ইভিএম নিউজ ব্যুরোঃ রাজনৈতিক নেতামন্ত্রীর পর এবার অভিনেত্রী। তদন্তে নেমে এবার শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে একজন অভিনেত্রীর যুক্ত থাকার প্রাথমিক ইঙ্গিত পেলেন কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডি-র গোয়েন্দারা। আর সোমবার সেই সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট কলকাতা হাইকোর্টে জমা দেওয়ার পর, রীতিমতো অবাক হলেন, বিচার অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ওই অভিনেত্রীর নামসহ যাবতীয় তথ্য হলফনামা দিয়ে আদালতে পেশ করারও নির্দেশ দিলেন ক্ষুব্ধ বিচারক।
একইসঙ্গে এদিন অতিরিক্ত পদ সৃষ্টি করে বঞ্চিত প্রার্থীদের চাকরি দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তেরও ফের সমালোচনা করেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। হুঁশিয়ারির সুরে তিনি বলেন, “কিছু দালাল এখনও চাকরি বিক্রি করার চেষ্টা করছে। আর কিছু দালাল সেই চেষ্টাকে আড়াল করতে চাইছে। মনে হচ্ছে কিছু দুষ্কৃতী রাজ্যটাকে ধ্বংস করে দিতে চাইছে। এদের কারোকে রেয়াত করা হবে না”।
শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির একটি মামলা সোমবার আদালতে উঠলে, সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া হুগলির যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষের বাড়ি থেকে ১৮৯ টি ওএমআর সিট উদ্ধারের রিপোর্ট দাখিল করেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার আইনজীবী। আর সেখানেই কোনও এক অভিনেত্রীর যুক্ত থাকার ইঙ্গিত পেয়ে, রীতিমতো ক্ষুব্ধ হন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ঈদের তরফে দাখিল হওয়া ওই রিপোর্টে জানা গেছে, একটি রাজনৈতিক দলের যুব সংগঠনের ওই নেত্রী তথা অভিনেত্রীর ফ্ল্যাট কেনা থেকে যাবতীয় আসবাবপত্রের খরচ দিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে দ্রুত হুগলির যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষ। আর এই যাবতীয় বিষয়ে জানার পরেই পর্ষদের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বিচারপতি এদিন বলেন, “যেসব পরীক্ষার্থীর ওএমআর সিট ধৃতের বাড়ি থেকে পাওয়া গেছে, তাঁরা যাতে আগামী ২৫ বছর কোনও নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারে, সেই ব্যবস্থা করব। দরকার হলে আন্দামানে পাঠিয়ে দেব”। এরপরে সুর আরও কিছুটা চড়িয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “শুনেছি ওই অভিনেত্রী নাকি তিনটে ফ্ল্যাট ভেঙে একটা বড় ফ্ল্যাট পেয়েছেন। কে সেই অভিনেত্রী? আমি তাঁকে দেখতে চাই”। আর যুব তৃণমূলনেতার বাড়িতে চাকরিপ্রার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড এবং ওএমআর শিট পাওয়া প্রসঙ্গে বিচারপতি প্রশ্ন, “পর্ষদে কারা বসে রয়েছে? এত দুর্নীতি হচ্ছে কিন্তু কেউ কিছু করছে না। আর আদালত কিছু করলেই তখন দোষ? আদালতকেই কাঠগোড়ায় তোলা হচ্ছে!”
যদিও হুগলির যুব তৃণমূলনেতা কুন্তলের বাড়ি থেকে ১৮৯টি ওএমআর সিট পাওয়ার ঘটনায় পর্ষদের দায় মেনে নিতে চাননি, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের বর্তমান সভাপতি গৌতম পাল। বরং ঘুরিয়ে ধৃত তৃণমূল যুবনেতার ঘাড়ে দোষ ঠেলে তিনি দাবি করেছেন, “পরীক্ষাপদ্ধতিকে স্বচ্ছ্ব রাখতে, এবার দুটো করে ওএমার সিট দেওয়া হয়েছিল। এরপরেও দু একটা এরকম কাগজ অন্য কোথাও পাওয়া গেলে, প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ তার দায় নেবে না। কারণ সংসদের কাছে মূল ওএমআর শিট সংরক্ষিত রয়েছে”।
যদিও দিনের শেষে নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত কোন এক নাম না-জানা অভিনেত্রীকে নিয়েই, আদালত চত্ত্বর এদিন সবচেয়ে বেশি সরগরম ছিল।
