহ্যিক আগ্রাসন এবং আভ্যন্তরীণ অস্থিরতার পরিস্থিতি তৈরি হলে, সংশ্লিষ্ট রাজ্যে ভারতীয় সংবিধানের এই ৩৫৫ ধারা প্রয়োগ করে, কেন্দ্রকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি সামাল দিতে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা দেয় স্বয়ং রাষ্ট্রপতি। এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট রাজ্যে সবকিছু সংবিধান মেনে চলছে কি না, তাও দেখার ক্ষমতা রাখে কেন্দ্র। তবে তা ভারতীয় সংবিধানের ৩৫৬(জরুরী অবস্থা) ধারা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। ১৯৯৪ সালের সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, কোন রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা জনিত সমস্যা তৈরি হলে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের কথা চিন্তা করে কেন্দ্রীয় সরকার ৩৫৫ অনুচ্ছেদের সম্পূর্ণ ব্যবহারের পর যদি পরিস্থিতি আয়ত্তে না আসে, তবেই সংশ্লিষ্ট রাজ্যে ৩৫৬ ধারা বাস্তবায়ন করা সম্ভবপর হবে।
গত শনিবার পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী দিনহাটায় গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক। সেখানেই বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। স্থানীয় সূত্রে খবর, বুড়িরহাট এলাকায় তাঁর কনভয় পৌঁছনো মাত্রই তৃণমূল কর্মীরা তাঁকে কালো পতাকা দেখাতে শুরু করে। এর পরই সেখানকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে। হাতাহাতিতেও জড়িয়ে পড়েন তৃণমূল এবং বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। ঢিল ছুড়ে গাড়ির কাচ ভাঙার পাশাপাশি কনভয়ে গুলি চালানোরও অভিযোগ ওঠে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। নিশীথের অভিযোগ, ঘটনার পর হামলাকারীদের আটক না করে রাতভোর অভিযান চালিয়ে ২১ জন বিজেপি কর্মী- সমর্থককেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এটাই বাংলার বর্তমান পরিস্থিতি।
ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছেন বাংলার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও। শনিবার সন্ধ্যার হামলার ঘটনাকে ‘শোচনীয়’ আখ্যা দিয়ে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যপাল নিজেই।তাই শুভেন্দুর ৩৫৫ প্রয়োগের পাশাপাশি আজ সোমবার এই মর্মে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবেরও দৃষ্টি আকর্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য বিজেপি।