স্বামী

ব্যুরো নিউজ, ১২ জানুয়ারি: আধুনিক শিল্পায়নে স্বামীজিও ছিলেন পথিকৃৎ

১৮৯৩ সালে জাপানের ইয়োকোহামা থেকে ক্যানাডার ভ্যাঙ্কুভার যাওয়ার পথে জাহাজে পার্সি শিল্পপতি জামশেদজি টাটার সঙ্গে জাহাজে বসেই আধুনিক ভারতের শিল্পায়নের রূপরেখা তৈরি হয়েছিলো। সেদিন জামশেদজির সঙ্গে ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। স্বামীজি যাচ্ছিলেন শিকাগো ধর্ম সম্মেলনে যোগ দিতে। জামশেদজি বানিজ্যের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। জাপানে দেশলাইয়ের কারখানা দেখে স্বামীজি ভারতে জাপান থেকে দেশলাই আমদানি না করে এদেশে কারখানা তিনি কেনই গড়ছেন না জিজ্ঞাশ্যা করেন। কারণ স্বদেশে কারখানা গড়লে মুনাফা বেশি। কর্মসংস্থানও হবে দেশীয় যুবকদের ও।

কে ছিলেন বিবেকানন্দ?

বয়সে বছর ২৪ এর ছোটো বিবেকানন্দের থেকে সেই কথা শুনে প্রভাবিত হন জামশেদজি। ব্রিটিশ শাসনে কিভাবে ভারতবাসী অত্যাচারিত হচ্ছে ও দুবেলা অন্ন জোটাতে পারছে না তাঁর ব্যাখ্যা দেন। তখনই জামশেদজি ভারতে ইস্পাত কারখানা গড়ার কথা জানান। স্বামীজি তাঁকে বোঝান ইস্পাত উৎপাদনে পশ্চিমের প্রযুক্তিকে ব্যাবহার করার জন্য। প্রভাবিত হন জামশেদজি। তাঁর মনে পরে ইতিপূর্বেই ইংল্যান্ডে গিয়েই আশ্বাস পেয়েছিলেন যে তাঁদের প্রজুক্তি নিয়ে ইস্পাত উৎপাদন শুরু করলে তা কিনে নেবে ব্রিটেন। জামশেদজি বুঝতে পারেন, ভারতে লৌহ- ইস্পাত কারখানা গড়তে পারলে তার মুনাফার পাশাপাশি ভারতের মানুষের জন্য অনেক কাজ করা যাবে।

ইতিমধ্যেই শিকাগো ধর্ম সম্মেলনে বন্তব্য রেখে বিশ্ববাসীর কাছে তিনি পরিচিতি পেয়েছেন। দেশে ফিরেই তিনি সংবর্ধনা পেয়েছিলেন শহর জুড়ে। সেই সাফল্যে খুশি জামশেদজি। জাহাজে দুজনের কথোপকথন স্মরন করে শিক্ষা ও গবেষণার জন্য তিনি কিছু করতে চান বলে ১৮৯৮ সালে ২৩ নভেম্বর স্বামীজিকে চিঠি লেখেন। জাহাজের ডেকের আলোচনা স্মরন করিয়ে জামশেদজি ভারতীয়দের বিজ্ঞান শেখার জন্য প্রচারপত্র লিখে দেওয়ার অনুরধ করেন। কারণ জামশেদজি দেশে বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণার জন্য একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কথা ভেবেছিলেন।

ঠিক এই সময়ে রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়ে যাওয়ায় স্বামীজি নিজে সময় দিতে না পারলেও জামশেদজির কাজে পাঠিয়ে দেন তাঁর শিষ্যা ভগিনী নিবেদিতাকে। নিবেদিতার সাথে আলোচনার পর বিজ্ঞান শিক্ষার পরিকল্পনা তৈরি হয়। তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড কার্জন জামশেদজির সেই প্রস্তাব বাতিল করেন। তবে গোপনে সেই পরিকল্পনা অনুসারে কাজ করতে থাকেন জামশেদজি। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে বিবেকানন্দের মৃত্যুর ২ বছর পরে প্রয়াত হন জামশেদজি। কিন্তু তাঁর পরবর্তী প্রজন্ম জাহাজের সেই আলোচনা স্মরনে রেখে ইস্পাত শিল্প তৈরি করেন। টাটায় তৈরি হয় ১৯০৭ সালে লৌহ- ইস্পাত শিল্প কারখানা। আর ১৯০৯ সালে বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণার জন্য প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে যা আজ দেশের গর্ব। গড়ে উঠেছিলো টাটা ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সাইন্স ও টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ- এর মতো গবেষণা ব্যাবস্থা।

স্বামী বিবেকানন্দ বুঝেছিলেন, শুধু কৃষি নিয়ে ভারতের বেহাল অবস্থা দূর হবে না। কৃষির পাশাপাশি চাই শিল্প। সেই শিল্পায়নের পদ্ধতি শিখতে হবে পাশ্চাত্য দেশ থেকে। তিনি চেয়েছিলেন মিশনারিরা ধর্মশিক্ষা না দিয়ে শিল্পায়নের শিক্ষা দিক। তাঁর পরিকল্পনা ছিল প্রতিটি গ্রামে মঠ গড়ে সেখানে সুশিক্ষিত সাধু মহান্ত রেখে কর্মমুখি বিজ্ঞান ও শিল্প সম্বন্ধে পাঠ দেওয়া। বিশেষ বিশেষ শিল্প ও তাঁর উৎপাদন শেখাতে সেই বিষয়ে বিশেসজ্ঞ সন্ন্যাসীদের এনে মিশন চালানোর কথা ভেবেছিলেন। তবে স্বামীজির লক্ষ্য ছিল বৃহৎ শিল্প গঠনের দিকে। দ্বিতীয়বার মার্কিন সফরে গিয়ে তিনি আধুনিক যন্ত্রে উৎপাদন সম্বন্ধে খবর নেন। ভারতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কুল স্থাপনেরও উদ্দেশ্য ছিল স্বামীজির। স্বামীজি বুঝতে পারেন দেশের মানুষের একটা ছুঁচ তৈরির কৌশল জানা নেই। চলছে শুধু ব্রিটিশের সমালোচনা। ভারতীয়দের জীবন- জীবিকা ঠিক রাখতে সেই সমালোচনা বন্ধ করে ব্রিটিশদের থেকে যন্ত্র শিল্পে উৎপাদন ও বাণিজ্য কৌশল শেখা জরুরী। দেশের খনি ও খনিজ সম্পদ ও সেখান থেকে শিল্প তৈরির কথাও ভেবেছিলেন স্বামীজি। দেশের বিভিন্ন জায়গায় সেই কারখানা গড়ে ওঠায় নানা জায়গায় জনবসতি গড়ে উঠেছিলো। ইভিএম নিউজ

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর