ব্যুরো নিউজ ২২ মে : সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে নদিয়ার রানাঘাটের অস্মিকা দাসের নাম এখন দেশের বহু মানুষের কাছে পরিচিত। বিরল রোগে আক্রান্ত এই এক বছর বয়সী শিশুকন্যাকে বাঁচাতে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, সকলেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। অবশেষে, সেই বহু প্রতীক্ষিত ১৬ কোটি টাকা দামের জীবনদায়ী ইঞ্জেকশন পেতে চলেছে রানাঘাটের শুভঙ্কর দাসের ছোট্ট মেয়ে অস্মিকা।
অস্মিকার রোগ ও চিকিৎসার ব্যয়
অস্মিকার ছোট্ট শরীরে বাসা বেঁধেছে ভয়ঙ্কর বিরল রোগ ‘স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফি টাইপ-১’ (SMA Type-1)। এই রোগে আক্রান্ত শিশুদের মাংসপেশীগুলো ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। দু’বছর বয়স হওয়ার আগেই একটি বিশেষ ইঞ্জেকশন দিতে হয়, যার দাম প্রায় ১৬ কোটি টাকা। স্বাভাবিকভাবেই, নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে এই বিপুল অর্থ জোগাড় করা অসম্ভব ছিল। তাই, ক্রাউড ফান্ডিংই তাদের একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অস্মিকার বাবা শুভঙ্কর দাস একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন, কিন্তু মেয়ের চিকিৎসার জন্য ছোটাছুটি করার কারণে সেই চাকরিও চলে যায়।
সহায়তার হাত বাড়ালেন বহু মানুষ
ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে এই ছোট্ট মেয়েটির অসুস্থতার খবর ছড়িয়ে পড়তেই বহু সমাজসেবী, শিল্পী এবং সাধারণ মানুষ এই পরিবারের পাশে দাঁড়ান। অস্মিকার চিকিৎসার জন্য মোট প্রায় ১৭ কোটি টাকার প্রয়োজন ছিল। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী থেকে শুরু করে সঙ্গীতশিল্পী কৈলাশ খের, ইমন চক্রবর্তী, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, সায়ক চক্রবর্তী-সহ আরও অনেকেই অস্মিকার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
প্রথম কিস্তির ৯ কোটি টাকা সংগ্রহ সম্পূর্ণ
চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ১৬ কোটি টাকার ইঞ্জেকশনটি প্রথম কিস্তিতে ৯ কোটি টাকা জমা দিলেই পাওয়া যাবে। দীর্ঘদিন ধরে এই টাকা জমানোর কাজ চলছিল। অবশেষে সেই ৯ কোটি টাকা সংগ্রহের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়েছে। গত সোমবার (১৯ মে, ২০২৫) ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়িতে মাতৃ সেনা চ্যারিটেবল ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ৬০ লক্ষ টাকার একটি চেক অস্মিকার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তাদের হাতে চেক তুলে দেন মাতৃ সেনার সভানেত্রী সোমা ঠাকুর এবং অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর।
ইঞ্জেকশন পাওয়ার অপেক্ষা
অস্মিকার বাবা শুভঙ্কর দাস কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ৬০ লক্ষ টাকা পাওয়ায় তাদের ৯ কোটি টাকা সম্পূর্ণ হল, যা প্রথম কিস্তিতে ইঞ্জেকশন পাওয়ার জন্য যথেষ্ট। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে, সমস্ত কাগজপত্র জমা দেওয়ার কাজ শেষ করে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তার মেয়ে এই জীবনদায়ী ইঞ্জেকশনটি পেয়ে যাবে। যারা যারা অস্মিকার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন, তাদের সকলকে তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এই ঘটনা প্রমাণ করে দিল, মানবিকতা এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টা কতটা শক্তিশালী হতে পারে।