ব্যুরো নিউজ ৭ জুন : পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা প্রথম সঠিকভাবে নিরূপণ করেছিলেন একজন বাঙালি গণিতবিদ, রাধানাথ শিকদার। তাঁর এই অবদান সত্যিই বিস্ময়কর, বিশেষত যখন আধুনিক যন্ত্রপাতির অনুপস্থিতিতে কেবল ত্রিকোণমিতির জটিল অঙ্ক কষেই তিনি এই অসাধারণ কাজটি সম্পন্ন করেছিলেন।
রাধানাথ শিকদারের অবদান
রাধানাথ শিকদারের জন্ম ১৮১৩ সালে, তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের কলকাতায়। তাঁর মেধার প্রমাণ পাওয়া যায় অল্প বয়সেই। তিনি কলকাতার হিন্দু কলেজের (বর্তমানে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন এবং নিউটনের সূত্র বুঝতে পারার মতো বিরল প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। মাত্র ১৯ বছর বয়সে, ১৮৩১ সালে, তিনি গ্রেট ট্রিগনোমেট্রিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ায় ‘কম্পিউটার’ হিসেবে যোগদান করেন। সে সময় ‘কম্পিউটার’ বলতে এমন ব্যক্তিদের বোঝানো হতো যারা হাতে জটিল গাণিতিক হিসেব করতেন। ৪০ টাকা মাসিক বেতনে তিনি যে অমূল্য কাজটি করেছিলেন, তা আজও স্মরণীয়।
১৮৫২ সালের দিকে, রাধানাথ তাঁর অসাধারণ গণনা শক্তির মাধ্যমে হিসেব করে জানান যে একটি পর্বতের উচ্চতা ২৯,০০০ ফুট। এই হিসেবকে “গোল সংখ্যা” বলে মানুষ যাতে অবিশ্বাস না করে, তাই একজন ব্রিটিশ অফিসার এর সাথে আরও ২ ফুট যোগ করে দেন, ফলে উচ্চতা দাঁড়ায় ২৯,০০২ ফুট। এই পরিমাপই ১৮৫৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে, ১৯৫৫ সালে আরেকটি ভারতীয় সমীক্ষা এই পরিমাপকে আরও নিশ্চিত করে ২৯,০২৯ ফুট বা ৮,৮৪৮ মিটার।
রাজ্যগুলির স্বাধীনতা বজায়: সুপ্রিম কোর্টের গুরুত্বপূর্ণ রায়
কেন তাঁকে আজও মনে রাখা জরুরি?
রাধানাথ শিকদারের মতো অসাধারণ প্রতিভারা প্রায়শই ইতিহাসের পাতায় আড়ালে থেকে যান। কিন্তু তাঁর এই কৃতিত্ব ভারতীয়দের গাণিতিক জ্ঞান, বিজ্ঞানচর্চা এবং নির্ভীকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি কেবল একটি পর্বতের উচ্চতা নিরূপণ করেননি, বরং গোটা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছিলেন যে ভারতীয়রা গণিত ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কতটা সক্ষম। তাঁর এই অবদান ভারতের বৈজ্ঞানিক ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এটি আমাদের সবার জন্য গর্বের বিষয়। রাধানাথ শিকদারের মতো ব্যক্তিত্বদের স্মরণ করা উচিত, যাতে নতুন প্রজন্ম তাঁদের থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারে এবং দেশের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিতে নিজেদের অবদান রাখতে উৎসাহিত হয়।