ব্যুরো নিউজ, ১১ জুলাই : বিবাহ বিচ্ছেদ হলে মহিলাদের খোরপোশ নেওয়ার অধিকার আছে হিন্দুদের। এবার সেই খোরপোশ এর দাবি জানাতে পারেন মুসলিম মহিলারাও। বিবাহ বিচ্ছিন্ন মুসলিম মহিলারাও ফৌজদারী কার্যবিধির ১২৫ ধারায় খোরপোশ দাবি জানাতে পারেন বলে ঐতিহাসিক রায় দিল দেশের শীর্ষ আদালত। বুধবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিভি নাগরত্ন এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসি এই ঐতিহাসিক রায় দিতে গিয়ে স্পষ্ট জানিয়েছেন ১২৫ ধারায় সব মহিলার প্রতি সমান ভাবে প্রযোজ্য এবং যেকোনো ধর্মের বিবাহিত মহিলাই এই আইনে ফোর পোষের দাবি জানাতে পারেন। এছাড়া উপযুক্ত অর্থ হাতে থাকলে কোন ব্যক্তি তাঁর স্ত্রী সন্তান বাবা-মায়ের ভরণ পোষণের দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। ১২৫ ধারায় এটি স্পষ্ট বলা হয়েছে যে খোরপোশ দয়া দাক্ষিণ্য নয় সকল বিবাহিত মহিলার মৌলিক অধিকার।
উপনির্বাচনে রায়গঞ্জে নজিরবিহীন ঘটনা!
দেশের শীর্ষ আদালতের এই ঐতিহাসিক রায়ে উঠে এলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
শরীয়তি আইন অনুযায়ী বিবাহ বিচ্ছিন্ন মহিলার খোরপোশ দেওয়ার কোন বাধ্যবাধকতা ছিল না। পুরুষ শাসিত ওই সমাজে তিন তালাকের পর তার প্রাক্তন স্ত্রীকে কতটা দেওয়া হবে এবং কতদিন ধরে দেওয়া হবে তা নির্ভর করত তার প্রাক্তন স্বামীর ইচ্ছার ওপর। সর্বোপরি সবটাই নির্ভর করত তাদের সমাজের মৌলবীদের ইচ্ছার ওপর।সেখানে দাঁড়িয়ে প্রতিটি বিবাহ বিচ্ছিন্ন মুসলিম মহিলারা অসহায় অবস্থায় পড়তেন।
এদিনের রায় ঘোষিত হল মূলত মোঃ আব্দুল সামাদ নামে এক ব্যক্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে। প্রথমে নিম্ন আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলাটি ওঠায় বিবাহ বিচ্ছিন্ন স্ত্রী কে মাসে ২০ হাজার টাকা খরপোষ দিতে হবে বলে রায় দেয়। মাসাদ ঐ রায়ের বিরুদ্ধে তেলেঙ্গানা হাইকোর্টে আবেদন করেন। সেখানে ওই রায় বহাল রাখা হয় তবে খোরপোশ এর পরিমাণ কমে হয় ১০ হাজার টাকা। এরপর সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন মাসাদ। সুপ্রিম কোর্টে মাসাদের আইনজীবী প্রশ্ন তোলেন মাসাদের প্রাক্তন স্ত্রী কেন মুসলিম মহিলা আইনের দ্বারস্থ হননি। এই মামলার সাওয়াল জবাবে আশির দশকের শাহবানু মামলার যোগাযোগের কথা উঠে আসে। ১৯৮৫ সালে ওই মামলাতেও সুপ্রিমকোর্ট বলেছিল ১২৫ ধারা সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। কিন্তু ১৯৮৬ সালের মুসলিম (মহিলা বিচ্ছেদ সংক্রান্ত অধিকারের সুরক্ষা) আইন ওই রায়ের গুরুত্ব কার্যত কিছুটা কমিয়ে দেয়। ওই আইনে বলা হয়েছে মুসলিম মহিলারা ইদ্দত পর্বের মধ্যেই অর্থাৎ বিবাহ বিচ্ছেদের ৯০ দিন কেবল খোরপোশ এর দাবি জানাতে পারবেন। ২০১০ সালে সুপ্রিম কোর্ট ওই আইনের সাংবিধানিক বৈধতা মেনে নেয়। তবে এও বলা হয়েছিল যেবিবাহ বিচ্ছিন্ন মুসলিম মহিলা যতদিন পুনর্বিবাহ না করছেন বা আর্থিকভাবে সাবলম্বী না হচ্ছেন ততদিন পর্যন্ত প্রাক্তন স্বামীকে তার খোরপোশ দিতে হবে। এদিনের এই রায় সুপ্রিম কোর্ট ১২৫ ধারাকে আবারও সার্বজনীনভাবে পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করল।
গণপিটুনি নিয়ে মুখ খুললেন মদন,’সর্ষের মধ্যে ভূত, দল থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে’
এদিন বিচারপতিরা ১২৫ ধারাকে মান্যতা দিয়ে মুসলিম বিবাহিত মহিলাদের সুরক্ষা ও অধিকার কে এক প্রকার স্বীকৃতি দিলেন। পরিবারের জন্য গৃহবধূদের আত্মত্যাগ ও সংসারে তাদের অপরিহার্য ভূমিকা পালনের কথা উল্লেখ করেন। পাশাপাশি বিচারপতি বিভি নাগরত্ন এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসি এও উল্লেখ করেন যে স্ত্রীর প্রতি স্বামীদের আরো বেশি যত্নবান হওয়ার প্রয়োজন আছে । সংসারে স্ত্রী যাতে আর্থিক ভাবে অবহেলিত না হয় তার উপায় হিসেবে যৌথ ব্যাংক একাউন্ট এবং এটিএম কার্ডের ওপর জোর দেন তারা। সংসারে গৃহবধূদের আর্থিক ক্ষমতায়নের ওপর আদালতের বিশেষ পর্যবেক্ষণ লক্ষ্য করা যায়।