শীতলপাটি বাংলার সুপ্রাচীন এক কুটিরশিল্প। একসময় বিশ্বজুড়ে ছিল এর খ্যাতি। এটি একধরনের মেঝেতে পাতার আসন বা গালিচা। মুক্তা বা পাটি বেদ বা মস্তক নামক গুল্মজাতীয় উদ্ভিদের ছাল থেকে তৈরি হয়।
শীতলপাটি নামের মধ্যেই রয়েছে এর উপকারিতা। গ্রীষ্মের হাঁসফাঁস করা সময়ে শরীরে ঠান্ডার পরশ এনে দেয় এই শীতলপাটি। যে কারণে গরমকালে বাংলার বিশেষত গ্রামাঞ্চলের বাড়িতে বিছানার চাদরের উপর এই পাটি বিছিয়ে রাখা হয়।
পাশাপাশি, প্রতিবেশী বাংলাদেশেও এই শীতলপাটির ব্যবহার আর উৎপাদন, দুটোই হয় প্রচুর। বর্তমানে কোচবিহারের ঘুঘুমারি সংলগ্ন ধলুয়াবাড়ির শীতলপাটি, বিশ্বের বাজারে সুনাম অর্জন করেছে। এখানকার প্রায় ৯০% পরিবার এই শীতলপাটি তৈরির পেশায় যুক্ত। কলকাতা ছাড়াও দিল্লি মুম্বাই এমনকি বিদেশেও, প্রতিদিনই পাড়ি দিচ্ছে কোচবিহারের এই শীতলপাটি। অবশ্য শুধু বিশ্রাম বা ঘুমানোর জন্য নয়। সেইসঙ্গে বেতের পাটি দিয়ে ব্যাগ, জুতো, ফাইল, টুপি সহ ঘরসাজানোর সামগ্রীও তৈরি হয়। কোচবিহার জেলার কোচবিহার ১ ও ২ নম্বর ব্লক, তুফানগঞ্জ ১ ও ২ মাথা ভাঙ্গার কিছু অংশ ও দিনহাটা ২ নম্বর ব্লকে হাজার হাজার মানুষ এই শীতলপাটি তৈরির কাজে যুক্ত। আর গোটা জেলার ৩০ হাজারেরও বেশি শিল্পী এই শিল্পের ওপর ভরসা করেন, সারাবছরের গ্রাসাচ্ছদনের জন্য।
ধলুয়াবাড়িতে গেলে সকাল থেকেই দেখা যায় সেই কর্মব্যস্ততা। এখানকার মানুষদের সারাদিনটাই কেটে যায় শীতলপাটি তৈরি করতে। ৮৫ বছরের এমনই এক শীতলপাটি তৈরীর কারিগর, কুসুমবালা দত্ত বলছিলেন “শীতলপাটি আমার জীবন জীবিকা।” আরেক শিল্পী শুভ নন্দীর মন্তব্য, শীতলপাটি শিল্পের জন্য আমরা গর্বিত।
মূলত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারাই পাটি ও পাটি থেকে উৎপাদিত সামগ্রী কিনে নিয়ে যায়। মাঝে মধ্যে পানিশালা হাটেও বিক্রি করা হয় এই সামগ্রী। একটি শীতল পাটি ১২০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি হয় । তা দিয়ে সংসার চলে কোন রকমে। সরকারি সাহায্য পাওয়া গেলে এই শিল্পকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর